Last Updated on April 28, 2023 7:06 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। কলকাতা হাইকোর্টের নিয়োগ দুর্নীতির সমস্ত মামলা থেকে অপসারণ করা হলো বিচারপতি অভিজিত গাঙ্গুলিকে। আর কোন নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি করতে পারবেন না বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যতক্ষণ না নতুন কোন বিচারপতির বেঞ্চে এই মামলা স্থানান্তরিত হবে ততক্ষণ এই সমস্ত মামলার শুনানি করতে পারেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। আজ এই রায় দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। বিচারপতির কর্তব্য বহির্ভূত কাজ করে এই মামলার শোনার যাবতীয় অধিকার হারিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অবিলম্বে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা থেকে অপসারণ করুন। আজ কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে এই নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
কলকাতা হাইকোর্টে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর নামে আইন বহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছেন বলেও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন একাধিক আইনজীবী। সেই কারণেই গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে টিভি চ্যানেলে বসে বিচারাধীন বিষয় একের পর এক মন্তব্য করার পাশাপাশি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গ টেনে এনে তাকে রুল ইস্যু করে আদালতে ডেকে পাঠানোর হুঁশিয়ারিও টিভি চ্যানেলের স্টেজ থেকেই দিয়েছিলেন তিনি। এই বিষয়টি জানার পরে প্রথমে বিশ্বাস করতে না চাইলেও কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের কাছ থেকে লিখিত হলফনামা চেয়ে পাঠান দেশের প্রধান বিচারপতি।
আজ আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হওয়ার পরে সেই হলফনামা দেখে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পর্যবেক্ষণ, যেহেতু বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না কোনও বিচারপতি। তাই গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এবিপি আনন্দ টিভি চ্যানেলে নিজের এজলাসে বিচারাধীন থাকা বিষয় নিয়ে জাস্টিস গাঙ্গুলি সাক্ষাৎকার দেওয়ায় বেঞ্চ বদল করা হল নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার। টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের অনুবাদ খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত ভারতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার বেঞ্চ পরিবর্তনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে শুনানি চলাকালীন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনুসিংভি অভিযোগ করেন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় স্কুলে নিয়োগের দুর্নীতির মামলা শোনার সময় সেই মামলা নিয়ে টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, বিচারপতিরা কোনও ভাবেই তাঁদের বিচারাধীন বিষয় নিয়ে টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না। উনি যদি সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন, তা হলে তিনি ওই মামলা শোনার অধিকার হারিয়েছেন। তারপরই সেই সাক্ষাৎকারের অনুবাদ কপি হাইকোর্টের কাছে রি্পোর্ট চেয়ে পাঠায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আজ সলিসিটর জেনারেল বারে বারে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলীর অপসারণ এর বিরোধিতা করলেও তা কার্যত উড়িয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকরা খুব কঠিন দায়িত্ব পালন করেন। আমরা কেস পুনরায় বরাদ্দ করার জন্য জিজ্ঞাসা করছি একমাত্র কারণ হল ট্রান্সক্রিপ্ট – অন্য কোনও কারণ নেই। বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে নিয়োগ মামলার শুনানি থেকে সরাতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন কোনও বিচারপতি নিয়োগ করবেন।
কোন মামলায় অপসারিত জাস্টিস গাঙ্গুলী
সম্প্রতির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কুন্তল ঘোষের চিঠিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অভিষেকের নাম বলার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে আসার পরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা, এমনই পর্যবেক্ষণ ছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। এই মামলার প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলাতেই এই নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর কোচবিহারে দলীয় কর্মসূচির ফাঁকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই মামলায় আমি পিটিশনার ছিলাম। সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট সংক্রান্ত সমস্ত আদালতের মতকেই মর্যাদা দিয়ে চলি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের উপর ভরসা বরাবরই ছিল, আছে। গত ২৪ মাসে পশ্চিমবঙ্গের নানা বিষয়ে ইডি কিংবা সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে। আর তা চ্যালেঞ্জ করে আমরা যখনই গিয়েছি সুপ্রিম কোর্টে, তখন শীর্ষ আদালত তার বেশিরভাগই খারিজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেল ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য ব্যঙ্গাত্মক টুইট করেন, সত্যি সত্যিই “ঢাকি সমেত বিসর্জন” হয়ে গেল!
লক্ষণ গণ্ডির বাইরে দাঁড়ানো ভেকধারী রাবণকে সীতাও সাধু ভেবেছিল। সীতার ভুল ভেঙেছিল অপহৃত হওয়ার পর.. একই নিয়মে বাকিদেরও ভাঙবে।
লাল সেলাম। ভালো থাকবেন কমরেড।
ইতি, দেশের সংবিধানপ্রিয় এক নাগরিক।