পদ্মপালের কদর্য কুৎসা রুখতে ধনকরকে ব্লক মমতার, মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণ- ‘আমরা নির্বাচিত সরকার, এখন বন্ডেড লেবার’

0

Last Updated on January 31, 2022 10:56 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। কখনো রাত দুটোর সময় আবার কখনো বা ভোর পাঁচটা – মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে একের পর এক কুৎসা টুইট করে যেতেন বাংলার পদ্মপাল। সাংবিধানিক পদ মর্যাদার কথা বিবেচনা করে এতদিন প্রকাশ্যে কিছু না বললেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) কাছে বার চারেক চিঠি দিয়ে পদ্মপালের এই আচরণ বন্ধ করার পাশাপাশি বাংলা থেকে অপসারণের দাবি করেছিলেন মমতা। কিন্তু তাতেও সদর্থক কোনো ফল না হওয়ায় অবশেষে বাধ্য হয়ে নিজের ব্যক্তিগত টুইটার (Twitter) অ্যাকাউন্ট থেকে জগদীপ ধনকড়কে (Jagdeep Dhankhar) ব্লক করে দিলেন মমতা (Mamata Banerjee)।

আজ নবান্নে (Nabanna) মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আজকে বাধ্য হয়ে একটা কাজ করেছি। সরি টু সে। এর জন্য আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। উনি প্রতিদিন একটা করে টুইট করে অফিসারদের গালাগালি দিয়ে কখনো আমাকে গালাগালি দিয়ে বিভিন্নভাবে অ্যাকিউজ করে অ্যাবিউজ করে অসাংবিধানিক এবং অনৈতিক কথাবার্তা বলে আমাদের ইনস্ট্রাকশন দিতেন যে উনার অ্যাডভাইস মতো আমাদের চলতে হবে, অ্যাডভাইস নয় ইনস্ট্রাকশন মতো। তারমানে আমরা চাকর-বাকর আরকি! আমরা বন্ডেড লেবার! আমরা একটা ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট। ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট বিকেম বন্ডেড লেবার। আর একজন কাউন্সিলরের মতো ইলেক্টেড না হয়ে মনোনীত একজন হওয়া সত্বেও তিনি হয়ে গেছেন এখন সবার মাথার উপরে সুপার পাহারাদার। তাই আমি বাধ্য হয়েছি আজ ওনাকে আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করে দিতে। কারণ প্রতিদিন আমার ইরিটেশন হতো উনার টুইট গুলো দেখে। যে কথাগুলো বলা উচিত নয় এমন এমন কথা বলতেন মানবিক দিক থেকেও অমানবিক। এর জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার কিছু করার নেই।

রাজ্যপাল সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন

মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) বলেন, আমি অনেকদিন প্রধানমন্ত্রীকে (Prime Minister) চিঠি লিখেছি। চার চারবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। আমি এখনো জানতে চাইব প্রধানমন্ত্রীকে চারটি চিঠি দেওয়ার পরেও আপনি কেন উনাকে এখান থেকে সরিয়ে দেন নি? উনি যখন এখানে এসেছিলেন নিয়ম ছিল সারকারিয়া কমিশন এর যে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আলোচনা তো করেই নি, তা সত্ত্বেও আমরা অভিনন্দন জানিয়ে ছিলাম ভদ্রতার খাতিরে। পরে অনেক সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু দেড় বছর ধরে উনি প্রত্যেকটা কাজে আমাদের আটকাচ্ছেন। কিন্তু উনি শুনছেন না। প্রতিদিন অফিসারদের ডেকে পাঠাচ্ছেন যেটা উনি পারেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে পারেন। সরাসরি যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন আর ভয় দেখাচ্ছেন সবাইকে। সবাইকে থ্রেট করছেন। মানে আদালত থেকে শুরু করে, আমি শুনেছি, ইনকাম ট্যাক্স, ইডি থেকে শুরু করে সিবিআই – কাস্টমস থেকে শুরু করে কলকাতার সিপি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার থেকে ডিজি, ডিজি থেকে চিফ সেক্রেটারি, চিফ সেক্রেটারি থেকে হোম সেক্রেটারি, হোম সেক্রেটারি থেকে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি – সকলকেই ভয় দেখাচ্ছেন, থ্রেট করছেন। ডিএম, এস পি সবাইকেই। কেন উনি নিজেকে কি ভাবেন? শুনুন বাংলার মানুষ মাথা নত করে চলে না। আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার বলেছি, আমি নিজে গিয়ে কথা বলে এসেছি – এটা বলবেন না আমি জানাইনি। আপনাদের মনে আছে জ্যোতিবাবুর সময়ে ধরমবীর যখন ছিলেন, দু-একটা ফাইল ক্লিয়ার করেন নি বলে জ্যোতিবাবুরা তাঁকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমরা কিন্তু গত এক-দেড় বছর ধরে সহ্য করে যাচ্ছি।

সাংবিধানিক পদের অপব্যবহার

ভারতের সংবিধানে গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ( Federal Structure)কোন রাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে জগদীপ ধনকড় তা লংঘন করে চলেছেন বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, এখনো আমাদের হিউম্যান রাইটস কমিশন এর চেয়ারম্যান হাইকোর্টের চিফ জাস্টিস এর মত লোক, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি – তার ফাইল ক্লিয়ার করেন নি। হিউম্যান রাইটস এর সদস্য আরেক বিচারপতি তার ফাইল ক্লিয়ার করেননি। লোকায়ুক্ত কমিটির চেয়ারম্যান তার ফাইল ক্লিয়ার করেননি। রাইট টু ইনফরমেশন এর মেম্বার তাদের ফাইল ক্লিয়ার করেননি। প্রত্যেকটা ফাইল ফেলে রেখে দিয়েছেন। হাওড়া বালি, হাওড়া এবং বালির মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না শুধু উনার জন্য। ফাইল ক্লিয়ার করেননি বলে। উনি ঠিক করবেন যে কোনটা কার সাথে থাকবে না থাকবে? এটাতো পলিটিক্যাল পার্টির কাজ। সরকারের কাজ। পলিসি ডিসিশন কখনো উনার ডিসিশন হতে পারে না। উনি আসবেন বিধানসভা উদ্বোধন করবেন। আম্বেদকরের গলায় মালা দেবেন ছবি তুলবেন দু-একটা কথা বলবেন, রাজ্য সরকারের কাছে যে বিল যাবে ওনার কাছে, একবার পাঠালেই যদি কিছু ক্লারিফিকেশন প্রয়োজন হয় চেয়ে পাঠাবেন। পরেরবার গেলে সেগুলো ছেড়ে দেবেন। এইতো নিয়ম। সংবিধান তো আমরাও পড়ে আসছি ক্লাস এইট নাইন থেকে। প্রত্যেকটা বিল আটকে দিয়েছেন। আগামী দিন সিদ্ধান্ত আমি নেব না। সিদ্ধান্ত মানুষ নেবেন। সিদ্ধান্ত বিধানসভা নেবে। সিদ্ধান্ত সংসদ নেবে। এমনকি মা ক্যান্টিনে ভাত আর ডিম কোত্থেকে আসছে তার কৈফিয়ৎ উনাকে দিতে হবে! তাহলে হাজার নিজের তাজ বেঙ্গল থেকে রোজ খাবার আনেন তার কৈফিয়ৎ কি আমাদের দেন? বের করব আমি? এনাফ ইজ এনাফ।

রাজ্যপালের প্রশ্রয়ে ভাজপার গুন্ডামি

রাজ্যপালের প্রত্যক্ষ মদতে বাংলায় ভাজপা গুন্ডামি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, উনার প্রশ্রয় বিজেপির (BJP) কিছু গুন্ডা প্রতিদিন লোক মারছে। পরশুদিন নোয়াপাড়ায় আপনারা জানেন আমাদের গোপাল দাস খুন হয়েছে। তার আগে একটা বোমা বিস্ফোরণে দুজন মারা গেছে একজন মিসিং আছে। প্রতিদিন উনার প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে। তাই আজ বাধ্য হয়েছি ওনার টুইটার ব্লক করে দিতে।

রাজভবন থেকে পেগাসাস চলছে

পেগাসাস (Pegasus) তো রাজভবন (Raj Bhavan) থেকে চলছে। এক অল ইন্ডিয়া পেগাসাস আর এখানে নাভিশ্বাস। পেগাসাস এর নাভিশ্বাস বসে আছে এখান থেকে কন্ট্রোল করছে সব অফিসারদের। সবার ফোন ট্যাপ করছে। যা ইচ্ছে করে যাচ্ছে। যান না গিয়ে রাজভবনটা তোলপাড় করুন দেখুন কারা আছে। আর কি কি কাগজপত্র আছে সব পেয়ে যাবেন। আমি কেন করব? এটা সাংবাদিকদের কাজ। আমি আপনাকে ক্লু দিলাম। আপনাদের খুঁজে বের করা দরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here