মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের খোলা চিঠি, রাজ্যপালের গ্রেট ডিরেক্টর হওয়ার অধিকার নেই

0

Last Updated on April 7, 2023 6:39 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। চেন্নাই। কেন্দ্রে ভাজপা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অ-ভাজপা শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপাল করে পাঠানো হচ্ছে ভাজপার রিমোট কন্ট্রোলে চলা আরএসএস নেতাদের। নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে কাজ করতে না দিয়ে প্রতিপদে বাধা তৈরি করাই এই সমস্ত রাজ্যপালের প্রধানতম কাজ। কিন্তু কেন্দ্রের ভাজপা সরকার এবং তাদের রিমোট কন্ট্রোলে চলা পুতুল রাজ্যপালরা এটা ভুলে গিয়েছেন যে ভারতের সংবিধান রাজ্যপালকে হিটলারের মতো গ্রেট ডিক্টেটর হওয়ার কোন স্বাধীনতা দেয়নি। এমন বিস্ফোরক অভিযোগ করে জাতির উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে সুপ্রিমো এমকে স্ট্যালিন।

বাংলায় যেভাবে প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার পাশাপাশি অতি সক্রিয়তা দেখিয়ে গিয়েছেন তাঁর সম্পূর্ণ মেয়াদ জুড়ে, ঠিক সেভাবেই দেশের প্রায় প্রত্যেকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল শাসিত রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য ভাজপা নেতাদের অঙ্গুলী হেলনে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে। তামিলনাড়ু থেকে শুরু করে কেরালা, তেলেঙ্গানা, অন্ধপ্রদেশ, পাঞ্জাব, দিল্লি – সর্বত্র রাজ্যের নির্বাচিত সরকার তাদের রাজ্যের রাজ্যপালকে ভাজপার হাতের পুতুল বলে অভিযোগ করেছেন।

স্ট্যালিনের প্রতিবাদের কারণ

এমকে স্ট্যালিন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তাকে প্রতি পদে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি অপদস্থ করার অভিযোগ উঠেছে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন ভাজপা নেতা, আর এন রবির বিরুদ্ধে। কত দেড় বছরে তামিলনাড়ু বিধানসভায় তামিলনাড়ুর শাসক জোট ডিএমকে কংগ্রেস এবং সিপিএম যে সমস্ত বিল পাস করেছে তার মধ্যে অধিকাংশ বিল সেই না করে হয় রাজভবনে আটকে রেখে দিয়েছেন রাজ্যপাল অথবা অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন বিধানসভায়। শুধু তাই নয় ভারতের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের যেভাবে নিয়মতান্ত্রিক সংবিধানিক প্রধান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ করে তামিলনাড়ু নির্বাচিত রাজ্য সরকার রাজ্যপালের ফেরত পাঠানো বিল পুনরায় রাজ্যপালের কাছে পাঠানোর পরেও যাবতীয় সাংবিধানিক রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য জলাঞ্জলি দিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্যও বিধানসভার পাঠানো বিল ফেরত পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। যা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি কোন রাজ্যপালকে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজকর্ম।

রাজ্যপালের কাজ পোস্টম্যানের মতো

এর প্রেক্ষিতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেন, রাজ্যপালকে তো আমরা বলিনি বিলটি অনুমোদন করতে। রাজ্যপালের সেই এক্তিয়ারও নেই। আমরা শুধু বলেছি, বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান। রাজ্যপালের কাজটা হওয়া উচিত পোস্টম্যানের মতো। এমনকি, তিনি ডাক বিভাগের কাজটা করতেও নারাজ। যেটা তাঁর পদের সঙ্গে মানান সই নয়। জানা গিয়েছে, তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবির কাছে ২০ টি বিল আটকে রয়েছে।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, এক জন মনোনীত রাজ্যপাল কী ভাবে বিধানসভায় পাশ হওয়া একটি বিলকে ফেরত পাঠাতে পারেন। যে বিধানসভার সদস্যেরা আট কোটি জনতার ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? রাজ্যপাল রবিকে নিশানা করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, আপনি কী মনে করেন, আপনি একটা বিরাট সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন?

এরপরেই তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকির পক্ষ থেকে মূলত অ-ভাজপা শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালদের ভূমিকা নিয়ে ৫ নির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

১। রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হওয়া কোন বিল বিধানসভা থেকে রাজ্যপালের কাছে গেলে তা সই করে অনুমোদন দিতে বাধ্য রাজ্যপাল। একান্তই যদি বিলটি নিয়ে কোন আপত্তি জানানোর থাকে তাহলে পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন কিন্তু দ্বিতীয়বার বিলটির কাছে পাঠানো হলে বিনা বাক্য ব্যয় তা সই করে দিতে বাধ্য তিনি।

২। ভারতের সংবিধানের রাজ্যপালের হাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা জনিত কোন ক্ষমতা না দেওয়া হলেও ভাজপাবিরোধী রাজনৈতিক দল শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালরা অতি সক্রিয়তা দেখে দৈনন্দিন আইন শৃঙ্খলা জনিত বিষয় অকারনে নাক গলিয়ে চলেছেন।

৩। রাজভবনকে বিরোধী শাসিত রাজ্যে ভাজপার পার্টি অফিসে পরিণত করছেন ভাজপা নিয়ন্ত্রিত রাজ্যপালরা।

৪। রাজ্যে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার জন্য নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে রাজনৈতিক বিবৃতি প্রকাশ করছেন ভাজপা নিয়ন্ত্রিত রাজ্যপালরা।

৫। রাতে যেখানেই কোন ঘটনা ঘটছে অথবা রাজ্যে বিরোধী আসনে বসে থাকা ভাজ পা নেতারা কোন বিষয়ে রাজ্যপাল কে জানালেই সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজ্য সরকারের কাছে বিষয়টি নিয়ে জবাবদিহী তলব করছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের প্রকৃত পরিস্থিতি না জানিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অসত্য রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন।