জাতীয় স্তরে প্রধান বিকল্প তৃণমূল, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, সোনিয়া-রাহুলের কংগ্রেস ভেঙে থাকবে মমতা কংগ্রেস

0

Last Updated on October 9, 2021 11:44 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশের কোন রাজ্যে সরকার গঠন করতে পারেনি ভারতের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। রাজ্য সরকার গঠন তো দূরের কথা স্থানীয় কোনো নির্বাচনেও উল্লেখযোগ্য জয় নেই কংগ্রেসের। তার উপরে বাংলা থেকে শুরু করে বিহার অথবা উত্তর প্রদেশ – যেখানে আঞ্চলিক দলের সংজ্ঞা কংগ্রেসের জোট বেঁধেছে সেই দল ব্যর্থতার মুখে পড়েছে বারে বারে। বাংলা এবং দিল্লি বিধানসভায় কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব পৌঁছেছে শূন্যে। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পরে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ভাজপা বিরোধিতার মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন মমতা। শুধুমাত্র বাংলায় সরকার গঠনের হ্যাটট্রিক নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও প্রতিটি ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট অধিবেশনে হোক অথবা রাস্তায় নেমে আন্দোলনের ক্ষেত্রে যেখানে কংগ্রেস নেতারা এয়ার কন্ডিশন্ড রুমে বসে আন্দোলন চালানোর পথ বেছে নিয়েছেন, তৃণমূল সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ভাজপা বিরোধিতায়। সামগ্রিকভাবে তার জন্যই জাতীয় রাজনীতিতে ভাজপা বিরোধিতায় প্রধান বিকল্প শক্তি হিসেবে মান্যতা পেয়েছে মমতার তৃণমূল।

কংগ্রেস বনাম তৃণমূল লড়াই

গোয়ার প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো এবং গোয়া কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব মমতার উপরে আস্থা রেখে তৃণমূলে যোগদান এর পর থেকেই অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে শুরু করেছে গান্ধী পরিবার। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলে যোগ দেওয়ার দিনেই বলেছিলেন, গোটা দেশে চারটি কংগ্রেসের মধ্যে এই মুহূর্তে তৃণমূল হলো প্রকৃত কংগ্রেস। ‌অর্থাৎ ঠিক যেভাবে ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস ছেড়ে বেড়িয়ে এসে ইন্দিরা কংগ্রেস তৈরি করেছিলেন এবং কালক্রমে সেই ইন্দিরা কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে গিয়েছে জাতীয় কংগ্রেস, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লড়াই এবং সাফল্যের মাপকাঠিতে তৃণমুলকেই প্রকৃত কংগ্রেস হিসেবে মান্যতা দিয়ে জাতীয় কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন একের পর এক প্রথম সারির নেতা ও নেত্রী।
কিছুদিন আগেই উত্তর-পূর্ব ভারতে কংগ্রেসের সবথেকে পরিচিত মুখ জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন এবং তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় সাংসদ হয়েছেন। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। কয়েকদিন আগেই মেঘালয়ের প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা কলকাতায় এসে অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করে তৃণমূলে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন মেঘালয়ের বাকি ১৩ কংগ্রেস বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে। যদিও শেষ মুহূর্তে দিল্লিতে তাঁকে ডেকে সোনিয়া এবং রাহুল কোনমতে বুঝিয়ে আপাতত তৃণমূলে যোগ দেওয়া থেকে নিরস্ত করেন।

কংগ্রেসের ভাঙ্গন রোধ করতে গতকাল হঠাৎ করেই তৃণমূলকে আক্রমণ করে ছত্রিশগড়ের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেন, কিছু মানুষ কংগ্রেসের এমন নেতাদের দলে টেনে জাতীয় বিকল্প হওয়ার চেষ্টা করছে, যাঁদের নিজেদের আসনেই জিততে পারেন না এবং চরম হতাশায় ভুগছেন৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জাতীয় স্তরে বিকল্প হয়ে উঠতে গেলে তার শিকড় অনেক গভীরে থাকতে হয় এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন৷ কোনও চটজলদি উপায়ে তা সম্ভব নয়। সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তরে তৃণমূলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে উত্তর দেওয়া হয়, প্রথম বারের একজন মুখ্যমন্ত্রীর থেকে বড় বড় কথা শোনা যাচ্ছে৷ নিজের ওজন না বুঝে কথা বললে সম্মান পাওয়া যায় না৷ হাইকম্যান্ডকে তুষ্ট করার কী বিশ্রী চেষ্টা৷ এর পরেই সরাসরি গত লোকসভা নির্বাচন রাহুল গান্ধীর পরাজয়ের প্রসঙ্গ টেনে এনে খোঁচা দিয়ে তৃণমূল লেখে, আমেঠিতে ঐতিহাসিক পরাজয়ের কথা মুছে দেওয়ার জন্য কি নতুন ট্যুইটার ট্রেন্ড শুরু করল কংগ্রেস? এর পাশাপাশি গতকাল ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের স্টিয়ারিং কমিটি ও যুব কমিটির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক বলেন, সিপিএম রাস্তায় নেই। মাঠে নেই। ভোটে নেই। কোথাও নেই। কার্যত বসে পড়েছে। কংগ্রেস অস্তিত্বহীন। রোজ চারটে করে রেজিগনেশন হচ্ছে। এক-দেড় পার্সেন্টের পার্টি হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস-সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা। বিজেপিকে তাড়াতে হলে তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে হবে।

একদিকে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের উত্থান এবং অন্যদিকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে গান্ধী পরিবারের নেতৃত্তের উপরে অনাস্থা দেখিয়ে জি ২৩ নেতাদের চিঠিতে অস্তিত্বহীনতার আতঙ্কে তড়িঘড়ি আগামী সপ্তাহেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক দেখে ফেলেছেন সোনিয়া গান্ধী। কারণ যেভাবে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা মমতাকে মোদি বিরোধী মুখ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রকাশ্যে এবং বাকি দুই কংগ্রেস শারদ পাওয়ারের এনসিপি এবং তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি মমতার উপরে আস্থা রাখছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে মমতার তৃণমূলের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়ে উঠছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here