সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও রাজ্যপালরা বিল আটকে রাখছেন, প্রধান বিচারপতি সাফ জানালেন, ‘আবার বলছি বিল আটকাবেন না, রাজ্যপালদের এই অধিকার নেই’

0

Last Updated on November 20, 2023 7:40 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। রাজ্যপালরা সাম্প্রতিককালে ভুলে যাচ্ছেন তারা সাধারণ মানুষের ভোটের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। সাধারণ মানুষের ভোটের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি হয় রাজ্যের সরকার। সেই সরকার অথবা সেই সমস্ত জনপ্রতিনিধিরা যখন সংবিধানসম্মত ভাবে বিধানসভার অধিবেশনে বসে কোন বিল ভোটাভুটির ভিত্তিতে পাস করেন তা আদতে জনগণের সিদ্ধান্ত। নির্বাচিত না হয়ে মনোনীত কোন রাজ্যপালের হাতে ভারতের সংবিধান নির্বাচিত রাজ্য সরকারের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার দেয়নি। এভাবেই তীব্র ভর্ৎসনা করে কেরালা এবং তামিলনাড়ুর দুই ভাজপা নিয়ন্ত্রিত রাজ্যপালকে তাদের কাছে পড়ে থাকা বিল পাস করার নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

আম আদমি পার্টি শাসিত পাঞ্জাব সরকার এবং ডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ু সরকার তাদের রাজ্যে ভাজপা নিয়ন্ত্রিত রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সংকট তৈরীর চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দায়ের হয়েছিল মামলা।
একদিকে যেমন পাঞ্জাবে বিধানসভায় কোন বিল পাস হওয়ার আগেই একাধিক ক্ষেত্রে রাজ্যপাল নিজের ইচ্ছামত অর্ডন্যান্স জারি করে নিজের হাতে ক্ষমতা রাখার চেষ্টা করলেও সেই একই বিষয়ে যখন পাঞ্জাব সরকার বিধানসভায় বিল পাস করিয়েছে সেই বিল সই না করে দীর্ঘকাল ধরে ফেলে রেখেছেন রাজভবনের ঠান্ডা ঘরে। বিষয়টি জানার পরেই রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের প্রধান বিচারপতি পাঞ্জাবের রাজ্যপাল বানোয়ারী লাল পুরোহিত এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকেও লিখিত জবাবদিহি চেয়েছেন কোন অধিকারে পাঞ্জাবের রাজ্যপাল বিধানসভায় পাস হওয়া বিল আটকে রেখে দিয়েছেন।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অবিলম্বে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল টি এন রবিকে বিল পাস করার নির্দেশ দিলেও আবার নতুন করে রাজ্যপাল সমস্যা তৈরি করায় আজ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলনাড়ু সরকার।
রাজ্য সরকারের পাঠানো ১২ বিল আটকে রেখেছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। সুপ্রিম কোর্টের ধমকের পর কোনও কারণ উল্লেখ না করেই ১০ ফাইল ফেরত পাঠিয়েছেন তিনি। শনিবার ফেরত পাঠানো ওই বিলগুলি বিধানসভায় ফের পাশ হয়েছে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেন, রাজ্যপাল খেয়াল-খুশিমতো বিলগুলি ফেরত পাঠিয়েছেন। তাঁর এই ধরনের পদক্ষেপ অগণতান্ত্রিক ও জনবিরোধী। বিধানসভায় ফের এই বিলগুলি পাশ হয়ে গেলে রাজ্যপাল আর সেগুলি আটতে রাখতে পারবেন না। তাঁকে অনুমতি দিতেই হবে। রাজ্যপালের কাজই হল বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলগুলিতে প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া। রাজ্যপালের মাধ্যমে এভাবেই ভাজপা বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছে মোদি সরকার।

প্রসঙ্গত বাংলাতেও বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্য বিধানসভায় বেশ কয়েকটি বিল এখনো ফেলে রেখেছেন রাজভবনে।

আজ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে তামিলনাডু সরকারের আইনজীবী কে কে বেণুগোপাল জানান, গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পরেও ১০ বিল ফেরত পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল আর এন রবি। ফের ওই বিল বিধানসভায় পাশ করিয়ে তার কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওই কথা শুনে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, তিন বছর ধরে কী করছিলেন রাজ্যপাল? দেখা যাক নতুন করে পাঠানো বিল নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আগামী ১ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি।