Panchayet Vote 2023: হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী ঢুকবে, ১১৫ কোম্পানি ভাজপা পুলিশ বাংলায়, ফেরাউনের আশঙ্কা পুলিশরা সরাসরি বুথ দখলে নামবে

0

Last Updated on July 2, 2023 7:05 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। হাইকোর্ট অথবা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নয়, ভাজপার পরিকল্পনা মতো দেশের ভাজপাশাসিত রাজ্যগুলির পুলিশ আনার নির্দেশ দিল অমিত শাহের দপ্তর। যত বেশি সম্ভব ভাজপার ডবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্য উত্তর প্রদেশ অসম এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি থেকে বাছাই করা ভাজপা অনুগত পুলিশ বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি রাজ্য ভাজপা নেতৃত্বকেও নিশ্চিত করল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কলকাতা হাইকোর্ট এবং পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে দ্বিতীয় দফায় যে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী বার সিএপিএফ কে পাঠিয়েছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোতায়েন করার জন্য, আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তার মধ্য থেকে ৩১৫ কোম্পানি মঞ্জুর করার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এর মধ্যে মাত্র ২০০ কোম্পানি বাহিনী কেন্দ্রীয় বাহিনী হিসেবে স্বীকৃত এবং বাকি ১১৫ কোম্পানি আনা হচ্ছে মূলত দেশের ভাজপা শাসিত রাজ্যগুলি থেকেই। শুধুমাত্র ঝাড়খন্ড এবং বিহার ছাড়া যে ১২ রাজ্য থেকে সেখানকার পুলিশকে বাংলার পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে পাঠানো হচ্ছে সেই রাজ্যগুলির সরকার হয় ভাজপাশাসিত নইলে ভাজপার বন্ধু দল শাসিত।

কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আদালতের নির্দেশ

বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় আরো বেশি সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এমন নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরে সেখানেও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কেই মান্যতা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীদের জানিয়ে দেয় বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোতায়েন করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কেন্দ্রীয় বাহিনী বলতে বোঝায় বিএসএফ, সি আই এস এফ, সিআরপিএফ, আরপিএফ – ধরনের যে সমস্ত সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট করে সেই সমস্ত বাহিনীকে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার পরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে আগে যে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছিল তার সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে হবে বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য। তবে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার পরে মাত্র ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী আসার কথা জানার পরে আজ রাজ্য নির্বাচন কমিশন আবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাকি ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী অবিলম্বে পাঠানোর জন্য। কারণ হাইকোর্টের শুনানির সময় এবং সুপ্রিম কোর্টেও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বারে বারে বলা হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন যত বাহিনী চাইবে ততটাই বাহিনী দেওয়া হবে।

সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

কলকাতা হাইকোর্ট বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার জন্য যে নির্দেশ দিয়েছিল সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজো নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরে জানানো হয়েছিল যে পাঁচ ছয় রাজ্যের পুলিশ এনে বাংলার পঞ্চায়েত ভোট করতে প্রস্তুত রাজ্য সরকার। কিন্তু ভাজপার তরফে আইনজীবী হরিশ সালভে দাবি করেছিলেন অন্য রাজ্যের পুলিশ বাংলায় যাওয়ার তুলনায় কেন্দ্রীয় বাহিনী গেলে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে। তারপরেই ভাজপার আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট অন্য রাজ্যের পুলিশ না এনে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেল একদিকে যেমন কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অমান্য করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জমা দেওয়ার ইকুইজিশন অনুযায়ী 800 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর না পাঠিয়ে মাত্র 315 কোম্পানি তে বাহিনী পাঠানোর কথা জানানো হলো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে।

দ্বিতীয় তোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হল শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্দেশিকা অমান্য করে জুড়ে দেওয়া হল ভাজপাশাসিত ১০ রাজ্যের পুলিশ।
আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে, মোট ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে পাঠানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। এর মধ্যে ২০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে ৫০ কোম্পানি সিআরপিএফ, ৬০ কোম্পানি বিএসএফ, ২০ কোম্পানি আইটিবিপি, ২৫ কোম্পানি এসএসবি, ২০ কোম্পানি আরপিএফ এবং সি আই এস এফ ১৫ কোম্পানি। এর বাইরে ১২ রাজ্য থেকে স্পেশ্যাল আর্মড ফোর্স আসছে আরও ১১৫ কোম্পানি। যে রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে যোগী আদিত্যনাথ এর ট্রিগার হ্যাপি উত্তরপ্রদেশের পুলিশ, প্রতিবেশী ভাজপা শাসিত অসমের পুলিশ, সেই সঙ্গে রয়েছে ভাজপা শাসিত মেঘালয়, ত্রিপুরা, অরুনাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলি।

তৃণমূলের আশঙ্কা

তৃণমূলের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে যেভাবে অমিত শাহের দপ্তর কেন্দ্রীয় বাহিনীর নাম করে ভাজপাশাসিত রাজ্যের পুলিশ বাংলায় পাঠাচ্ছে সেখানে ভাজপা ড় সশস্ত্র গুন্ডাদের পুলিশের ইউনিফর্মে পাঠিয়ে বাংলায় বুথ দখলের ছক কষা হয়েছে কিনা!

বাহিনীর খরচ কেন্দ্রের

প্রসঙ্গত কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলায় যত পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে বাহিনী চাইবে তার জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে একটা পয়সাও নেওয়া যাবে না। সম্পূর্ণ খরচ বহন করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকার বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। বিগত যে কয়েকটি নির্বাচনে এই বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার জন্য ভাজপা জোরাজুরি করেছে এবং ভাজপার আবদারের আদালত সম্মতি জানিয়েছে সেই সমস্ত ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভাজপা সরকার শুধুমাত্র বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে কয়েকশো কোটি টাকা করে বিল পাঠিয়ে দিয়েছে নবান্নে। একদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর যাতায়াত এবং খাওয়া-দাওয়ার খরচ বহন করতে হচ্ছে বাংলাতে তার উপরে তাদের শুধুমাত্র বাংলায় মোতায়েন করা হচ্ছে বলে কয়েকশো কোটি টাকা বাংলার কোষাগার থেকে নেওয়ার যে পুরনো পরিকল্পনা ভাজপার ছিল তা এবারে ভেস্তে গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে।