Last Updated on November 20, 2023 7:25 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। আদালতকক্ষে বিচারক কোনও মন্তব্য করলেই নেটমাধ্যম তাকে রায় বলে ধরে নিচ্ছে। আদতে তা হয়তো সওয়াল-জবাবের নতুন পথ খোলার মাধ্যম মাত্র। এই দু’য়ের মধ্যে যে তফাৎ আছে, তা বোঝার ক্ষমতা নেই নেটমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশের। অন্যদিকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন বিচারপতির এই সমস্ত অসম্পূর্ণ মন্তব্য বা পর্যবেক্ষণ অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে কিছু ব্যক্তি বা সংগঠন। তাই আদালত কক্ষে বসে যে কোন মন্তব্য করার আগে নিজেদের আত্মসম্বরন করতে হবে বিচারপতিদের। এভাবেই দেশের একশ্রেণীর বিচারপতি কিভাবে আদালত কক্ষে অযৌক্তিক মন্তব্য করে রাজনৈতিক ইস্যুতে মদত দিচ্ছেন এবং অন্যদিকে বিভিন্ন বিচারপতির মন্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
বিচারপতিদের মন্তব্য বাংলায় বিরোধীদের ইস্যু
কলকাতা হাইকোর্ট অথবা সুপ্রিম কোর্টের রায় নয় গত কয়েক বছরে বাংলায় ভাঁজ পায় এবং সিপিএমের মতো বিরোধীদল গুলির কাছে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দিষ্ট কয়েকজন বিচারপতির কয়েকজন বিচারপতির মামলা বহির্ভূত বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাশে বসে সংশ্লিষ্ট মামলা বহির্ভূত বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য বা আরও স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং তৃণমূলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মন্তব্য করার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেই তাদের কার্যত নির্বাচনী প্রচারে নামিয়ে দিয়েছে ভাজপা ও সিপিএম নেতারা।
যেখানে কখনো করোনা সম্পর্কিত মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, কে একটা ভাইপো আছে তার বাড়ি চার তলা। কোটি টাকার বাড়ি! কোথা থেকে আসে এত টাকা?
অথবা – কিছু দালাল, যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি আমি, যাঁরা প্রকাশ্যে বলেছেন কারও চাকরি যাবে না। অথবা আমি তদন্ত করলে অনেক ধেড়ে ইঁদুর বেরোবে ধরনের মন্তব্য করে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত রাজনৈতিক উস্কানি দেওয়া মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।
খুব একটা পিছিয়ে নেই কলকাতা হাইকোর্টের আর এক বিচারপতি অমৃতা সিনহা। যেমন সুপ্রিমকটে পর্যন্ত যেখানে দুর্গা পূজাকে সরকারি অনুদান দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত অনুমোদন পেয়েছে সেখানে সুপ্রিমকোর্টকে কার্যত অবজ্ঞা করে বিচারপতি অমৃতা সিনহা একটি মামলার শুনানিতে কোর্ট রুমে বসে মন্তব্য করেন, আমি অনেক মামলা শুনেছি, যেখানে মানুষ বেতন, পেনশন, চাকরি পাচ্ছেন না। আর পুজো কমিটিগুলিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে! স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত মন্তব্যের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলি সেই সমস্ত বিচারপতিদের ছবি অথবা ভিডিও সহ নির্বাচনী প্রচারেও ব্যবহার করছে। যা দেখার পরে কিছু বিচারপতি আবার নিজেদের ভগবান ভাবতেও শুরু করে দিয়েছেন।
শিক্ষা নিন বিচারপতিরা
ঠিক এই সমস্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ মন্তব্য যাতে বিচারপতিরা না করেন তার জন্য বিচারপতিদের অবিলম্বে প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, এটা সত্যি সোশ্যাল মিডিয়া একটি নতুন যুগের আগমন ঘটিয়েছে। যেখানে আমি দেখতে পাই, লোক জন মিথ্যা আর্টিকেল এবং ভুল তথ্য আমার নামে চালিয়ে দিচ্ছে। যে কথা আমি কখনও বলিইনি। কিন্তু যখন কোনও রায়ের ভুল ব্যাখ্যা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন রায়ের গুরুত্বকে খাটো করা হয়। এটা নিয়ে ভাবার দরকার আছে। সে জন্য মিডিয়া এবং নাগরিকদের সঙ্গে আদালতের যোগাযোগ রক্ষা প্রয়োজন।
পাশাপাশি ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় বিচার ব্যবস্থা এবং বিচারপতিদের যে দায়িত্ববোধ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে তা মনে করিয়ে দিয়ে দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় বিচারব্যবস্থা নির্বাচিত শাখা নয়। গণতন্ত্রের নির্বাচিত শাখার গুরুত্ব অনেক। আমি সেটাকে ছোট করছি না। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এক্সিকিউটিভ শাখাকে সংসদের কাছে জবাবিহি করতে হয়। আমি দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে এই ব্যবস্থাকে সম্মান করি। তবে এটাও বোঝা উচিত যে বিচারপতিদের ভূমিকা কী। আমরা নির্বাচিত নই। তবে এটা আমাদের দুর্বলতা নয় বরং শক্তি। আমরা সাংবিধানিক মূল্যবোধ মেনে চলি। তাই আমি মনে করি যে বিচারব্যবস্থায় সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারি।