রাজ্যের তিস্তা প্রকল্পে ঢাকার তীব্র সমালোচনা, মোদিকে নালিশ হাসিনার

0

Last Updated on March 17, 2023 6:51 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। তিস্তায় জলবিদ‍্যুৎ প্রকল্পের কথা শুরু হতেই মহা গাত্রদাহ শুরু বাংলাদেশের। উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন থমকে দিতে বাংলাকে টপকে একেবারে সরাসরি দিল্লির কাছে নালিশ শেখ হাসিনা সরকারের। উদ্দেশ‍্য একটাই, দার্জিলিঙে তিস্তা লো ড‍্যাম প্রজেক্ট আটকে দেওয়া। গোটা ঘটনায় বিরক্ত বিভিন্ন মহল। তারা বলছেন, প্রথমে পদ্মা আর এখন তিস্তা- বাংলাদেশ সব নদীকেই নিজেদের একার সম্পত্তি বলে মনে করতে শুরু করছে। তিস্তা উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশ দিয়ে প্রবাহিত। বাংলার অধিকার রয়েছে এই নদীর জল ব‍্যবহার করে উত্তরবঙ্গের তথা বাংলা এমনকি সামগ্রিক ভাবে দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো। বাংলাদেশের কি অধিকার রয়েছে এ ব‍্যাপারে হস্তক্ষেপ করার, একি মামাবাড়ির আবদার নাকি ! দিল্লির উচিৎ বাংলাদেশের প্রতিবাদের কড়া প্রত‍্যুত্তর দেওয়া।

জলবিদ‍্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা

বেশ কয়েক বছর ধরেই উত্তরবঙ্গের তিন জেলা দার্জিলিঙ, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে জলবিদ‍্যুৎ প্রকল্পের ব‍্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে রাজ‍্য সরকার। সম্প্রতি এ ব‍্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে তিনটি জলবিদ‍্যুৎ কেন্দ্র তৈরীর ব‍্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার মধ‍্যে দুটি জলবিদ‍্যুৎ কেন্দ্র হবে বড় রঙ্গীত নদীতে। সব মিলিয়ে ৭১ মেগা ওয়াট বিদ‍্যুৎ উৎপন্ন হবে। অন‍্য প্রকল্পটি হবে বালাসন এবং রঙভাঙ নদীতে। এই কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৩৮ মেগাওয়াট। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তরবঙ্গে জলবিদ‍্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রভুত গুরুত্ব রয়েছে। আগামী দিনে রাজ‍্যে শিল্প সম্ভবনা তৈরী হচ্ছে। উত্তরবঙ্গেও শিল্প আসছে। ফলে বিদ‍্যুতের চাহিদা বাড়বে। তাছাড়া কৃষিক্ষেত্রেও বিদ‍্যুতের প্রয়োজন। তাই আগে থেকে প্রস্তুতি থাকা ভালো। তাছাড়া, প্রয়োজনের তুলনায় বিদ‍্যুৎ উৎপাদন বেশী হলে বাড়তি বিদ‍্যুৎ রাজ‍্য অন‍্য বিদ‍্যু্ৎ সংস্থাকে বিক্রি করে আয় করতে পারবে। হাতের কাছে যখন সুযোগ রয়েছে তার সদ্ব‍্যবহার করাই শ্রেয়।

বাংলাদেশের আপত্তি

তিস্তার জল চাই বলে প্রায় এক দশক ধরেই লাফালাফি করছে ঢাকা। তিস্তায় জলবিদ‍্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে দার্জিলিঙে এই খবর পেয়েই রে রে করে উঠেছে তারা। বাংলাদেশের দাবি হল, জলবিদ‍্যুৎ প্রকল্প হলে তিস্তার জল কমে যাবে। ফলে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সে দেশে চাষবাসে অসুবিধা হবে কারণ তিস্তা থেকে জল পাওয়া যাবে না। তাই এই প্রকল্পে তাদের আপত্তি রয়েছে। এমনকি বিষয়টি তারা ইউএন-এ তুলবে বলেও প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। ইতিমধ‍্যেই ঢাকার প্রতিবাদ পত্র দিল্লি পৌঁছে গিয়েছে। যদিও ঢাকার এই আবদারে অবাক অনেকে। তারা বলছেন, প্রথমত, বাংলার এই প্রকল্পে বাধা দেওয়ার কোনও এক্তিয়ার নেই ঢাকার। সর্বোচ্চ তারা মমতাকে অনুরোধ করতে পারতেন। কিন্তু তা করে তারা ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে সোজা মোদির দরবারে হাজির হলেন। এতে বাংলাদেশের মাথাব‍্যথা আরও বাড়ল। বাংলাদেশের কূট কৌশল নিয়েও তাই প্রশ্ন থাকছে।

মোদির কাছে নালিশ

তিস্তার ওপর জলবিদ‍্যুৎ কেন্দ্র হবার কথা সংবাদমাধ‍্যমে প্রচারিত হবার পর তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক সন্মেলন করে ফেলেন বাংলাদেশ সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সেহেলা সাবরিন। তিনি জানান, বাংলাদেশের জলসম্পদ মন্ত্রক এবং জয়েন্ট রিভার কমিশনের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছে বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের কাছে এই প্রকল্পের ব‍্যাপারে আপত্তি জানাবে। ইতিমধ‍্যে চিঠিপত্র তৈরীও হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ মোদ্দা কথা হল মোদির কাছে নালিশ জানানো হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল, একটি সংবাদপত্রের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আদৌ কি সরকারি ভাবে প্রতিবাদ জানানো যায় ! এক্তিয়ারের কথা না হয় বাদ-ই দেওয়া গেল, পদ্ধতিগত ভাবেও তো বিষয়টি ত্রুটি যুক্ত। বিদেশমন্ত্রকের মত এত গুরুত্বপূর্ন দফতরের মুখপাত্রের এই বিচ‍্যুতি বিষ্ময়কর।

ভোটের ইস‍্যু তিস্তা

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যারা চর্চা করেন তারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে যাকে ইস‍্যু করে ময়দানে নামছে বিরোধীরা। যার মধ‍্যে অন‍্যতম হল তিস্তা জলবন্টন চুক্তি। চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের গোড়ায় বাংলাদেশে ভোট। তার আগে তিস্তা জলবন্টন চুক্তি চুড়ান্ত করতে মরিয়া শেখ হাসিনা। কিন্তু তিস্তায় জলবিদ‍্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের সেই আশায় জল ঢেলেছে। তাই মমতার ওপর চাপ বাড়াতে সরাসরি দিল্লি দরবার। যেহেতু কেন্দ্রে ভাজপা সরকার তাই বাংলাদেশ আশা করছে কেন্দ্র এই প্রকল্পের বিরোধীতা করবে অর্থাৎ মোদ্দা কথা হল উত্তরবঙ্গের উন্নতি আটকে দাও। সূত্রের খবর, চলতি বছরেই ভারত সফরের কথা রয়েছে হাসিনার। তার আগে চুড়ান্ত ফয়সালা চাইছে ঢাকা। কিন্তু এর পাল্টা অনেকে বলছেন, বাংলাদেশে সরকার নড়বড়ে তার জন‍্য তো আর পশ্চিমবঙ্গ দায়ী নয়। হাসিনা সরকারকে বাঁচাতে কেন বাংলার উন্নয়ন স্তব্ধ হবে! বাংলাদেশকে পানি দিতে গিয়ে উত্তরবঙ্গে শুকিয়ে কাঠ হবে তা তো হতে পারে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here