Last Updated on March 23, 2023 6:50 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। মানহানির মামলায় দু বছরের জন্যে কারাদণ্ডের নির্দেশ হওয়ার পরে দু মিনিট করতে না কাটতেই একই বিচারকের এজলাশে মঞ্জুর হয়ে গেল জামিনের আবেদন। ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসের নিঃসন্দেহে নয়া ইতিহাস রচনা করলো, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতের সুরাত আদালতে রাহুল গান্ধীর মামলা। ততোধিক আশ্চর্যের বিষয় হল কংগ্রেসের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধীকে দু’বছরের কারাদণ্ডের সাজা শোনানোর মাত্র দু মিনিটের মধ্যেই যখন বিচারপতি রাহুল গান্ধীর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করছেন সেই সময় মামলাকারী ভাজপা সাংসদ তথা নরেন্দ্র মোদির দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে দাবি করা পূর্ণেশ মোদি অথবা তাঁর আইনজীবীরা বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ জানালেন না রাহুল গান্ধীর জামিনের বিরুদ্ধে।
কি ঘটেছে?
২০১৯ সালে কর্নাটকের ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, দেখা যাচ্ছে যাঁরাই দুর্নীতি করছেন তাঁদেরই পদবী মোদী। নীরব মোদী টাকা লুঠ করে পালিয়ে গিয়েছেন। আর যিনি তাঁকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন তিনিও একজন মোদী। দু’জনেই একই রাজ্যের। রাহুল গান্ধির এই মন্তব্যের পরেই রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে মামলা করেন ভাজপা সাংসদ তথা গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদি। অভিযোগকারীর দাবি, কর্ণাটকের কোলারের সমাবেশে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছিল। এই মন্তব্যে পুরো মোদি সম্প্রদায়কে অপমানিত করা হয়েছিল। আদালতে মামলা ওঠার পরে ২০২১ সালের অক্টোবরে রাহুল গান্ধি নিজের বক্তব্য আদালতকে জানিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ধারা ৪৯৯ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ ধারাতে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
সেই মামলারই এদিন চূড়ান্ত রায় দান ছিল। সশরীরে সুরাতের আদালতে হাজির ছিলেন রাহুল। দোষী সাব্যস্ত করার পর, সাজা ঘোষণার আগে রাহুলকে বিচারক জিজ্ঞেস করেন, আপনার কিছু বলার আছে? আপনি কি অনুতপ্ত? জবাবে রাহুল বলেন, রাজনীতির মঞ্চ থেকে রাজনীতির কথা বলেছি। এখানে অনুতাপের কোনও বিষয় নেই।
আজ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করতে গিয়ে সুরাতের আদালত রাহুল গান্ধিকে ২ বছরের জেলের সাজা ঘোষণা করে। আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি দু’বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাজা প্রাপ্ত হলে ওই ব্যক্তির সাংসদ অথবা বিধায়ক পদ তত্ক্ষণাত্ খারিজ হয়ে যায়। পাশাপাশি আগামী ছয় বছর তিনি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারবেন না। অথচ রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দু’বছরের কারাদন্ডের এই সাজা ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গেই রাহুলের পক্ষে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানানো মাত্র এক মুহূর্ত সময় ব্যয় না করে সুরত আদালতের বিচারক রাহুলের কারাদণ্ডের নির্দেশের উপরে নিজেই আগামী এক মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়ে তাঁর জামিন মঞ্জুর করে দেন। সুরাত জেলা আদালতের বিচারক নির্দেশ দেন, জেলযাত্রার এই সাজা আপাতত ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হল। এই সময়ের মধ্যে রাহুলকে উচ্চতর আদালতে পিটিশন দাখিল করতে হবে। তারপরেই আদালত থেকে বেরিয়ে যান রাহুল।
কেন রাহুলকে প্রচারে রাখছে ভাজপা
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে যেভাবেই হোক রাহুল গান্ধীকে ভারতের প্রধান বিরোধী দলনেতা হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। না হলেই রাহুলকে টপকে ভাজপাকে হারানো এবং গ্রহণযোগ্যতার বিচারে অন্য কোন আঞ্চলিক দল জাতীয় রাজনীতিতে ভাজপার সামনে খাড়া করে যেতে পারে কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেই কারণে ভাজপার একমাত্র ফোকাস রাহুল গান্ধী। যেমন সংসদের অধিবেশনে ক্রমাগত রাহুলকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রচার তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে আক্রমণ করে চলেছেন বা আক্রমণের নাটক করে চলেছেন রাহুল গান্ধীকে, সেভাবেই এই মানহানের মামলা তার পরবর্তী নাটক।
রাহুলের টুইট
গুজরাতের সুরাত জেলা আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরেই টুইটারে মহাত্মা গান্ধীর বাণী তুলে ধরে রাহুল পোস্ট করেন, আমার ধর্ম সত্য এবং অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ঈশ্বর, অহিংসা তা পাওয়ার মাধ্যম— মহাত্মা গান্ধী।