সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র জানাল সমলিঙ্গ বিবাহ অস্বাভাবিক

0

Last Updated on March 12, 2023 11:02 PM by Khabar365Din

বিবাহ একমাত্র নারী ও পুরুষে হতে পারে কেননা সেই বিবাহে সন্তানের জন্ম হয়

বিশ্ব এগোচ্ছে, ভারত পিছোচ্ছে

প্রসঙ্গত বিশ্বের অধিকাংশ দেশ সমলিঙ্গে বিবাহ মেনে নিয়ে আইন প্রণয়ন করেছে

২০১৮ তে সুপ্রিম কোর্টের রায় সমকামী সম্পর্ক আইনসিদ্ধ

৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি সংসার বলতে বোঝায় একজন পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বিবাহ এবং সেই বিবাহের ফলে উৎপন্ন সন্তান যে ভবিষ্যতে বংশবৃদ্ধি করবে। যে বিবাহে সন্তান উৎপাদনের কোন সম্ভাবনা থাকে না এবং বংশবিস্তার সম্ভব নয় – তাকে বিবাহ বলে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় সরকার। দুজন পুরুষ অথবা দুজন নারী বিবাহ করলে সন্তান উৎপন্ন হতে পারবেনা। সেই কারণে সমলিঙ্গে বিবাহের অনুমতি দেবে না ভারত সরকার। সুপ্রিম কোর্টে ঠিক এই ভাষাতেই সম্মলিঙ্গে বিবাহে আপত্তি জানিয়ে লিখিত হলফনামা জমা দিল ভাজপা শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হলফনামায় কেন্দ্র জানিয়েছে, অংশীদার হিসাবে একসঙ্গে থাকা এবং সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক, ভারতের প্রচলিত পরিবারের ধারণার পরিপন্থী।

কেন আপত্তি কেন্দ্রের

ভাজ পাসিত ও কেন্দ্রের মোদি সরকার প্রথম থেকেই প্রাচীন ভারতের প্রচলিত প্রথা গুলিকে বর্তমান যুগেও চালু রাখার পক্ষপাতী। তার মধ্যে পরিবার সমাজ অথবা প্রাচীন যুগে ভারতীয় সমাজে চালু থাকা বর্ণ বৈষম্যকেও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নীতি মেনে কখনো উৎপাটন করার চেষ্টা করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কারণে সমলিঙ্গে বিবাহ তো দূরের কথা বিশ্বজুড়ে যেখানে 14 ফেব্রুয়ারি প্রত্যেক বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে প্রেমিক-প্রেমিকারা উদযাপন করে সেই দিনে এ বছর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে গরুকে আলিঙ্গন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। অথচ গোটা পৃথিবী জুড়ে যেখানে সম লিঙ্গে বন্ধুত্ব এবং বিবাহ বা যৌন সম্পর্ককে বিভিন্ন দেশের সরকার স্বীকৃতি দিয়ে আসছে সেখানে পুরনো ধ্যান ধারণা আকড়ে থেকে নতুন প্রজন্মের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে নারাজ মোদি সরকার।

ঠিক সেই কারণে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে লিখেছে, ভারতীয়রা পরিবার বলকে বোঝে স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তান। স্বামী-স্ত্রী বলতে একজন জৈবিক পুরুষ এবং একজন জৈবিক মহিলাকেই বিবেচনা করা হয়। তাদের মধ্যে মিলনের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানকে, জৈবিক পুরুষ বাবা হিসাবে এবং জৈবিক মহিলাকে মা হিসাবে লালন-পালন করে। এর পাশাপাশি কেন্দ্র আরও বলেছে, সম লিঙ্গে বিবাহকে স্বীকৃতি দিলে কিছু আইনি জটিলতাও তৈরি হবে। বর্তমানে ভারতে ব্যক্তিগত এবং বিধিবদ্ধ আইনে, নিষিদ্ধ সম্পর্ক, বিয়ের শর্ত, আনুষ্ঠানিকতা এবং আচারের প্রয়োজনীয়তা, গার্হস্থ হিংসার মতো বিষয়ে যে আইন গুলি রয়েছে, সমলিঙ্গে বিবাহ আইনি স্বীকৃতি পেলে সেগুলির লঙ্ঘন হতে পারে। কারণ, বিয়ে শুধুমাত্র নারী-পুরুষের মধ্যে হয়, এমনটা ধরেই বিধানগুলি তৈরি করা হয়েছে। সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিকের নিজের ইচ্ছামতো মেলামেশার অধিকার আছে। কিন্তু, এই ধরনের সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে আইনি স্বীকৃতি দিতেই হবে এটা কোনও অধিকারের বিষয় নয়। ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের আওতাতেও এটা পড়ে না। বিবাহের ধারণা অনিবার্যভাবে বিপরীত লিঙ্গের দুই ব্যক্তির মধ্যে মিলনকে বোঝায়।
অথচ গতকালই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভিনগারত্না স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংবিধানের বিধানকে অক্ষুন্ন রেখেই তার ব্যাখ্যা সময় এবং সমাজের প্রেক্ষিতে বদলে যায়।

সমকামী সম্পর্কে স্বীকৃতি সুপ্রিম কোর্টের

২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই ঐতিহাসিক রায়দানের মাধ্যমে সমকামী সম্পর্ককে অপরাধমুক্ত বলে ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ব্রিটিশ আমলের বহু পুরোনো আইনকে প্রত্যাহার করে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার আওতায় দু’জনের পূর্ণ সম্মতিতে সমকাম সম্পর্ক অপরাধ নয়। সেই পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ছিলেন দেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ও। তবে সমকামী সম্পর্ক বৈধ হলেও সমকামী বিয়ে এখনও আইনি বৈধতা পায়নি ভারতে।

সংবিধানে যে ভারতীয় নাগরিকদের নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে বিয়ে করার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেই অধিকার এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের নাগরিকদেরও পাওয়া উচিত। এই দাবি করেই সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন হায়দরাবাদের সমকামী যুগল সুপ্রিয় চক্রবর্তী এবং অভয় ডাং। তবে শুধু তাঁরা একাই নন, দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে একাধিক সমকামী যুগল সমকামী বিবাহের স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ নির্দেশনা জারি করে যাতে বিভিন্ন হাই কোর্টে থাকা সমকামী বিবাহ সংক্রান্ত যাবতীয় পিটিশন মুলতুবি করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here