আইপিসি বদলে দন্ডসংহিতা, আসলে কাউ বয় লেজিসলেশন, বুদ্ধিবৃত্তি বহির্ভূত আইন মধ্যযুগীয় কঠোর স্বৈরাচারী, মমতার মতে আগাগোড়া গণতন্ত্র বিরোধী

0

Last Updated on November 14, 2023 9:48 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। বদলে যেতে চলেছে ভারতের যাবতীয় আইন কানুন ও বিচার ব্যবস্থা। দীর্ঘ ১৬০ বছর ধরে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে যে সমস্ত আইন কানুন অঙ্গাঙ্গে ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে এক নিমেষে তাকে বদলে ফেলতে চাইছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। গত বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম বিল আনে সরকার। বিল লোকসভায় পেশ করেই তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

 

 

লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশনের আগে নতুন প্রস্তাবিত তিন আইনের বিল এর প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন আপত্তি জানিয়ে 90 পৃষ্ঠার যে নোট জমা দিয়েছেন সেখানে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে মোদি সরকার 160 বছর ধরে প্রচলিত ভারতের আইন ব্যবস্থাকে বদলে ফেলে ভারতে কাউবয় লেজিসলেশন বা প্রচলিত সভ্য সমাজের বাইরে বসবাসকারী মধ্যযুগীয় কাউবয়দের মধ্যে প্রচলিত আইন প্রবর্তন করতে চাইছে।

 

 

কেন কাউবয় লেজিসলেশন ?

একদিকে যেমন সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে মামলার শুনানি চলে সত্ত্বেও যেমন ভাবে কেন্দ্রের মোদি সরকার সমকামিতা বা সমকামী বিবাহের সম্পর্ককে আইনের স্বীকৃতি দেওয়ার চরম বিরোধিতা করেছিল ঠিক তেমন ভাবেই সমকামিতাকে আরো একবার আইনি ফাঁসে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ।
২০১৮ সালে পরকীয়াকে ফৌজদারি অপরাধ নয় বলে ছাড় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশ উড়িয়ে পরকীয়াকে ফৌজদারি অপরাধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে দণ্ড সংহিতা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে। সরকারের ওই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল ভারতীয় দণ্ডবিধিতে পরকীয়া সংক্রান্ত ৪৯৭ ধারা অসংবিধানিক। এই ধারায় ছিল কোনও ব্যক্তি কোনও বিবাহিত মহিলার সঙ্গে তাঁর স্বামীর অনুমতি ছাড়া সম্পর্ক স্থাপন করলে ওই মহিলার পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা উভয়ই হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের তত্‍কালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, ব্রিটিশদের তৈরি করা এই আইন সেকেলে, একতরফা ও বৈষম্যমূলক। এই আইন মহিলাদের মর্যাদাকে খর্ব করে। ফলে ধারাটি বাতিল করে দেওয়া হয়।

 

 

বুদ্ধিবৃত্তি বহির্ভূত তাৎক্ষণিক বিচার ব্যবস্থা

শুধু তাই নয় স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তি ছাড়াই তাৎক্ষণিক হঠকারী বিচার ব্যবস্থা প্রচলন করার চেষ্টা চলছে প্রস্তাবিত এই ৩ আইন ও বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে। ব্রিটিশ আমলের ঔপনিবেশিক আইন বলে পরিচিত বর্তমানে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডকে বাতিল করার অছিলায় ১৬০ বছরের আইন বাতিল করে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় এই একবিংশ শতাব্দীতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে প্রাচীন বৈদিক যুগের প্রচলিত সামাজিক অনুশাসন মূলক আইন। যে সমস্ত কঠোর অনুশাসন সঠিক বুদ্ধিবৃত্তি বা যৌক্তিকতার ধার না ধরে আইন প্রবর্তনকারীদের ব্যক্তিগত বা আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে বর্তমান শাসক দল ভাজপার চালিকাশক্তি বলে স্বীকৃত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কঠোর এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী অনুশাসনকে আইনের স্বীকৃতি দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা এই ভারতীয় ন্যায় সংহিতা প্রবর্তন।

 

 

তীব্র প্রতিবাদ মমতার

পুজোর ঠিক আগেই কেন্দ্রের এইভাবে চুপিসারে দেশের যাবতীয় আইন কানুন এবং বিচারব্যবস্থাকে বদলে ফেলা ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার বিরোধী বলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সংসদে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদের কথা জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। গত ১১ অক্টোবর মমতা টুইট করে এই আইন বদলে ফেলার তীব্র সমালোচনা করে লেখেন, ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের প্রতিস্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তৈরি খসড়াগুলি পড়েছি। স্তম্ভিত হয়েছি, নীরবে অত্যন্ত কঠোর নাগরিক বিরোধী বিধান প্রবর্তনের একটি গুরুতর প্রচেষ্টা রয়েছে। আগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ছিল, এখন, এই বিধানগুলি প্রত্যাহারের নামে, তারা প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় আরও কঠোর এবং স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা প্রবর্তন করছে, যা নাগরিকদের আরও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বর্তমান আইনগুলি কেবল আকারে নয়, আত্মার মধ্যেও ঔপনিবেশিকতা মুক্ত হওয়া উচিত। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক অবদানের জন্য এই খসড়াগুলি গুরুত্ব সহকারে অধ্যয়ন করার জন্য দেশের আইনবিদ এবং জনসাধারণ কর্মীদের অনুরোধ করুন। সংসদে আমার সহকর্মীরা স্থায়ী কমিটিতে এই বিষয়গুলি উত্থাপন করবেন যখন এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে আইনের উন্নতি করা দরকার, কিন্তু ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ববাদকে দিল্লিতে পিছনের দরজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।