Last Updated on August 25, 2021 12:40 AM by Khabar365Din
১৪২ বছরের পুরোনো হিমালয়ান টয় ট্রেন বেসরকারি হাতে যাচ্ছে
৩৬৫ দিন। শিলিগুড়ি । ইতিহাসকে বেঁচে দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। ইউনেস্কো ওয়াল্ড হেরেটেজ তকমা বাহি টয়ট্রেনকে বেসরকারিকরন আত্মহননকারী প্রয়াস বলেই মত পর্যটন থেকে বিবেচক মহলের। পাহাড়ের গৌরবকে শিল্পপতি গোষ্ঠীর হেফাজতে তুলে দিতে হবে তা মানতে পারছে না ডিএইচআর সাপোর্ট গ্রূপ। পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ আমলের টয়ট্রেনের আকর্ষণে ভূগোলকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উত্তরের পাহাড়ি ক্ষেত্রতে ছুটে আসেন পর্যটকেরা।টয়ট্রেনকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে বহু গান, কবিতা, সিনেমা অন্য মাত্রা নিয়েছে। সম্প্রতি গুগুল নিজেদের বিজ্ঞাপনের জন্য টয়ট্রেনকে ব্যবহার করেছে। তার শ্যুটও চলছে। আর সেই ইউনেস্কোর ওয়াল্ড হেরিটেজ পালক সংযোজিত ঐতিহাসিক তকমাবাহি টয়ট্রেনকে অ্যাসেট মনিটাইজেশনের আওতায় বেসরকারিকরনের ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছে মোদি সরকার। ইতিমধ্যেই রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ধরনের নীতির বিরুদ্ধে সওয়াল খাড়া করে আন্দোলনের রূপরেখা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সম্প্রতি বুধবার কোভিডের দীর্ঘ জড়া কাটিয়ে ফের সমতল থেকে পাহাড়ের বাঁক ধরে পুনরায় চলতে শুরু করবে খেলনা গাড়ি। আর তা নিয়ে খুশির মহল পর্যটক থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আর এর মাঝেই টয়ট্রেন কে বেসরকারিকরণের খবরে দূর আকাশে কালো মেঘ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে বিশেষজ্ঞরা।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন পৃথিবীর মানচিত্রে একমাত্র ২ফিট গেজ লাইন সচল রয়েছে ভারতে। যা দেশের গর্ব। যেখানে দেশের সর্ববৃহৎ ক্ষেত্র রেল নিজেই তার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করে উঠতে পারছে না। সেখানে কিভাবে দেশের অমূল্য এই সম্পদকে বাণিজ্যিকিকরন সম্ভব তাই ভেবে কুল পাচ্ছিনা বিবেচকেরা। ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৯সালে চালু হয় টয় ট্রেন। ১৯৯৯সালের ৫ই ডিসেম্বর দার্জিলিংয়ের এই খেলনা গাড়ি ও তার যাত্রাপথকে ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো। এরপর থেকেই রক্ষনাবেক্ষনে রেলের গাফিলতির জেরে এই খ্যাতি ধরে রাখতে বহুবার ইউনেস্কোর চোখ রাঙানীর সম্মুখীন হতে হয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ী তথা ডিএইচআর সাপোর্ট গ্রূপের অন্যতম সদস্য রাজ বসু জানান টয়ট্রেন শুধুমাত্র কয়েকটি কোচ নিয়ে চলা রেলগাড়ি নয় যা রেল চাইলেই বানিজ্যিকিকরন করে দিতে পারে। এনজেপি থেকে শুকনা, তিনধরিয়া, গয়াবাড়ি, কার্শিয়াং হয়ে দার্জিলিং ঘুম স্টেশম পর্যন্ত পুরোটাই একটি ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইট। তার ওয়ার্কশপ, হিল কার্ট রোড ভেদ করে যাওয়া ন্যারোগেজ রেললাইন সবটাই ওয়াল্ড হেরিটেজের আওতায়।
এভাবে হঠাৎ করে কোনো রকম বুনিয়াদি রক্ষনাবেক্ষন ছাড়াই তার দায়িত্ব কোনো শিল্প গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া আত্মহননকারি প্রয়াস। কারন প্রথমে রেলকে নিয়মিত টয় ট্রেন যাত্রা ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। ইউনেস্কোর খ্যাতি ধরে রেখে যে সমস্ত গাইডলাইন রয়েছে তা মেনেই এগোতে হবে রেলকে। অর্থ লাভের আশায় ঐতিহাসিক পরিচিতিকে সংশয়ের মুখে ফেলা কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারন হেরিটেজ তকমা বজিয়ে রাখাতে হলে যে নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে তা কখনই শিল্পগোষ্ঠীর পক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মানা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তার অন্যথা হলে ইউনেস্কো তাদের খেতাব তুলে নিতে পারে।এর আগেও এই বিষয়ে কথা হয়েছে রেলের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সেসময় তাদের জানানো হয় টিকিট, সাফ সাফাই- এর কিছু দায়িত্ব বেসরকারি হাতে দেওয়া হলেও টয়ট্রেন সহ পুরো হেরিটেজ সাইট বাণিজ্যিকীকরণ সম্ভব নয়।
এরসঙ্গে প্রতিটি স্থানীয় ব্যাক্তিদের আবেগ ও স্বার্থত্যাগ জড়িয়ে রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে। ডিএইচআরের সাপোর্ট গ্রূপের অপর সদস্য বলেন রেল রক্ষনাবেক্ষনে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। ইউনেস্কোর খ্যাতি ধরে রাখতে হেরিটেজ সাইটকে ঝাঁ চকচকে করে তার ঐতিহ্য যেভাবে সামলে রাখা দরকার তাতে ব্যর্থ রেল। তাদের নিয়মিত টয় ট্রেন চালুর পাশাপাশি হেরিটেজ সাইট রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে এই সময় সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তারপরই অন্যকিছু ভাবতে পারে তারা। এই বিষয়ে প্রাক্তন পর্যটন মন্ত্রী তথা বর্তমানের শিলিগুড়ি পুরো নিগমের পুরো প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন এই সরকার বেঁচে দেওয়ার সরকার। দেশের নবরত্নকে বেচে দিতে পারে তারা। সার্বিকভাবে মোদি সরকারের উৎখাত প্রয়োজন। টয়ট্রেন বেসরকারিকরনের দিকে এগোলে সর্বাত্মকভাবে আন্দোলন হবে।