Last Updated on March 26, 2023 7:10 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। মোদি পদবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য এবং তার জেরে মানহানির মামলায় ২ বছরের জন্য কারাদণ্ডের সাজা পেয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। গুজরাটি আদালতে কারাদন্ডের সাজা শোনানোর পরে 24 ঘন্টা কাটতে না কাটতেই খারিজ হয়েছে লোকসভার সাংসদ পদও। বর্তমানে আর ওয়েনাডের সাংসদ নন রাহুল গান্ধী। সাংসদ পদ খোয়ানোর পরই এবার নিজের টুইটারের স্ট্যাটাস বদলে ফেললেন রাহুল গান্ধী। আজ সকালেই রাহুল গান্ধীর টুইটার হ্যান্ডেলে স্ট্যাটাসে সাংসদের জায়গায় লেখা হয় – বরখাস্ত হওয়া সাংসদ বা ডিস’কোয়ালিফাইড এমপি। শুধু রাহুল গান্ধীই নন, সাংসদ পদ খারিজের পর কংগ্রেসের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলেরও ছবি বদলে যায়। রাহুল গান্ধীর মুখের ছবি ও তাতে হিন্দিতে লেখা – ডরো মত।
বিস্ফোরক অভিযোগ প্রিয়াঙ্কার
রাহুল গান্ধীকে সাংসদ পদ থেকে বরখাস্ত করার পরে এবারে দেশজুড়ে জাতীয় কংগ্রেসের ঘোষণা করা সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রথম দিনেই ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রিয়াঙ্কা আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, এই দেশের প্রধানমন্ত্রী কাপুরুষ এবং অহংকারী। আপনি আমার বিরুদ্ধে যা খুশি মামলা করতে পারেন। আপনি আমাদের পরিবারকে লাগাতার অপমান করে চলেছেন। তারপরেও ভালবাসার বার্তা দিয়েছে রাহুল। আজ অবধি আমি অনেক চুপ থেকেছি।
সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি প্রায়শই রাহুল গান্ধী তথা গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে যে পরিবর্তনত্রে অভিযোগ আনেন সেই প্রসঙ্গ টেনে সরাসরি নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, আপনি যদি পরিবারবাদী বলেন তাহলে ভগবান রাম কে ছিলেন? ভগবান রামচন্দ্রকেও তো বনবাসে যেতে হয়েছিল। ওরা কি রামচন্দ্রকেও পরিবারবাদী বলবে? তিনি কি পরিবারবাদী ছিলেন? পাণ্ডবরা কি পরিবারবাদী ছিলেন? আমার পরিবারের সদস্যরা দেশের জন্যে শহীদ হয়েছেন, তার জন্যে কি আমার লজ্জিত হওয়া উচিত্? দেশের পতাকায় তাঁদের রক্ত লেগে। এই স্বাধীন ভূমিতে তাঁদের রক্ত রয়েছে। ভারতের গণতন্ত্র আমার পরিবারের রক্তে রচিত।
গান্ধী পরিবারকে অপমান ভাজপার পরম্পরা
জওহরলাল নেহেরু থেকে শুরু করে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী পর্যন্ত বিভিন্ন সময় গন্ধি পরিবারকে অপমান এবং গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা করাই ভারতীয় জনতা পার্টির চিরন্তন পরম্পরা বলে আজ অভিযোগ করেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ স্তরের ভাজপা নেতারা যে বংশপরম্পরায় গান্ধীদের অপমান করে চলেছে তা তুলে ধরে প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমার বাবাকে সংসদে অপমান করা হয়েছে। আমার দাদাকে মীর জাফর বলা হয়েছে। সংসদে আমার মাকে অপমান করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর চোখের সামনে। আপনার একজন মুখ্যমন্ত্রী বলে দিলেন, রাহুল গান্ধীর বাবার ঠিক নেই। অথচ তাঁর বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না। এক শহীদ প্রধানমন্ত্রীর পুত্র যিনি জাতীয় ঐক্যের জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটেছেন তিনি কখনই দেশকে অপমান করতে পারেন না
শুধু তাই নয় নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই সংসদে এবং সংসদের বাইরে যেভাবে রাহুল গান্ধীকে পাপ্পু বলে অপমান করা হয়েছে তারও জবাব দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, আমার দাদা হার্ভার্ড আর কেমব্রিজের মতো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ২ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা পেয়েছে। অথচ ওরা আমার দাদাকে পাপ্পু বলে। কিন্তু এবার ওরা ভালই টের পেয়েছে রাহুল পাপ্পু নয়, মানুষের সমস্যা বোঝে। তাই রাহুলকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে।
গুজরাতে আদালত চলে ভাজপার নির্দেশে
মোদি জমানায় দেশে বারে বারে বিচার ব্যবস্থার উপরে ভাজপার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। তবে এবারে গুজরাতের বিচার ব্যবস্থার উপরে গুজরাতের ভাজপা নেতাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ হিসেবে আজ সত্যাগ্রহের মঞ্চ থেকেই প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন, রাহুলের বিরুদ্ধে যে পূর্ণেশ মোদি ২০১৯ সালে কর্নাটকের জনসভায় রাখা বক্তব্য নিয়ে গুজরাতে আদালতে মামলা করেছিলেন, ১ বছর আগে তিনি আদালতে চিঠি দিয়ে মামলা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। আশ্চর্যজনকভাবে তার চিঠির পরেই সুরাতের আদালত মামলা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখে। কিন্তু রাহুল আদানিদের বিরুদ্ধে ভাষণ দেওয়ার পরই মামলাটি ফের খোলা হয়েছে। গোটা দেশে যখন আদালত গুলিতে লক্ষ লক্ষ মামলা শুনানির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে সেখানে বিচার ব্যবস্থাকেও কিভাবে দেশের অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থার মত নিজেদের আঙুলের ডগায় ভাজপা নেতারা নাচাচ্ছে তার প্রমাণ সুরাতের আদালত।
দেশজুড়ে সংকল্প সত্যাগ্রহের ডাক কংগ্রেসের
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংসদ হিসেবে রাহুল গান্ধীর অপসারনের পর প্রতিবাদ হিসেবে আজ সত্যাগ্রহ পালন করবে কংগ্রেস। সকাল ১০ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত চলবে এই সত্যাগ্রহ। দেশের নানা প্রান্তে অবস্থান বিক্ষোভ চলবে। পুলিশের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও সকাল থেকেই রাজঘাটে শুরু হয়েছে সংকল্প যাত্রা। রাজঘাটে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে জড়ো হয়েছেন জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। নানা প্রান্ত থেকে পৌঁছেছেন অন্যান্য কংগ্রেস নেতা এবং মন্ত্রীরা।
উপস্থিত রয়েছেন পি চিদাম্বরম, জয়রাম রমেশ, কেসি বেণুগোপালের মতো শীর্ষ নেতৃত্বরা।
খাড়গে বলেন, এই সত্যাগ্রহ শুধু আজকের জন্য কিন্তু এই ধরনের সত্যাগ্রহ সারা দেশে করা হবে। রাহুল গান্ধী সাধারণ মানুষের জন্য লড়ছেন। কর্ণাটকে মানহানির মামলা করার ক্ষমতা ভাজপার ছিল না।