Last Updated on May 17, 2021 10:34 PM by Khabar365Din
খবর ৩৬৫ দিন টিম
৩৬৫ দিন। এলেন। দেখলেন এবং জয় করলেন। আজ সকাল থেকে নিজাম প্যালেসে মমতার প্রায় ৬ ঘন্টা বসে থাকা এভাবেই ব্যাখ্যা করা সহজ।
মমতাকে ফাঁদে ফেলতে গিয়ে ফের একবার মমতার চালে মাত হতে হলেও ভাজপা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে। ঠিক যেভাবে তাকে 24 ঘন্টার জন্য নির্বাচনী প্রচার থেকে নিষিদ্ধ করার পরে কোন নির্বাচনী জনসভায় না গিয়েও বাংলা সহ গোটা দেশের সংবাদ মাধ্যমের যাবতীয় নিজের উপরে রেখেছিলেন মৌনব্রত অবলম্বনকারী মমতা, ঠিক সেভাবেই আজ তার মন্ত্রিসভার দুই ক্যাবিনেট সদস্য এবং এক বিধায়ক সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন কার্যত একের পর এক মাস্টার স্ট্রোক দিয়ে গেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। একদিকে যেমন নিজাম প্যালেস এগিয়ে তার দলের বিধায়কদের অনৈতিকভাবে গ্রেফতারের বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে গোটা দেশের ভাজপা বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এলেন, পাশাপাশি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে ভয়ঙ্কর করণা পরিস্থিতিতে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন থেকে বৈঠক করলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের সঙ্গে।এদিন ভাজপা অথবা সিবিআই কারো পক্ষেই সারাদিন ধরে মমতার কৌশল অনুধাবন করার কার্যত অসম্ভব ছিল। কখনো তিনি রাজ্যের আইন মন্ত্রি মলয় ঘটক এবং দলের তরফে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত থাকা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিন্দ্য রাউত এবং নীলাদ্রি ভট্টাচার্যদের সঙ্গে আইনি প্যাঁচ নিয়ে আলোচনা করেছেন আবার কখনও ফোনে মুখ্য সচিবের সঙ্গে এবং রাজ্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশ দিয়েছেন করোনা মোকাবিলায় কি কি করা প্রয়োজন। এদিনের ক্যাবিনেট বৈঠক থেকে প্রথম যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলো তৃণমূলের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন সরকারে এসেই তৈরি করবেন বিধান পরিষদ, আজ রাজ্য মন্ত্রিসভার কেবিনেট বৈঠকে সর্বজন স্বীকৃত ভাবে বিধান পরিষদের সিদ্ধান্ত মঞ্জুর হয়েছে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময়েই মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিধান পরিষদ গঠনের। জানিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোটে যাঁরা লড়াই করার সুযোগ পেলেন না, আগামীদিনে রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠন করে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। মমতা জানিয়েছিলেন, অমিত মিত্র পূর্ণেন্দু বসু-সহ কয়েকজনকে এ বার প্রার্থী করা যায়নি। পূর্ণেন্দু দলের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। অমিত মিত্রেরও শরীর ভাল নয়। পাশপাশি, এ বার তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের অনেকেই প্রার্থী হননি এবং উত্তরবঙ্গের তৃণমূলের বেশকিছু নেতা ভোটে পরাজিত হয়েছেন, সেই জন্য বিধান পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে নতুন ভাবে উদ্যোগী হন মমতা। এর আগেও রাজ্যে বিধান পরিষদ ছিল। তবে ১৯৬৯ সালে বাংলায় বিধান পরিষদের বিলুপ্তি ঘটে। বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ ছাড়াও আরও যে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তার অন্যতম হল সরকারি নিয়োগ নীতি সংক্রান্ত প্রস্তাব। অর্থাৎ সরকারি বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কী নীতি মেনে চলা হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়ম তৈরি হবে। এর পাশাপাশি এদিন ভার্চুয়ালি তিনি উদ্বোধন করেন অক্সিজেন অন হুইলস পরিষেবার। শুধু তাই নয় রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলার প্রতিটি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের করোনা আক্রান্তরাও যাতে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার সুযোগ পান, তার জন্য স্যাটেলাইট চিকিৎসা ব্যবস্থার সূচনা করেন। এই ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে সঙ্গে যৌথভাবে প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে দেওয়া যাবে উন্নত মানের চিকিৎসা। এর পাশাপাশি দলের সংসদীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন মমতা। তাঁর নির্দেশেই বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল কুমার মণ্ডলের সাংসদ পদ খারিজ করার জন্য লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লিখলেন তৃণমূল সাংসদ তথা লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।