DA Controversy: বনধে এগিয়ে সরকারি স্কুলের সিপিএম শিক্ষকরা

0

Last Updated on March 12, 2023 6:33 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। ডিএ বা সোজা বাংলায় মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বাম সমর্থিত কয়েকটি ইউনিয়ন। তাদের উস্কানি দিতে মাঠে নেমে পড়েছিল রাম ভাই ভাজপাও। তবে সামগ্রিকভাবে সেই ধর্মঘট ব্যর্থ হয়েছে বা নবান্ন বিধানসভা বিকাশ ভবন সহ জেলা স্তরের মূল প্রশাসনিক অফিসগুলোতেও সরকারি কর্মীদের হাজিরা বছরের অন্যান্য কাজের দিনের তুলনায় কম তো হয়নি বরং 90% ছাড়িয়ে কোথাও ৯৫ শতাংশ কোথাও আবার ৯৮ শতাংশে পৌঁছেছিল।
অথচ প্রাথমিকভাবে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের অফিস থেকে যে রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে তা কিন্তু বেশি অন্যরকম। দেখা যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে রাজ্যজুড়ে সেদিন উপস্থিতির হার ছিল মাত্র ৮২ শতাংশের কাছাকাছি। আবার মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপস্থিতির হার সেখানে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭২ শতাংশে। অর্থাৎ গড়ে স্কুল শিক্ষকদের মধ্যে প্রায় 25 শতাংশ সেদিন ধর্মঘটে যোগ দিয়ে স্কুলে আসেননি। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ধর্মঘটে যোগ দেওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শোকজ নোটিশ পাঠানো শুরু হলেও তার মধ্যে কিন্তু অন্য একটি প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করেছে। তা হল বাংলায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, অথবা আরও স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নৈতিকতার মান কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। বাংলা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করেছে।

কেন শিক্ষকদের নীতি নিয়ে প্রশ্ন

শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকতা কেবল একটি পেশা নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু।
আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ মানুষ সৃষ্টির শৈল্পিক কারিগর। আদর্শ শিক্ষকের সমাজসংস্কারক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে – অন্তত মানব সভ্যতার শুরু থেকেই পুরান ইতিহাস বেদ বেদান্ত সর্বত্র শিক্ষকদের এভাবেই দেখা হয়েছে।
কিন্তু গত শুক্রবার রাজ্যের অসংখ্য স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ যেভাবে শুধুমাত্র টাকার কাছে নিজেদের আত্মসমর্পণ করে যাবতীয় নীতি নৈতিকতা ভুলে বাড়িতে বসে থাকলেন আর কচিকাঁচা ছাত্র-ছাত্রীদের বঞ্চিত করলেন তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে, তারপরে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া এই সমস্ত তথাকথিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা কতখানি থাকলো বা আদৌ থাকা উচিত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
শিক্ষকতা পেশায় বাণিজ্যের ছাপ শিক্ষাব্যবস্থাকে করুণ করে তুলেছে। একটা সময় ছিল যখন শিক্ষকদের কাছে পড়তে টাকা লাগত না। তাঁরা নিজ গুণে পড়াতেন। বর্তমানে একজন শিক্ষক সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত না টাকা পান তার থেকে বহু গুণে বেশি টাকা মেলে বাইরে কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিলে, এমনকি অনেক শিক্ষক আজকাল নিজস্ব কোচিং সেন্টার খুলে বসে আছেন। ঐ শিক্ষকের কাছে টিউশন না করলে পরীক্ষায় নাম্বার কম দেবে এমনটাও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে বাসা বেঁধে রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই অভিভাবকগণ তাঁর ছেলে-মেয়েদের সংশ্লিষ্ট স্কুল শিক্ষকের কোচিং সেন্টারে টিউশনে পাঠায়।
শিক্ষকরা শিক্ষাকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে কখনো গুরু হতে পারবে না। তাঁদের কেউ সম্মান করবে না।
শিক্ষকদের মনে রাখা দরকার শিক্ষকতার পেশা শুধু চাকরি নয়, শিক্ষকতা মহান ব্রত। শিক্ষকের আচার-আচরণ, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই সকলের নিকট অনুকরণীয়-অনুসরণীয় ও শিক্ষকসুলভ হতে হবে।

করোনার সময় বাড়িতে বসে পুরো বেতন

২০২০ সালের মার্চ মাসে ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরে যখন লকডাউন ঘোষণা হল, অর্থাৎ ২০২০ সালের ২২ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সমস্ত স্কুলের পঠন পাঠন। মাঝে অল্প কয়েকদিন অনলাইন ক্লাস আর অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া 2022 সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত টানা দু’বছর বাড়িতে বসে পূর্ণ বেতন মহার্ঘ ভাতা পেয়েছেন বাংলার স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকারা। অথচ যদি বাংলার বাইরে একটু নজর ঘোরানো যায় তাহলে দেখা যাবে ২০২০ সালের মার্চ মাসেই দেশে লকডাউন ঘোষণার পরে মহারাষ্ট্রের সরকার রীতিমত সার্কুলার জারি করে ঘোষণা করেছিল স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকা সহ সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের বেতনের ৬০ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে। তেলেঙ্গানা সরকার তো আরো এক ধাপ এগিয়ে স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ সরকারি কর্মচারীদের বেতন ৭৫ শতাংশ কেটে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। বিহারের তৎকালীন ভাজপা নেতৃত্বাধীন এনডিএ শাসিত সরকার স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করে দিয়েছিল নো ওয়ার্ক নো পে। কাজ না করলে বেতন দেওয়া হবে না। অর্থাৎ স্কুল বন্ধ সরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতনও বন্ধ। এমনকি বিহার সরকার তো ঘোষণা করে দিয়েছিল বেতনের দাবিতে কোন শিক্ষক যদি স্কুলে না আসেন তাকে সাসপেন্ড করে বেতন বন্ধ রেখে তদন্তের মুখে দাঁড়াতে হবে।

অথচ বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন কারোর একটি টাকাও বেতন কাটা হবে না। তবে সরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা দু’বছর বাড়িতে বসে সম্পূর্ণ হারে বেতন পেলেও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভাগ্য কিন্তু অতটা সুপ্রসন্ন ছিল না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন কোথাও ৫০ শতাংশ কোথাও বা 75 শতাংশ করে কাটা হয়েছে। আবার বাংলায় সরকারি স্কুলে যে বিপুল সংখ্যক ছুটি ছাড়া রয়েছে তার সুবিধেও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা না পেলেও তারা কিন্তু টাকার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াবো না বলে স্কুল কামাই করেননি। এখন যে সমস্ত সরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন মহার্ঘ ভাতা না বাড়ালে কাজ করবেন না বলে, তারা যদি সত্যিই নীতি মেনে চলেন তাহলে করোনার সময় টানা দু’বছর বাড়িতে বসে কোন কাজ না করে পায়ের উপর পা তুলে পাওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন কি ফেরত দেবেন রাজ্য সরকারের তহবিলে? এই প্রশ্নটা কিন্তু তুলতে শুরু করেছে বাংলার সাধারণ মানুষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here