The Kerala story: কেরলে আত্মঘাতী জঙ্গি মহিলা ৩২ হাজার নয় মাত্র ৩, রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

0

Last Updated on May 12, 2023 7:11 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। পুরি কেরালা সুইসাইড বোম্বারসকে পর ব্যাঠে হ্যায়। আইসিস নে কেরালা কো মুসলিম স্টেট বনানেকি প্ল্যান বানায়া হ্যায়। অর্থাৎ গোটা কেরালা আত্মঘাতী বা সুইসাইড বোম্বারদের ওপরে বসে রয়েছে। ‌ সিরিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের আইসিস জঙ্গিরা পরিকল্পনা বানিয়েছে কেরালাকে সম্পূর্ণভাবে মুসলিম রাজ্য বানানোর। প্রত্যেক বছর শুধুমাত্র কেরালার কমপক্ষে ৩২০০ মহিলাকে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে আত্মঘাতী জঙ্গি বানানো হচ্ছে। সেই হিসেবে শুধুমাত্র গত ১০ বছরেই কেরালা থেকে অন্তত ৩২০০০ মেয়েকে আফগানিস্তান এবং সিরিয়া পাঠিয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি বানানো হয়েছে। এমনটাই দাবি জানানো হয়েছে দ্য কেরালা স্টোরি ছবিতে। দ্য কেরালা স্টোরি ফিল্মটির নির্মাতারা দাবি করেছেন যে, বিগত ১০ বছরে, কেরলের ৩২ হাজার হিন্দু ও খ্রিস্টান মহিলা নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তাঁদের সিরিয়া ও আফগানিস্তানে পাচার করে আইএসআইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কাছে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়।

মিথ্যে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রচার গুজরাতি প্রযোজকের

দ্য কেরালা স্টোরিতে কেরালার বত্রিশ হাজার মেয়ে সিরিয়াতে আত্মঘাতী জঙ্গি হিসেবে যোগ দিয়েছে বলে দাবি করে যেভাবে গল্প বলা হয়েছে তা আদতে গোটাটাই মিথ্যে প্রোপাগান্ডার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে তথ্য ধরে ধরে প্রমাণ দিয়েছেন ফ্যাক্ট চেকার বলে পরিচিত ধ্রুব রাঠী। ধ্রুব যে তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন তার মধ্যে একেবারে প্রথমেই বলা হয়েছে,

১। কেরালা অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের কোন তথ্য এই ৩২ হাজার মহিলার আইসিস জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করে না। কেরালা হাইকোর্ট এবং পরবর্তীকালে সুপ্রিমকোর্টে ছবির ট্রেলার এবং মূল অংশে ৩২ হাজার মহিলার কথা কেন বলা হয়েছে তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ চালানো হলে ছবির প্রযোজক বিপুল শাহ এবং পরিচালক সুদীপ্ত সেন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন এই ছবিটি মাত্র তিনজন মহিলার ঘটনার উপরে তৈরি। ছবিটিকে বিশ্বাসযোগ্য দেখানোর জন্য ৩২ হাজার কথাটি ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপরে আদালতের নির্দেশে ৩২ হাজার সংখ্যাটি কেটে আবার তিন মহিলার গল্প বলে ট্রেলারে প্রকাশ করতে বাধ্য হন গুজরাটি প্রযোজক। সেই হিসেবে ধ্রুবর বক্তব্য ৩২ হাজার মহিলা শুধুমাত্র কেরল থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে সিরিয়ায় আইসিস জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে এই তথ্য সিনেমায় দেখতে পেলে সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই ভাববে কয়েক হাজার তো বটেই। নিদেন পক্ষে কয়েকশো হবে। কিন্তু আদতে সংখ্যাটি মাত্র ৩!

২। অমিত শাহের দপ্তর উড়িয়ে দিচ্ছে তথ্য

গুজরাতি প্রযোজক বিপুল শাহ এবং পরিচালক সুদীপ্ত সেন কেরালার রাজ্য সরকারকে বদনাম করার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে ভারতের মুসলিম সমাজকে ঘৃণিত ষড়যন্ত্রকারী দেখানোর জন্যে যেভাবে দেখিয়েছেন শুধুমাত্র কেরল থেকে গত ১০ বছরে কমপক্ষে ৩২ হাজার মহিলাকে ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করে সিরিয়ায় জঙ্গি সংগঠনে আত্মঘাতী জঙ্গি বানানো হয়েছে সেই তথ্য কষ্ট কল্পনা বলে আগেই সংসদে উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ভারত সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দেওয়া তথ্য ৩২ হাজার সংখ্যাটিকে সমর্থন করে না।

৩। ৩২০০০ বাস্তব হলে ব্যর্থ এনআইএ ও রং

কেরালা থেকে শুধুমাত্র গত ১০ বছরে ৩২ হাজার মেয়েকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে আফগানিস্তান এবং পরবর্তীকালে সিরিয়াতে আত্মঘাতী জঙ্গি বানানোর যে দাবি দ্য কেরালা স্টোরিতে করা হয়েছে তা যদি সত্যি বলে মেনে নিতে হয় তাহলে একেবারে প্রথমেই মেনে নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসন কালে এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন এনআইএ চূড়ান্ত ব্যর্থ নিজেদের কাজ করতে। চূড়ান্ত ব্যর্থ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র বা রিসার্চ এন্ড এনালিটিকাল উইং। কেন ব্যর্থ এই দুই সংস্থা? ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ২০১৬ সালে এনআইএ তাদের মোস্ট ওয়ান্টেড যে তালিকা প্রকাশ করে সেই তালিকায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে গোপন খোঁজ খবর নিয়ে যে তালিকা প্রকাশ করেছিল সেখানে কেরালা স্টোরিতে দেখানো তিন মহিলার নাম রয়েছে। কিন্তু মোট সংখ্যাটা সেখানে ছিল মাত্র কুড়িজন। যাদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ কর্ণাটক মধ্যপ্রদেশ সমস্ত রাজ্যের বাসিন্দারাই ছিল। সেইসঙ্গে এই কুড়ি জনের মধ্যে ছিল ছয় মহিলা। যাদের মধ্যে তিনজন জন্মসূত্রে মুসলিম, দুজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন এবং একজন মহিলা মাত্র হিন্দুত্ব ত্যাগ করে মুসলিম হয়েছিলেন।
তাহলে এনআই এ বা পৃথিবীর সমস্ত দেশে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার র যদি এর বেশি তথ্য জোগাড় করে উঠতে না পারে, সেখানে পরিচালক সুদীপ্ত সেন এবং গুজরাতি প্রযোজক বিপুল শাহ তাদের থেকে বেশি যোগ্য এমন সার্টিফিকেট কিভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

৪। সংখ্যায় কি বা যায় আসে!

শেক্সপিয়ার বলেছিলেন নামে কিবা যায় আসে! দ্য কেরালা স্টোরিতে দেখানো ৩২০০০ মহিলার মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার তথ্য নিয়ে যখন দেশ জুড়ে তীব্র বিতর্ক এবং প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে সেই সময় ছবির মুখ্য চরিত্র শালিনী উন্নি কৃষ্ণাণ এর ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেত্রী আদা শর্মা দাবি করেছেন, গল্পটা সত্যিই ভয়াবহ। কিন্তু সেটিকে প্রোপাগ্যান্ডা বলা বা হারিয়ে যাওয়া মহিলাদের কথা ভাবার আগে সংখ্যাটি নিয়ে বিতর্ক করা আরও ভয়াবহ। প্রতিক্রিয়াটা ঠিক উল্টো হওয়া উচিত। প্রথমে নিরুদ্দেশ মহিলাদের সম্পের্কে আলোচনা হওয়া উচিত ছিল। তারপর সংখ্যাটা নিয়ে ভাবা।
অন্যদিকে এই ছবির প্রযোজকের দাবি, ছবিতে দেওয়া ৩২০০০ সংখ্যাটি নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সে সম্পর্কে আমার বক্তব্য হল, বিষয়টির গুরুত্ব খাটো করছে ওই বিতর্ক।

৫। ছবি প্রযোজক এবং পরিচালক কেরাল থেকে ৩২০০০ মহিলার সিরিয়াতে গিয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার তথ্য কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যূতানন্দনের বক্তব্য থেকে পেয়েছেন বলে একটি দাবি করা হয়েছে। এই সম্পর্কিত যে ভিডিওটি ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে আশ্চর্যজনকভাবে সেই ভিডিওটি আপলোড করেছিল সানশাইন পিকচার্স নামে একটি সংস্থা। তার থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ হলো দ্য কেরালা স্টোরি ছবিটির প্রযোজক সংস্থার নামও সানশাইন পিকচারস।
অর্থাৎ কেরালায় হিন্দু মহিলাদের ব্রেন ওয়াশ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ তাদেরকে আত্মঘাতী জঙ্গি বানিয়ে সিরিয়ায় পাঠাচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের ব্রেনওয়াশ করার জন্য যে প্রোপাগান্ডা ছবিটি গুজরাতি প্রযোজক বানিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য ছবিটি সিনেমা হলে রিলিজ করার এক বছর আগে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ মানুষের ব্রেন ওয়াশ করার জন্য ভিডিও আপলোড করে জনমত তৈরির চেষ্টাও চালানো হয়েছে।