Last Updated on April 6, 2023 6:36 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। গুয়াহাটি। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত। সম্ভব হলে অবসরপ্রাপ্ত কোন বিচারপতি অথবা দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীনে এই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। মূলত দুটি বিষয় এই তদন্তের আওতায় আনতে হবে – প্রথমত শাহজাহান সত্যিই মুমতাজ বেগমকে ভালোবাসতেন কিনা। যদি সত্যিই মুমতাজ বেগমকে শাহজাহান এতটাই ভালবাসতেন যে তাঁর স্মৃতিতে তাজমহল বানিয়েছিলেন, তাহলে মুমতাজ বেগমের মৃত্যুর পরে আরো তিনটে বিয়ে করলেন কেন? শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা উচিত যে তিনি সত্যিই মুমতাজকে ভালোবাসতেন কি না। দ্বিতীয়ত, ১৫২৬ সালে মুঘলরা ভারতে আসার পরে ১৬৩১ সালে যখন শাহজাহান তাজমহল বানাচ্ছেন বিপুল অংকের এই টাকা তিনি কোথা থেকে পেলেন? ভারতে মুঘল শাসনের প্রথম ১০৫ বছরে কোন কোন হিন্দু রাজা এবং সম্রাট এর কাছ থেকে কত টাকা মুঘলরা লুট করেছিল এবং তার মধ্যে কত টাকা তাজমহল তৈরির জন্য খরচ হয়েছিল তা অবিলম্বে তদন্ত করে বের করা উচিত। সম্ভব হলে আদালতের নজরদারিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই অথবা ইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তাহলেই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্পষ্ট হবে ভারতের সত্যিকারের ইতিহাস।
এটা কোন কাল্পনিক গল্পের স্ক্রিপ্ট নয় – ভারতের শাসক দল ভাজপার দলীয় প্রতিষ্ঠা দিবসে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে এমনটাই দাবি জানালেন ভাজপার ডাবল ইঞ্জিন মডেলে চলা অসমের ভাজপা বিধায়ক রূপজ্যোতি কুর্মি।
ভেঙে দিন তাজমহল কুতুব মিনার লালকেল্লা
তবে শুধুমাত্র মুঘল সম্রাট শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গঠন করে তার প্রেমের যথার্থ প্রমাণ করা অথবা মুঘল সম্রাটদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করার দাবি জানানো নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আরও একটি বড়সড় দাবি করেছেন রূপজ্যোতি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাজমহল, কুতুব মিনার এবং লাল কেল্লার মতো স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলার কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানান। রূপজ্যোতি কুর্মি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এমন জায়গায় মন্দির তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে এই স্মৃতিস্তম্ভগুলি বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, আমি অবিলম্বে তাজমহল এবং কুতুব মিনার ভেঙে ফেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। এই দুটি স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মন্দির তৈরি করা উচিত। এই দুটি মন্দিরের স্থাপত্য এমন হওয়া উচিত যাতে অন্য কোনও স্মৃতিস্তম্ভ তাদের কাছাকাছি হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেখিয়ে দিয়েছেন হিন্দুরা কি ধরনের স্থাপত্য কীর্তি বানাতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বানিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মোদীজি। মুঘলরা তো ১৫২৬ সালে ভারতে এসেছিল। ওরা যদি তাজমহল, কুতুব মিনার বা লালকেল্লার মতো জিনিসগুলো না বানাতো তাহলে ভারতের হিন্দু রাজারা অনেক বড় বড় হিন্দু মন্দির বানানোর ক্ষমতা রাখতেন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি লালকেল্লা কুতুবমিনার এবং তাজমহল ভেঙে ফেলে মন্দির তৈরীর প্রকল্প হাতে নেন তাহলে মন্দির নির্মাণের জন্য কমপক্ষে তার দেড় বছরের বেতন দান করতেও প্রস্তুত।
কেন তাজমহল ভাঙতে উস্কানি ভাজপার
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান ভাজপাশাসিত কেন্দ্রীয় সরকার ভারত থেকে একের পর এক মুসলিম ইতিহাস এবং মুসলিম শাসকদের সঙ্গে জড়িত সমস্ত কিছু মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে। একদিকে যেমন উত্তর প্রদেশ সরকার এবং এন সি ই আর টি দেশের সিবিএসই এবং আই সি এস সি পাঠ্যক্রমে মুঘল ইতিহাস উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তেমনভাবেই ভারতের যেখানেই মুঘল শাসকদের নাম গন্ধ রয়েছে তা মুছে ফেলে অথবা প্রয়োজন হলে তাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে হিন্দুত্বের নয়া ইতিহাস লিখতে উদ্যোগী হয়েছে ভাজপা। কয়েকদিন আগেই অসমের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আহ্বান জানিয়েছিলেন, আমাদের প্রত্যেকের উচিত ভারতের হিন্দু সভ্যতার ইতিহাসকে চাপা দিয়ে যেভাবে মুসলিম শাসকদের মহান করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে ইতিহাসে সেই ইতিহাস বদলে ফেলে ভারতের নতুন ইতিহাস লেখার জন্য এগিয়ে আসা। অসমের ভাজপা বিধায়কের এই দাবী যে অমিত শাহের সেই তথাকথিত ভারতের নয়া ইতিহাস বা হিন্দুত্বের ইতিহাস লেখার আহ্বান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে আসা তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সকলের কাছেই।