মমতার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ শিরোপা ইউনেস্কোর

0

Last Updated on December 15, 2021 10:29 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। বাংলার দুর্গাপুজোকে আন্তর্জাতিক হেরিটেজ স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো। ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের তরফে আজ তাদের রিপ্রেজেন্টেটিভ লিস্ট অফ ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের তালিকায় স্থান দিয়েছে বাংলার সব থেকে বড় উৎসবকে। গোটা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এই প্রথম কোন মেলা ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক হেরিটেজ তালিকায় স্থান পেল। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বাংলা এবং বাঙ্গালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে এসেছেন মমতা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দুর্গাপুজোকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কলকাতায় তথা ভারতে বিভিন্ন দেশের অ্যাম্বাসাডর, কনসাল জেনারেল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানিয়ে কলকাতার রেড রোডে শুরু করেছিলেন দূর্গা পূজা কার্নিভাল। ইউনেস্কোর তরফে এই স্বীকৃতির জন্য তাই বড় ফ্যাক্টর হয়েছে রেড রোড দূর্গা পূজা কার্নিভাল। ধর্ম এবং শিল্পের মেলবন্ধনের জন্যেই সংস্কৃতিতে হেরিটেজ তকমা, বাধা দূর করে সবাই মিলিত হয় এই উৎসবে, দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দিয়ে জানাল ইউনেস্কো। এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বার্তায় দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবেল কালচার হেরিটেজ তথা অনুনভবনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেওয়ার কথা জানানো হয়।

দূর্গাপুজো ঘিরে কোনোদিনই বাঙালির আনন্দ, আবেগ বা উত্তেজনার শেষ নেই। স্বাভাবিকভাবেই সেই উত্তেজনার পারদ আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিল ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল সায়েন্টেফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন। বঙ্গ সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত দুর্গাপুজো। আজ ইউনেস্কোর তরফে ঘোষণা করা হয় যে, ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় বিশেষ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের সম্মান দেওয়া হয়েছে দুর্গাপুজোকে। ইউনেস্কোর তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, দুর্গাপুজো ধর্ম ও শিল্পের সর্বজনীন উদাহরণ। যা শিল্পীদের একটি সমৃদ্ধির ক্ষেত্রও বটে। কলকাতায় এই উৎসব বড় আকারে হলেও বাংলার প্রতিটি এলাকায় দুর্গা পুজো ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা কাজ করে। মণ্ডপের মাধ্যমেই পুজো চিহ্নিত হয়ে যায়। পুজোয় বাজানো হয় ঢোল। অনুষ্ঠানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অর্থাৎ বিভাজন উপেক্ষা করে, দর্শকরা ভিড় করেন মণ্ডপগুলিতে। এই উৎসবের শুরুতে গঙ্গার মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরীর থেকে শুরু করে গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন একটা জীবনচক্র তুলে ধরে উৎসবের মাধ্যমে।

দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় রাখার দাবি অনেকদিনের৷ মমতা অনেকবার কেন্দ্রের কাছে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ করেছেন৷ বিশ্ব জুড়ে এমন বহু আবেদন ইউনেস্কোর কাছে জমা পড়ে৷ এবারেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবেল কালচার হেরিটেজ তালিকায় স্বীকৃতির জন্য জমা পড়েছিল ৪৮ আবেদনপত্র। সেই আবেদনগুলি খতিয়ে দেখতে ১৩ ডিসেম্বর প্যারিসে বিশেষ অধিবেশনে বসেন ইউনেস্কোর আধিকারিকরা৷ সেই সব আবেদন খতিয়ে দেখার পরই বাঙালির দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ইউনেস্কো৷

বাংলায় প্রতি বছরই ধুমধাম করে পালিত হয় দুর্গাপুজো। পুজোর চারদিন অন্য আবেগে ভাসেন বাংলার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে দুর্গাপুজোয় প্রতিটি ক্লাবকে অর্থসাহায্য ও করে থাকেন রাজ্য সরকার। চলতি বছরে দুর্গাপুজোর আগেই দুর্গাপুজোকে আন্তর্জাতিক উৎসবের স্বীকৃতি ইউনেস্কোর কাছে আবেদন জানানোর দাবি তোলে রাজ্য সরকার। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানানোর বিষয়টিও সামনে আসে। এর আগে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ব্রাজিলের মতো দেশের উৎসবকে আন্তর্জাতিক উৎসবের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।

ইউনেস্কোর তালিকায় ভারতের উৎসব

ভারতের বিভিন্ন ঐতিহ্য আগেই ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০১০ সালে ছৌ, কালবেলিয়া এবং মুদিয়েত্তুকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো। ২০১৩ সালে মনিপুরের সংকীর্তনকে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। ২০১৪ সালে পঞ্জাবের পিতল ও তামার কারুকাজকে স্বীকৃতি গিয়েছিল ইউনেস্কো। ২০১৬-তে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল যোগা। আর ২০১৭ সালে কুম্ভ মেলা এই তালিকায় যুক্ত হয়। ২০২১ সালে যুক্ত হলো দুর্গাপুজো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here