Last Updated on August 9, 2023 5:48 PM by Khabar365Din
কালো চশমাধারী রাজ্যপাল সরকারের সমস্ত কাজ আটকে দিচ্ছেন উনি বরং বিজেপির হয় এবার ভোটে দাঁড়ান
৩৬৫ দিন। ঝাড়গ্ৰাম। বিজেপি কেন্দ্রের গদি ছাড়ো। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে ঝাড়গ্রাম থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের স্লোগান তুলে দিলেন মমতা।
বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আজ ঝাড়গ্রামের মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ইংরেজদের ভারত ছাড়া করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। কেন্দ্রের সরকার 7000 কোটি টাকা বকেয়া দিচ্ছে না। যাতে গরিবদের ভাতে মারা যায়। 100 দিনের টাকা ওরা দিচ্ছে না। দিল্লির মসনদে বসার অধিকারই নেই মোদী সরকারের। দেশকে টুকরো টুকরো করে দিতে চাইছে। নির্বাচন এলেই শুধু প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয়। বিজেপি তুমি দিল্লি ছাড়ো। মণিপুর জ্বলছে আর এদিকে কেন্দ্রের কোনও হেলদোল নেই। ১০০ দিনের কাজ দিচ্ছে না, আবাস যোজনার টাকা দিচ্ছে না। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে দলিতদের ওপর আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র কোনওকিছু নিয়েই ভাবছে না। দিল্লি, হরিয়ানা থেকে মানুষ ফিরে আসছে। বাংলার মানুষের ওপর অত্যাচার হচ্ছে।
তীব্র আক্রমণ পদ্মপালকে
কেন্দ্রে ভাজপা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেভাবে রাজ্যপালদের নির্বাচিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আগেও বারে বারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। বাংলার বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সম্প্রতি সাংবিধানের রীতিনীতি অমান্য করে রাজ্য সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন আজ তার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কাজ করব। আর উনি সবকিছু আটকে দেবেন। এটা বরদাস্ত করব না। এরপরই সরাসরি রাজ্যপালকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনার সত্সাহস থাকলে বিধানসভায় শিক্ষা সংক্রান্ত যে বিলটা তৈরি হয়েছে, সেটা পাশ করিয়ে দিন। তা না করে আপনি ছাত্রছাত্রীদের রাজভবনে ডেকে বলবেন, দাঙ্গা কাকে বলে, দুর্নীতি কাকে বলে। দাঙ্গা কাকে বলে? এটা রাজ্যপালের কাজ? না, রাজ্যপালের কাজটা সাংবিধানিক আসন। সংবিধানে তাঁর কাজ সীমাবন্ধ করা আছে। তিনি সবকিছু করতে পারেন না। গায়ের জোরে রাজ্যটাকে কিনে নিতে পারেন না তিনি। ওনার কাজ সংবিধানে লেখা রয়েছে। তার বাইরে বেরিয়ে গায়ের জোরে যা খুশি করা যাবে না। তেমন মনে হলে বিজেপির হয়ে ইলেকশনে দাঁড়ান। জিতে এসে দেখান। তবে ১০০ বছরেও হবে না। কারণ, ততদিনে বিজেপি দলটাই উঠে যাবে।
প্রসঙ্গত, ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কোনও উপাচার্য নেই। নেই রেজিস্ট্রারও। কৃতী পড়ুয়ারা সার্টিফিকেট পাচ্ছেন না। এ জন্য আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি জানি ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের গভর্নর মহাশয়, তিনি এখন কালো চশমা পরেন। সেটা অবশ্য তিনি পরতেই পারেন একটার জায়গায় দশটা, জ্ঞান দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমরা পাঠালেও সই করেননা। নিজের ইচ্ছামত কেরালা থেকে লোক এনে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। কেরালার অনেক বন্ধু আমার এখানে থাকে, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে ভিসি হতে গেলে ১০ বছর তাঁর প্রফেসর হিসাবে অভিজ্ঞতা থাকা উচিত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনকে ভিসি করেছেন যিনি কেরালায় আইপিএস ছিলেন, যাঁর এডুকেশনের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। এখানে ঝাড়গ্রাম ইউনিভার্সিটি করে দিয়েছি। কিন্তু না আছে কোনও উপাচার্য, না আছে কোনও রেজিস্ট্রার। তার কারণ পাঠালেই উনি উনি ওনার মত বিজেপির একটা লোককে বসিয়ে দেবেন।
ঝাড়গ্রামের উন্নয়নে ২৫০ কোটির প্রকল্প ঘোষণা
বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে আজ ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আদিবাসী রমণীদের সঙ্গে নাচে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের ঘোষণা করেন তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা আদিবাসী কায়দায় শাড়ি পরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এরপরই আদিবাসী মহিলাদের হাতে হাত রেখে তাঁদের তালে পা মেলান মমতা। নাচের ফাঁকেই আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরপর মঞ্চে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ধামসা-মাদল তুলে দেওয়া হয় বেশ কয়েকজনের হাতে। ধামসাও বাজান তিনি।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রতিবাদ
ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কেন কার্যকর করা হবে, ঝাড়গ্রামে গিয়ে আরও একবার সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হঠাত্ করে বলছে ইউনিফর্ম সিভিল কোড করতে হবে। মানে ওদের নিয়মে বিয়ে করতে হবে। কেন করবেন? আপনাদের তো বিয়ের কি সুন্দর একটা সিস্টেম আছে। আপনাদের জাহের থান আছে, মাজের থান আছে। আবার মুসলিম সম্প্রদায়ের বা হিন্দুদেরও বিয়ের আলাদা পদ্ধতি আছে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড করতে দেব না। যেমন আছে, সব তেমনই থাকবে। সবাই নিজের স্বাধীনতা মতো পোশাক পরবে, চলাফেরা করবে, পড়াশোনা করবে।
বাংলা-সহ তিন ভাষার ফর্মুলা
সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে বাংলা পড়তেই হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই বিষয়ে মমতা বলেন, তিন ভাষার ফর্মুলা, তারমধ্যে প্রথমে থাকবে বাংলা। অন্যদুটি ভাষা যার যেরকম পছন্দ নিতে পারে। কিন্তু প্রথম ভাষা হতে হবে রাজ্যের ভাষা। যাঁরা বাংলা মিডিয়ামে পড়ে তাঁদের প্রথম ভাষা বাংলা। আর দুটো তাঁরা যে কোনও ভাষা নিতে পারে। যারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অলচিকি মাধ্যমে পড়ে অলচিকি তাদের প্রথম ভাষা। পরে আরও দুটো ভাষা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। তেমন ভাবে যার প্রথম ভাষা রাজবংশী, নেপালি, তারাও একইভাবে পড়তে পারবে। বাংলায় আমরা বাস করি। তার মানে এটা নয় যে কারোর উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু মনে রাখতে হবে তিন ভাষার ফর্মুলা মাতৃভাষা থাকবে এক নম্বরে। বাকি দুটো বিষয় ছাত্ররা বেছে নেবে।