Last Updated on April 21, 2023 7:45 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গত তিন বছরে যে সমস্ত বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে সেখানে ব্যবহৃত ইভিএম এর সঙ্গে থাকা ভিভিপ্যাটের এক তৃতীয়াংশ খারাপ ছিল। অবিলম্বে এগুলি প্রস্তুতকারক সংস্থার কাছে ফেরত পাঠাতে হবে সারানোর জন্য। দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যের নির্বাচন কমিশনারদের কাছে এমনই লিখিত নোটিশ পাঠিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে ভিভিপ্যাট মেশিনের তিনটি স্তরের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিইউ বা কন্ট্রোল ইউনিট গড়বড় করছিল। প্রসঙ্গত এই কন্ট্রোল ইউনিটেই সংরক্ষিত থাকে ভোটাররা কোন দলের কোন প্রার্থীকে নিজেদের ভোট দিলেন।
অর্থাৎ 2019 সালের লোকসভা নির্বাচন হোক অথবা ২০২১ সালে বাংলার বিধানসভা নির্বাচন – কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন ভাজপা ছাড়া দেশের প্রত্যেকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ইভিএম এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেন সুপ্রিমকোর্ট যেখানে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছিল ইভিএম এর বিশ্বাসযোগ্যতা তখনই সম্পূর্ণ হতে পারে যখন ভিভিপাটের সঙ্গে ইভিএম এর ভোট গণনা মিলে যাবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের লিখিত নথি অনুযায়ী এই সমস্ত নির্বাচনে ব্যবহৃত ভিভিপ্যাটের ৩৭ শতাংশ মেশিনেই গরমিল ধরা পড়ায় এই নির্বাচনের ফলাফল গুলিতে ভাজপার পক্ষ থেকে কারচুপি করার অভিযোগ ফের জোরদার হয়েছে দেশজুড়ে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি নিয়ে আজ চিঠি দিয়েছে কংগ্রেস। বিগত ভোট গুলিতে ভাজপা এবং নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে কারচুপি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে শিবসেনা ও তৃণমূল।
কি ঘটেছে?
সম্প্রতি প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ ভিভিপ্যাট মেশিন সারাই করার জন্য পাঠানো হয়েছে প্রস্তুতকারক সংস্থা ভারত ইলেকট্রনিক্সের কাছে। যেখানে নির্বাচন কমিশন স্বীকার করে নিয়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ ভিভিপ্যাট মেশিনে গরমিল রয়েছে। তারপরেই দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, এখন সারাতে পাঠানো হলেও খারাপ ভিভিপ্যাট মেশিনে কী করে 2019 সাল থেকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ ভোট হয়ে গেল? কেনই বা নির্বাচন কমিশন আগেই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? এর থেকেও বড় যে অভিযোগ উঠেছে তা হল, ২০১৯ সালে লোকসভায় যে ভোট হয়েছে, সেখানে ভোটিং মেশিনের অঙ্গ ভিভিপ্যাট মেশিন খারাপ ছিল। মোট ১৭.৪ লক্ষ ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ছ’ লক্ষ ভিভিপ্যাট মেশিন খারাপ ছিল। সেগুলিকেই এখন সারাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। অর্থাত্ খারাপ ভিভিপ্যাটের মাধ্যমে ভোট করানো হয়েছে যাতে আমজনতা বুঝতে না পারেন তাঁর দেওয়া ভোট তাঁর পছন্দ মতো প্রার্থীর পক্ষে জমা না হয়ে অন্য কারও পক্ষে জমা হয়েছে। যদিও জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের সাফ জবাব এই ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কারচুপি কোথাও কিছু হয়নি।
ভিভিপ্যাট নিয়ে সুপ্রিম নির্দেশ
২০১৯ সালের এপ্রিলে লোকসভা নির্বাচনের আগে এক মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাট যাচাই করার হার বাড়াতে হবে। তাহলেই দেশের মানুষের কাছে ইভিএম এর গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। ২০২১ সালেও বাংলার বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট ইভিএমের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু ভোট প্রক্রিয়া চালু থাকায় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেনি আদালত।
তবে শুধুমাত্র ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন অথবা একুশে বাংলার বিধানসভা নির্বাচন নয়, দেশজুড়ে ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৯ সালে গোটা দেশে ভাজপার বিপুল জয়ের পর ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ছোট বড় প্রায় সব বিরোধী দল। ইভিএম হ্যাক করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানায় অনেকে। যার ফলে অন্য দলকে ভোট দিলে সেই ভোটও ভাজপার খাতায় চলে যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। এমনকী ইভিএম কী ভাবে হ্যাক করা যায় তা দিল্লি বিধানসভার ভিতরে নকল ইভিএম দিয়ে দেখান আপ সরকারের এক মন্ত্রী।
গত পরশুদিন মমতাও আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভিভিপ্যাটের ব্যবহার নিয়ে কমিশনের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, সিআরপিএফ, বিএসএফ, ইডি , সিবিআই দিয়ে ভোট লুঠ করা যাবে না। ইলেকট্রনিক মেশিন নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। আমরা চাইব ভিভিপ্যাট মেশিন যাতে বেশি করে ব্যবহার করা হয়।
কমিশনের জবাবদিহি তলব তৃণমূলের
প্রায় এক তৃতীয়াংশের বেশি ভিভিপ্যাট মেশিন খারাপ হওয়ার কথা নির্বাচন কমিশন স্বীকার করে নেওয়ার পরে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের প্রশ্ন তুলেছেন, ২০১৯ সালে যে নিঁখুত ফলাফলই প্রকাশ হয়েছে, তার গ্যারান্টি কোথায়? খারাপ ভিভিপ্যাট মেশিন ব্যবহার কি নির্বাচন কমিশনের অজ্ঞানতায়, নাকি জেনেবুঝে? এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে উত্তর দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই জনগণের সন্দেহ দূর করতে ভিভিপ্যাট মেশিন ইভিএমে যুক্ত হয়েছে। গণনায় ৫ শতাংশ ভিভিপ্যাট স্লিপ মিলিয়েও দেখা হয়। ফলে সুপ্রিম কোর্ট এখন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খারাপ মেশিনের অভিযোগে কমিশনের জবাব তলব করুক। এখন থেকে ১০০ শতাংশই ভিভিপ্যাট স্লিপ গোনা হোক।
প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগেই বাংলার নির্বাচনে ইভিএম এর সঙ্গে ত্রুটিমুক্ত ভিভিপ্যাট ব্যবহারের দাবি তুলে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, পুরসভা – কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রহসন মানুষ দেখেছে। ভিভিপ্যাট ছাড়া কী ভাবে ভোটের মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, ভিভিপ্যাট ছাড়া ইভিএম ত্রুটিমুক্ত নয়।