Kohinur: দেশপ্রেম জাগাতে মোদি সরকারের রাজনীতি কোহিনূর ফেরত দাও, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক স্টাইলে মিশন ব্রিটিশ সরকার

0

Last Updated on May 15, 2023 8:12 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। আর নয়, এবার পাকাপাকিভাবে কোহিনুর ফিরিয়ে দিতে হবে ভারতকে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে এদেশ থেকে লুট হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক সামগ্রীর পুরোটাই ফেরত চাইবে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের কূটনীতিকরা এই লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে পরাজয়ের পর নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভাজপা। প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদের আবেগ উসকে দেয় নরেন্দ্র মোদির সরকার। আগেরবার সেনা বাহিনীকে নামানো হয়েছিল, এবার নামানো হলো কূটনৈতিক বাহিনীকে। বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোস্কিরা সর্বস্ব লুটপাট করে পলাতক। তাদের ফেরত আনতে পারল না যে সরকার তারা হাজার বছরের পুরনো শিল্প সামগ্রী ফিরিয়ে আনার জন্য কোমর বেঁধেছে।

নির্বাচনের আগে নতুন বোতলে সেই পুরনো মদ। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আবার সেই জাতীয়তাবাদের আবেগ উসকে দেওয়ার প্রচেষ্টা। রানীর মুকুটে লাগানো বিশ্বের বৃহত্তম হীরক খন্ড কোহিনুর ফেরত দেওয়ার জন্য এর আগেও বহুবার তদবির করেছে ভারত সরকার। তবে ব্রিটেনের বিভিন্ন মিউজিয়ামে সাজানো অন্য ভারতীয় শিল্প সামগ্রী নিয়ে এমন মাথা ব্যাথা সরকারের কখনো দেখা যায়নি। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক শিল্প-সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন জাদুঘরে। এর এক নম্বরে অবশ্যই কোহিনুর যা কোনও মিউজিয়াম নয়, রয়েছে রানীর রাজ মুকুটে। এই রাজ মুকুট পরে সদ্যপ্রয়াত রাণী এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। কিন্তু ভারত বারবার এই হীরক খন্ডটি দাবি তোলায় এলিজাবেথ তার জীবিতকালে খুব বেশি বার এই রাজ মুকুট পরে প্রকাশ্যে বেরোননি। এমনকি বিতর্ক এড়াতে সাম্প্রতিক চার্লসের রাজ্যাভিষেকে রানী ক্যামেলিয়াকে এই মুকুট পরানো হয়নি। দিল্লিতে মুঘল দরবারের ময়ূর সিংহাসনে বিভিন্ন বহুমূল্য রত্নের অন্যতম ছিল কোহিনুর। নাদির শাহর দিল্লি আক্রমনে এই সিংহাসন লুটপাট হয়ে যায়। এরপর এই বহুমূল্য হীরক খন্ডটি হাত বদল হতে হতে শিখ সাম্রাজ্যের রাজকোষে ঠাঁই পায়।

১১ বছরের মহারাজা দিলীপ সিং আত্মীয় গুলাব সিংএর প্ররোচনায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তুষ্ট করতে এই রত্নটি রানী ভিক্টোরিয়াকে উপহার হিসেবে দেন। সেই থেকে কোহিনুর ব্রিটেনের দখলে। কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের সচিব গোবিন্দ মোহন জানান, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ইতিমধ্যেই শিল্প সামগ্রীর তালিকা প্রস্তুত করতে শুরু করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে লুট বা চুরি যাওয়া সমস্ত শিল্প ফেরত নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর। তিনি এই কাজকে টপ প্রায়োরিটি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অক্সফোর্ড অ্যাসমোলান মিউজিয়ামকে ইতিমধ্যে দাক্ষিণাত্য থেকে নিয়ে যাওয়া একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়ে গেছে।

ব্রিটেনের বিভিন্ন মিউজিয়ামে সাজিয়ে রাখা কয়েকশো শিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেলে পাথরের তৈরি করা খাজুরাহ থেকে লুট হয়ে যাওয়া হরিহরের মূর্তি, যার শিল্প নৈপুণ্য আজও শিল্পী মহলে বিপুল ভাবে সমাদৃত। ২.৩ মিটার লম্বা ও ৫০০ কেজি ওজনের তামার তৈরি বুদ্ধ মূর্তি বিহারের সুলতানগঞ্জ থেকে উধাও হয়ে এখন সগৌরবে ব্রিটিশ মিউজিয়ামএ সজ্জিত। মূর্তি নির্মাণের ধরন ঐতিহাসিকদের মতে গুপ্ত আমলের। শুধু টিপু সুলতানের তরবারি নয়, তার আঙ্গুলে থাকা আংটি, সুগন্ধি এবং একটি কাঠের তৈরি বাঘ এখন ওদের জিম্মায়। টিপু তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তার মৃত্যুর পর ইংরেজরা তার একান্ত ব্যাক্তিগত সামগ্রীর দখল নেয়। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের কাঁচের শোকেসে সাজানো রয়েছে অতি উজ্জ্বল রঙের নকশা করা শাজাহানের সূরা পাত্র। ওই একই জাদুঘরে রয়েছে শিখ সাম্রাজ্যের প্রথম মহারাজা, রণজিৎ সিংয়ের সোনার সিংহাসন। এর আগে ২০২১ সালে আমেরিকা সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নরেন্দ্র মোদির হাতে ভারত থেকে চোরা পথে আসা ১৫৭টি শিল্প সামগ্রী তুলে দিয়ে সৌহার্দের বার্তা দিয়েছিলেন।