জন্মদিনে সত্যজিৎকে মার্কিন উপহার, ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে রাস্তা, লাইভ শো

0

Last Updated on May 2, 2022 11:31 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। ক্যালিফোর্নিয়ায় বিখ্যাত ইউনিভার্শাল সিটিতে (Universal City, California) পা রাখলেই এবার সত্যজিৎ (Satyajit Ray)। সিনেমার মত সাজানো স্টুডিও সিটিতে সত্যজিতের নামে রে বে রোড। যে রাস্তা ধরে হাঁটতে গেলেই,  চোখের সামনে বিস্তীর্ন সাদা কাশের বন। কালো ধোঁয়া উড়িয়ে সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে কয়লার ইঞ্জিনের ট্রেন। আর প্রায় গা ঘেঁষে ছুটে বেরিয়ে গেল অপু,দুর্গা। কিংবা হটাৎ হুড়মুড়িয়ে ছুটন্ত উটের পিঠে চড়ে চোখের সামনে দিয়ে সাদা রুমাল বের করে নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে গেল ফেলুদা,তোপসে,জটায়ু। অন্যদিকে প্রায় কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল অর্জুনের ছুরি, পিছনে ডলবি ডিজিটাল সাউন্ডে,নাজুক নাজুক। আবছায়া অন্ধকারে বাঁশবন, নানা রঙের আলোর ঝিকিমিকিতে ভুতের রাজা, প্রায় শরীর ছুঁয়ে ডিজিটাল লাইভ ভুতদের নাচ। এ যেন লাইভ সত্যজিৎ। পর্দার চরিত্ররা লাইভ ডিজিটাল চোখের সামনে,থ্রিডি নয় সেভেন্থ ডি। এমন অভিনব ভাবনা ও প্রযুক্তি হলিউডের পক্ষেই সম্ভব। আর সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই কাজটাই করছে ইউনিভার্শাল পিকচার্স। 

একেই বলে প্রায়শ্চিত্ত।১৯৬৫ সালে সত্যজিতের এলিয়েন ছবি প্রযোজনা করার কথা ছিল তাদের। এর পরে কলম্বিয়া পিকচার্স এগিয়ে আসে ও ভারত যুক্তরাষ্ট্র যৌথ ছবি প্রযোজনা করার প্রস্তাব দেয়। প্রযোজক উইলসন এই চিত্রনাট্য কলম্বিয়াকে ১০ হাজার ডলারে বেচে দেয়। বঞ্চিত হন সত্যজিৎ। পরের ইটির অংশটি ইতিহাস। ৫৫ বছর পরে হয়ত সেই ঐতিহাসিক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছে হলিউড। সত্যজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হলিউডের বিখ্যাত ইউনিভার্শাল পিকচার্স তাদের ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত স্টুডিওতে সত্যজিতের নামে বে রোড (স্টুডিওর ভিতরে রাস্তা)ও গ্যালারি তৈরি করছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই প্রজেক্ট সম্পুর্ন হয়ে যাবে। এই পরিকল্পনার দায়িত্বে রয়েছেন দুই একাধিক অস্কারজয়ী বিখ্যাত পরিচালক ও সত্যজিৎভক্ত মার্টিন স্করসেস ও ফ্রান্সিস ফোর্ড কাপোলা। প্যান্ডামিকের আগেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল ইউনিভার্শাল । কিন্তু গত দু বছর আগে নেওয়া সিদ্ধান্ত পিছিয়ে গিয়েছিল মহামারীর কারণে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পরিচালক সত্যজিতের প্রতি শ্রদ্ধায় নতমস্তক হলিউড এবার আরও বড় করে তাঁকে সন্মান জানানোর কথা ভাবছে। শতাব্দী প্রাচীন  ইউনিভার্শাল পিকচার্স বিশাল করে বিষয়টা ভাবছে।সত্যজিতের বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য সিনেমাটিক ভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে দেখানো হবে।

সিঙ্গাপুরে ঠিক যে ভাবে তাদের স্টুডিওতে সেভেন্থ ডায়মেনশনাল ইলিউশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, বিশাল জাহাজ আগুনে পুড়ছে,জলে ডুবে যাচ্ছে কিংবা লরেন্স অফ আরবিয়ার সেই বিখ্যাত মরুভূমির যুদ্ধের দৃশ্য, অথবা জস ছবির হাঙরের আক্রমণের মুহূর্ত চোখের সামনে লাইভ দেখতে পান পর্যটকরা, ঠিক সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সত্যজিতের পথের পাঁচালী, সোনার কেল্লা কিংবা গুপী গায়েন বাঘা বায়েনে দৃশ্য তুলে ধরবে তারা। সিঙ্গাপুরে তাদের বিশাল স্টুডিও রয়েছে। যা পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। আমেরিকায় নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ায় এর প্রায় ১০০ গুন বড় স্টুডিও রয়েছে ইউনিভার্শাল স্টুডিওর (Universal Studios)। ইউনিভার্শাল সিটি নামে খ্যাত সেই স্টুডিওতে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ১০০ বছরের ইতিহাস ধরা আছে। চার্লি চ্যাপলিন থেকে হিচকক, স্ট্যানলি কুবরিক, উডি এলেন থেকে ফ্রাঙ্ক কাপরা, বার্গম্যান,কুরসওয়া পোলেনস্কি,ডেভিড লিন, ফেলিনি, আইজেন্সটাইন, জঁ লুক গদার, সার্জিও লেওনে, ডেভিড ফিঞ্চের থেকে মার্টিন স্করসিস, ক্রিস্টোফার নোলান, কে নেই সেই তারকামণ্ডলীতে। অভূতপূর্ব সাজানো সেটে ৪০ ও ৫০ এর দশকের বিখ্যাত কাউবয় টেক্সাস মুভির দৃশ্য থেকে বিখ্যাত বেন হার এর চ্যারিয়ট রেসের দৃশ্য কি নেই সেখানে। বিশ্ব ফিল্ম আর্কাইভে অনেক আগেই হলিউডের মোশন পিকচার্স সত্যজিৎকে সংরক্ষণ করছে। এটি তার নবতম সংযোজন বলা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here