Last Updated on December 22, 2021 9:34 PM by Khabar365Din
পূষন গুপ্ত
টেনিদার চারমূর্তি
নারায়ণ গাঙ্গুলির চারমূর্তিতে টেনিদাদের নজর পড়েছিল স্বামী ঘুটঘুটানন্দর বিশাল হাঁড়িটার দিকে। স্বামীজীর চেলা বলেছিল, ‘ওদিকে নজর দিও না বাপু। ওই হাঁড়িতে আছে কালসৰ্প।’ গুরুদেব যোগবলে বশ করে রেখেছেন।’ কিন্তু এসব ছেলেভুলোনো কথা পটলডাঙ্গার চারমূর্তির বিশ্বাস হয়নি। ওদের তখন লোভে চকচক চোখ। সুযোগ পাওয়া মাত্র হাঁড়ি ভর্তি রসগোল্লা সাবাড় করেছিল। বস্তুত চারমূর্তির এই অ্যাডভেঞ্চারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল হাঁড়ি ভর্তি ওই কালসর্প তথা ওই রসগোল্লা। এই গল্পে চারমূর্তি যত ঝামেলায় পড়ে তার মূল কারণ ওই রসগোল্লা।
ভাজপার সামনে রসগোল্লার হাঁড়ি
গল্পটা বলতে হল বোঝার সুবিধার জন্য। ভাজপার চোখের সামনে, শুধু রাজ্য ভাজপার কথা বলছি না, গোটা দেশের ভাজপার সামনে ওই হাঁড়ি ভর্তি রসগোল্লা টোপ হিসেবে বসিয়ে রেখেছে সিপিএম। ভাজপা খেয়েছে, মোহিত হয়েছে, এবং বুদ্ধিসুদ্ধি ও পড়াশুনো কম বলে কালসর্প সিপিএমের ফাঁদে পড়েছে। একটু হিসেব করে দেখুন গত বিধানসভা ভোটের আগে থেকে পরশু দিন পর্যন্ত (আরও পরিষ্কার করে বললে গত এক বছর ধরে) ভাজপা নেতাদের মুখে কতবার সিপিএমের প্রশস্তি শুনেছেন। স্বয়ং মোদি প্রশংসা করেছেন, স্বয়ং অমিত শাহ প্রশংসা করেছেন। আমার সামনে বসে ওদের অন্যতম থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আরএসএসের গর্ভগৃহ থেকে উঠে আসা অনির্বাণ গাঙ্গুলি বলেন, ‘আমি জ্যোতিবাবু, বুদ্ধদেববাবুদের এই তৃণমূলের থেকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য নেতা বলে মনে করি। | সিপিএমের আমল এদের থেকে কয়েকশো গুণ ভাল ছিল।’ আমি খানিকটা ভ্যাবাচাকা খেয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘বলছেনটা কী? সঙ্ঘ পরিবারের হিসেব মতো আপনাদের প্রধান শত্রু হবে কমিউনিস্ট, অর্থাৎ সিপিএম।’ অনির্বাণ গাঙ্গুলি মৃদু হেসে বলেন, ‘ঠিক লেখার জন্য বলছি না, কিন্তু বিষয়টা হল এই যে, তৃণমূল কোনও রাজ্যে থাকলে সারা দেশে বিজেপির বিস্তারে বাধা হবে। সিপিএম অনেক গ্রহণযোগ্য বিকল্প। ওদের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে চলা যায়, তৃণমূলকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরাতে হলে সিপিএমের সাহায্য লাগবে, এটা গ্রাউন্ড রিয়েলিটি।’ শুধু এখানে শেষ হলে গেলে এতটা অবাক হতাম না যতটা অবাক হয়েছি শুভেন্দুর একটানা সিপিএমের প্রশস্তি দেখে। সিপিএমকে টাটার কারখানা করতে না দেওয়া অন্যায় হয়েছে, নন্দীগ্রামে সিপিএম নিরপরাধ ছিল, সিপিএমের রাজত্বে আইনশৃঙ্খলা অনেক ভাল ছিল—এসব কার কথা? রেকর্ড দেখুন। ওদের কথা। যারা জয় শ্রীরাম বলেন, তারা কেন জয় লাল সেলাম বলছে? একজন নয়, দুজন নয়, স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি থেকে ওদের দলের চাপরাশি পর্যন্ত।
জয় শ্রী সিপিএম
সঙ্ঘ পরিবারের মৌলিক দর্শনে চরমতম শত্রু হল কমিউনিস্টরা। আমি বারবার একটা কথা বলছি, ২০১৯’এ লোকসভার আগে এই বামরাম জোট সম্পূর্ণ হয়েছে। শুভেন্দুর মতো কয়েকজন গদ্দার তৃণমূলী ক্যামোফ্লেজ করে সিপিএম দিয়েছে, সায়েন্টিফিক রিগিঙের ওদের সঙ্গে মিশে ছিল। কিন্তু মূল শক্তিটা সিপিএম দিয়েছে, যাকে বলে পাওয়ার হাউজ সাপ্লাই।
সায়েন্টিফিক রিগিঙের ইতিহাস
সায়েন্টিফিক রিগিঙের জন্মদাতা সিপিএম। তৃতীয় বামফ্রন্ট গঠনের আগে এই কনসেপ্টের ট্রায়াল হয়। অবশ্যই এক্সজিকিউটর ছিলেন সুভাষ চক্রবর্তী, তার দু তিনজন মদতদারের মধ্যে ছিলেন কমরেড অশোক ভট্টাচার্য, কমঃ গৌতম দেব, কমঃ কান্তি গাঙ্গুলী, কমঃ লক্ষণ শেঠ, কমঃ প্রশান্ত সূর, কমঃ লগনদেও সিং প্রমুখ। সায়েন্টিফিক রিগিং শব্দ দুটির অর্থ ভাজপা জানে না। সুকান্ত মজুমদার ওদের সভাপতি, বাচ্চা ছেলে, সবে রাজনীতিতে এসেছে। বরং গুন্ডা মস্তানিতে দক্ষতা আছে শুভেন্দুর। ওকে জিজ্ঞেস করলে সুকান্ত বুঝতে পারতেন (উনি যেসব অভিযোগ প্রেসকে করছেন) সায়েন্টিফিক রিগিং’এরও কিছু বাধ্যবাধ্যকতা আছে। ভাজপার সভাপতি যেসব অভিযোগ করছেন, অর্থাৎ তৃণমূল ৮টি ভোট নিজেকে দিয়েছে আর ২টি ভোট সিপিএমকে দিয়েছে, এসব ঠিক নয় কারণ তা করা যায় না। সিস্টেমটা ম্যানুয়াল, রোবোটিক অপারেশন নয়। সায়েন্টিফিক রিগিঙে ভাঙচুর থাকে না, বুথ দখল থাকে না, নির্দিষ্ট কার্ডের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ভোট হয়। এ কেবল সিপিএম জানত। তাও শেষের দিকে এই মেকানিজম ফেল করতে শুরু করে। সুজিত প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল সুভাষবাবুকে।
মমতা রিগিঙে বিশ্বাসী নন
আগেও বলেছি, আবার বলছি মমতা রিগিং তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। তিনি মৌলিকভাবে আদর্শবাদী এবং মানুষের ভালবাসা ও শক্তিতে আস্থা রাখেন। রিগিঙে বিশ্বাসী হলে মমতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই গত লোকসভায় এবং বিধানসভায় বাংলায় ভাজপা শূন্য পেত। হয়নি। মমতা মানুষের ভোটে বিশ্বাসী বলে। এটা যতদিন বুঝতে পারবেন না ততদিন মমতার রাজনীতির মূল শক্তিটা ধরতে পারবেন না।
হাঁড়িতে কালসর্প
ভাজপার কদর্য ধর্মভিত্তিক তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী অবাঙালি রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ যেসব বাঙালি ভোটার খানিকটা খুশি হয়েছেন যে, অন্তত ভাজপা ৩ নম্বরে গেছে দেখে, তাদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য বলছি, সিপিএম কালসর্প। কদাচ ওদের বিশ্বাস করবেন না। মাসখানেকের মধ্যে গোটা রাজ্যে ১১০/১১২ পুরসভায় ভোট আছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, সিপিএমের স্ট্র্যাটেজি হল যেসব জেলায়, যেসব এলাকায় ভাজপার সামান্যতম সুযোগ আছে সেখানে আবার বামরাম জোট করে তৃণমূলকে হারাতে হবে। যেসব জায়গায় মাঝারি ক্ষমতা সেখানেও ঝুঁকি না নিয়ে তৃণমূলের সৌজন্যতার সুযোগ নিয়ে গোপনে বামরাম জোট করে ভোট সুইচ করাতে হবে। কারণ ২০২৪’এ সিপিএমের টার্গেট একটাই, যে করে হোক কেন্দ্রীয় ক্ষমতার ধারকাছ থেকে তৃণমূলকে দূরে রাখ ↑। কেন্দ্রে ভাজপা থাকুক কোনও ক্ষতি নেই, তৃণমূল না এলেই হল। অর্থাৎ আমি একটু স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাইছি, তৃণমূলকে বাংলায় ক্ষমতাচ্যুত বা কেন্দ্রের থেকে দূরে রাখার জন্য, সিপিএম আবার ভাজপার সঙ্গে বামরাম জোট করে নামবে। তার প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু হয়ে গেছে।