Visva-Bharati: বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ বসন্ত উৎসবই করতেন

0

Last Updated on March 5, 2023 7:40 PM by Khabar365Din

রবীন্দ্রনাথ নাকি বসন্ত উৎসব চাননি। চেয়েছিলেন বসন্ত বন্দনা করতে। এমনটাই দাবি করেছেন রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অথচ গোটা পৃথিবীজুড়ে যেখানেই বাঙালি রয়েছে তাদের কাছে বসন্তকালে এই বসন্তের রঙে রেঙে ওঠার জন্য আজও দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে বসন্ত উৎসবে রবীন্দ্রনাথের গান এবং কবিতা অপরিহার্য হয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ নিজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে যে বসন্ত উৎসব পালন করতেন – তার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে রবীন্দ্রনাথের বহু লেখায়, চিঠিতে, ডায়েরির পাতার স্মৃতিকথায় এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের সাহচর্যে আশা তার স্নেহধন্য ব্যক্তিত্বদের লেখনীতে।

আসলে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঋতুভিত্তিক উৎসবের মাধ্যমে প্রকৃতি ও মানুষ এবং বিশ্বজগতের বন্ধন শান্তিপূর্ণ করতে চেয়েছেন। সেই কারণে শীতের সময় যেমন শান্তিনিকেতনের মেলার মাঠে আয়োজন করতেন পৌষ মেলা, ঠিক তেমনভাবেই শীতের শেষে বসন্তের আগমনকে আবাহন জানাতে শুরু করেছিলেন বা বলা ভালো উৎসাহ দিয়েছিলেন বসন্ত উৎসব আয়োজন করতে। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে কবে যেন বসন্ত উৎসব চুপিসাড়ে তার জায়গা করে নিয়েছে তা কেউ বুঝতেও পারেনি।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বসন্ত উৎসবের জায়গায় বসন্ত বন্দনা চালু করতে চেয়ে যে নির্দেশিকা জারি করেছেন – সেই বিষয় থেকে একটু যদি সরে যাই আমরা, সময়ের সরণী ধরে বেশ কিছু বছর যদি পিছনে চলে যাই তবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা কাব্য প্রবন্ধ এমনকি বহু চিঠিপত্রেও বারে বারে খুঁজে পাওয়া যায় বসন্ত উৎসবের বর্ণনা।

বসন্তের আগমনকে আবাহন জানাতে আবিরের রঙে রাঙানো শিক্ষার্থীদের নিয়ে সকলকে এই উৎসবের শামিল করতে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন –

ওরে গৃহবাসী খোল, দ্বার খোল, লাগল যে দোল।
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।
দ্বার খোল, দ্বার খোল।।

বিশ্বভারতীতে বসন্ত উৎসবের সূচনা

বাংলায় ১৩৩৮ সালে এমনই এক ফাল্গুন মাসের দোল পূর্ণিমায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, এ-বৎসর দোলপূর্ণিমা ফাল্গুন পার হয়ে চৈত্রে পৌঁছল। আমের মুকুল নিঃশেষিত, আমবাগানে মৌমাছির ভিড় নেই, পলাশ-ফোটার পালা ফুরল, গাছের তলায় শুকনো শিমূল তার শেষমধু পিঁপড়েদের বিলিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছে। কাঞ্চনশাখা প্রায় দেউলে, ঐশ্বর্যের অল্প কিছু বাকি। কেবল শালের বীথিকা ভরে উঠেছে মঞ্জরিতে। উৎসব-প্রভাতে আশ্রমকন্যারা ঋতুরাজের সিংহাসন প্রদক্ষিণ করলে এই পুষ্পিত শালের বনে, তার বল্কলে আবির মাখিয়ে দিলে, তার ছায়ায় রাখলে মাল্যপ্রদীপের অর্ঘ্য। চতুর্দশীর চাঁদ যখন অস্তদিগন্তে, প্রভাতের ললাটে যখন অরুণ-আবিরের তিলকরেখা ফুটে উঠল, তখন আমি এই ছন্দের নৈবেদ্য বসন্ত-উৎসবের বেদির জন্য রচনা করেছি।

দিলীপ কুমার দত্ত তাঁর প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ: উৎসব ও ভবন বইতে লিখেছেন, ১৩১৩ সালের ৫ই ফাল্গুন তারিখে শ্রীপঞ্চমীর দিন রবীন্দ্রনাথের কণিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে প্রথম বসন্তোৎসব উদযাপন করেন। .. সেই ১৩১৩ বঙ্গাব্দ থেকে শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসব পালিত হয়ে আসছে।

আবার রবীন্দ্রনাথের অন্যতম স্নেহধন্য তথা বাংলা সাহিত্যের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছোটগল্পকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, যাহাকে ঋতু উৎসব বলে তাহার প্রবর্তক হইতেছেন, রবীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠপুত্র শমীন্দ্রনাথ। ১৩১৩ সালের শ্রীপঞ্চমীর দিন তাহার উদ্যোগে এই ঋতু উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here