Last Updated on March 11, 2023 9:21 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। ডিএ পেলে স্কুলে আসবেন, তার আগে নয়। শিক্ষকদের একাংশের বাম রাম এবং কংগ্রেস জোট শুক্রবার ধর্মঘট পালন করে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যাতেই রাজ্য সরকার পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে, যারা ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে কাজে যোগ দেননি তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। রাজ্যের ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই শনিবার ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘিরে তাদের বেতন বাড়ানোর চাপের রাজনীতির তীব্র সমালোচনায় সরব হলেন অভিভাবকেরা। শুক্রবার শিক্ষকদের একাংশ ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করার পর, শনিবার অনেকেই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিতে নিয়ম মত উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্লাস নিতে দেননি। অভিভাবকদের বক্তব্য পরিষ্কার ছিল, আগে ডিএ পেয়ে নিন তারপর স্কুলে আসবেন। তার আগে স্কুলে আসবেন না। এদিন রাজ্যের একাধিক স্কুলে অভিভাবকদের এই রুদ্রমূর্তি দেখেছেন ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী বাম রাম এবং কংগ্রেস জোটের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রসঙ্গত, শুক্রবার সংগ্রামী যৌথ মঞ্চকে সমর্থন জানিয়ে কেশিয়াড়ীর কূলবনী স্কুলে ১৮ জন শিক্ষক অনুপস্থিত শুক্রবারের ধর্মঘটে। শনিবার সকালে স্কুল খুলতেই সেই শিক্ষকদের স্কুলে ঢুকতে বাধা দেন অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা। স্কুলের ভেতরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে তারা মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন।
অভিভাবকরা শিক্ষকদের কাছে জানতে চান, গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার কেন স্কুলে আসেননি তারা। পাল্টা শিক্ষকদের দাবি ছিল, ডিএ সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা। তখনই অভিভাবকরা জানান, তাহলে ডিএ পেলেই আপনারা স্কুলে আসবেন এমনটাই দাবি করেছে অভিভাবকেরা। কিন্তু এদিন সকালে কেশিয়াড়ির কুলবনী স্কুল খোলার পর স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের এবং দু একজন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যারা গতকাল ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু স্কুলের ১৮ জন শিক্ষককেই এদিন স্কুলে ঢুকতে দেননি অভিভাবকেরা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘ অভিভাবকদের এই রাগ প্রকাশ ন্যায্য। কারণ তাদের ছেলে মেয়েরাই পড়াশুনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শুধু নয়, অনেক শিক্ষক সরকারি কর্মচারী স্কুলে না যাওয়ার ফলে মিড ডে মিল বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ গতকালকে মতোথমকে গিয়েছে। ‘ অন্যদিকে, হাওড়ার ডোমজুড় নোনাকুন্ডু মহাদেব বিদ্যামন্দির হাই স্কুলে শিক্ষকদের ঢুকতে বাধা দেয় অবিভাবকেরা। শুক্রবার রাজ্য সরাকরি কর্মচারীদের ধর্মঘটে সামিল হওয়ার কারণেই স্কুলে ঢুকতে বাধা দেয় অভিভাবকেরা। বেশ খানিকক্ষণ শিক্ষকদের স্কুলের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে ঘটনাস্থলে ডোমজুড় থানার পুলিশ আসার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
অন্যদিকে, ধর্মঘটে সামিলের জন্য অনুপস্থিত লিখতে হবে সার্ভিস বুকে, এই দাবিতে ধর্মঘট পালনকারী শিক্ষকদের সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও গতকাল উপস্থিত থাকা শিক্ষকদের সাথে স্কুলের মধ্যেই বচসা শুরু হয় ডোমজুড়ে। শনিবার ডোমজুরের মহিম্বনালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুক্রবার ধর্মঘটে অনুপস্থিত শিক্ষক শিক্ষিকাদের সার্ভিস বুকে আবসেন্ট লেখার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবক এবং ওই স্কুলেরই শিক্ষকদের একাংশ যারা গতকাল ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে স্কুলে হাজির ছিলেন। শেষে উপস্থিতির খাতায় অনুপস্থিত লেখার পর তাদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়। পাশাপাশি হাওড়ার ডোমজুড়ের উত্তর ঝাপড়দহের নোনাকুন্ডু মহাদেব বিদ্যামন্দির স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা গত কয়েকদিন-আমরা ধর্মঘটে সামিল হচ্ছি, স্কুলে আসছি না-এই স্লোগান গায়ে লিখে ক্লাস করার ছিলেন স্কুলের শিক্ষকেরা। গতকাল স্কুলে আসেননি আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা। ফলে বন্ধ ছিল ক্লাস। শনিবার যখন প্রধান শিক্ষক সহ অন্য শিক্ষকরা স্কুলে আসেন তখন তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। এই নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় ওই স্কুলে। পরে ডোমজুড় থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ধর্মঘটের দিন হাওড়া জেলার বেশ কিছু স্কুলে শিক্ষকরা না আসায় স্কুল গুলি বন্ধ ছিল। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা না আসায় ছাত্র-ছাত্রীরা এসেও বাড়ি ফিরে যায়। হাওড়ার ডোমজুড়ের উত্তর ঝাপড়দহ নোনাকুণ্ড মহাদেব বিদ্যামন্দির স্কুলে প্রায় ৮০০ ছাত্র ছাত্রী আছে।
টিচার এবং প্যারা টিচার মিলে ১৬ জন আছেন। রাজ্য সরকার গতকাল স্কুল খুলে রাখা নির্দেশ দিলেও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা স্কুলে আসেননি এমনটাই অভিযোগ। ফলে ওই স্কুলে কোন ক্লাস হয়নি। অভিভাবকদের অভিযোগ, এলাকার গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হল। এর পাশাপাশি সরকারি মিড ডে মিলের খাবারও তারা পায়নি। এর দায় কার ? শনিবার সকালে স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলে ঢুকতে গেলে তাদের বাধা দেয় অভিভাবক এবং গ্রামবাসীরা। তারা শিক্ষকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। প্রধান শিক্ষকের ঘর এবং টিচার্স রুমে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ছুটে আসে ডোমজুড় থানার পুলিশ। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার মাখাল জানান, গতকাল তিনি স্কুলে আসেননি। এর আগে তারা ব্যাজ পড়ে ক্লাস নিয়েছিলেন। ব্যাজে লেখা পড়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসেনি। শনিবার যেভাবে রাজ্যের সর্বত্র ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে, অভিভাবকেরা তা এক কথায় নজিরবিহীন বলেই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।