Last Updated on April 19, 2023 7:17 PM by Khabar365Din
৩৬৫দিন। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের বইমেলায় ব্রাত্য পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশকরা। কিন্তু প্রতিবছর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের প্রকাশকরা যোগ দিচ্ছেন এবং দেদার ব্যবসা করছেন। চলতি বছরের বইমেলা শেষ হতেই বাংলাদেশের এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কর্তারা। এবার গিল্ডের ক্ষোভ প্রশমনে নামল হাসিনার সরকার। বাংলা বইমেলা ও সাহিত্য উৎসব করার জন্য গিল্ডকে আমন্ত্রণ জানালো বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক সমিতি। গত মার্চ মাসে গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়কে পুস্তক প্রকাশক সমিতির তরফে চিঠি পাঠান মাজহারুল ইসলাম। সেই চিঠিতে দুই বাংলার প্রকাশকদের নিয়ে বাংলাদেশে বইমেলার আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত সবটাই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ৪ বছর আগে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, প্রতিবছর ঢাকা ও কলকাতায় উভয় সমিতির সদস্যদের নিয়ে বাংলা বইমেলা ও সাহিত্য উৎসব আয়োজন করা হবে। করোনা মহামারীর কারণে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক বুক সেলার্স গিল্ডের প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশকরা কীভাবে বাংলাদেশে বই উৎসব করবে তা নিয়েই আলোচনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী মাসের গোড়াতেই গিল্ডের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে যাবে। তারপর ওপার বাংলার বই উৎসব নিয়ে বিস্তারে আলোচনা হবে।
তবে কিভাবে বা কোন সময় মেলা বসবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে গিল্ডের সাধারন সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা চাই ওরা যেমন কলকাতায় এসে বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে, তেমন আমাদের প্রকাশকরাও তাদের বই নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে প্রচার করুক। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে বইমেলা করার কথা ভাবা হয়েছে। সবকিছু চূড়ান্ত হলে ওখান থেকেই সাংবাদিক বৈঠক সবটা ঘোষণা করা হবে। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের গিল্ড ও বাংলাদেশের প্রকাশক সমিতি যৌথভাবে বাংলা বইমেলার সঙ্গে সাহিত্য সম্মেলন করবে বলে ঠিক করেছিল । দুই দেশের ২৫ থেকে ৩০টি প্রকাশনা সংস্থা মিলিতভাবে প্রথমে বাংলাদেশ ও পরে পশ্চিমবঙ্গে মেলায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । শুধু তাই নয়, বিশ্বের যেসব প্রান্তে বাঙালিরা রয়েছে যেমন নিউইয়র্ক, লন্ডন, নিউ জার্সি, টরেন্টোর মতো জায়গায় বই উৎসব করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যদিও তারপরে চার বছর কেটে গেলেও কোনো যৌথ বইমেলা করে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ কলকাতা আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ করছে।
২০২২ সাল নিয়ে মোট ৩ বার কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ফোকাল থিম কান্ট্রি ছিল বাংলাদেশ ।শেষবার ২০০০ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলার পর পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশকদের আর আমন্ত্রণ জানায়নি হাসিনা সরকার। যদিও এরপরে বহুবার পশ্চিমবঙ্গের লেখক, প্রকাশকরা বাংলাদেশ সরকারকে ওদেশের বইমেলায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য অনুরোধ করলেও লাভের লাভ হয়নি।২০১৯ সালে আগস্ট মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংস্কৃতি মন্ত্রীর সঙ্গে গিল্ড কর্তৃপক্ষর বৈঠক সিদ্ধান্ত হয়েছিল, হাসিনা সরকার আবার আন্তর্জাতিক বইমেলার আসর বসাবে ঢাকায়।সেখানে ভারতীয় প্রকাশকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলারস গিল্ডের তরফে ২০২১ সালের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার ফোকাল থিম কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়। এরপর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে বইমেলা উদ্বোধনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দিয়েছিলেন গিল্ডের দুই কর্তা সুধাংশু শেখর দে ও ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তরফে গিল্ডের কাছে ২০২২ সালের কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি করার জন্য আবেদন করে। বাংলাদেশের মেলায় কোনো জায়গা না দেওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশক ও লেখকরা। যার ফলে চাপে পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগের সরকারকে। তাই বাংলাদেশের প্রকাশক সমিতি একপ্রকার বাধ্য হয়ে যৌথ বইমেলা করার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।