Last Updated on September 27, 2021 2:50 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। একে একে সব নিভিছে দেউটি। কয়েকদিন আগেই আচমকা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের ভাজপা সংসদ বাবুল সুপ্রিয়। এবারে হুগলির ভাজপা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় আবার তৃণমূলে ফিরে আসতে পারেন বলে তৈরি হল নতুন জল্পনা। মূলত ভবানীপুর বিধানসভা উপ নির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে প্রচার এর জন্য ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে তারকা প্রচারকদের তালিকা বানিয়েছিল, সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে নাম ছিল বাবুল সুপ্রিয় এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয় আগেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন ভবানীপুরের ভাজপা প্রার্থীর সমর্থনে তিনি প্রচার করবেন না। পাশাপাশি আজ ভবানীপুর উপনির্বাচনের জন্য প্রচার এর শেষ দিন হলেও একদিনের জন্যেও ভাজপা প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে নামেননি হুগলির ভাজপা সাংসদ লকেট। ভাজপা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলার ভাজপা নেতৃত্তের ওপরে রীতিমতো ও ক্ষুব্ধ অপসারিত ভাজপা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত লকেট চট্টোপাধ্যায় ভবানীপুরের প্রচারে আসবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে।
কুনাল-লকেট টুইট
তার মধ্যেই আজ ভাজপার তারকা প্রচারক তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও লকেট মমতার বিরুদ্ধে প্রচার না করাই টুইট করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। টুইটে কুনাল লিখেছেন, ধন্যবাদ ও অভিনন্দন স্টার ক্যাম্পেনার লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ভবানীপুরে প্রচার না করার জন্য। বিজেপির বহু অনুরোধ সত্ত্বেও আপনি যাননি। একজন বন্ধু হিসেবে আপনার সাফল্য কামনা করছি। পৃথিবীটা খুবই ছোট। আশা করব, সেই দিনগুলি আবার ফিরে আসবে, যখন আপনি আপনার রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করেছিলেন। কুণালের এই ইঙ্গিতবাহী ট্যুইটের পরেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাংলার রাজনীতিতে। কারণ কুনালের টুইটে লকেটের রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিনগুলো বলতে বোঝানো হয়েছে মমতার হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে তৃণমূল নেত্রী হিসেবে লকেটের কাজ করার সময়ের কথা। তার উপরে কুনাল ঘোষ সরাসরি লকেটকে মেনশন করে এই টুইট করার পরেও বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না জানিয়ে লকেট পাল্টা টুইট করেন, এই মুহূর্তে আপনার বেশী মনোযোগ দেওয়া উচিত যেন ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন ভাবে পরাজিত না হন। যা স্বাভাবিকভাবেই লকেটের তৃণমূলে ফিরে আসার আগুনে ঘৃতাহুতি বলেই মনে করছে বাংলার রাজনৈতিক মহল।
অভিষেক ফ্যাক্টর
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকদিন আগেই প্রকাশ্য জনসভায় থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, বিজেপির বিধায়ক এবং সাংসদরা তৃণমূলে আসার জন্য লাইন দিয়ে রয়েছেন। তৃণমূল দরজা খুললে বিজেপি দলটাই বাংলা থেকে উঠে যাবে। বাবুলের তৃণমূলে যোগদানের দিনই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, খেলা তো সবে শুরু হল৷ আগামীতে আরও অনেক বড় চমক অপেক্ষা করছে।
ভাজপার বিরুদ্ধে লকেটের ক্ষোভ
মুকুল রায় তৃণমূল যাওয়ার পর থেকে যে সমস্ত নেতা-নেত্রীদের ভাজপা শিবিরে নিয়ে গিয়েছিলেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে মুকুল রায় তৃণমূল ফিরে আসার পর থেকে একে একে তাদের অনেকেই ফিরে আসতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই মুকুল রায় সহ ভাজপা থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ৪ বিধায়ক এবং আসানসোলের ভাজপা সংসদ বাবুল সুপ্রিয়। লকেট চট্টোপাধ্যায় হুগলি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেও একুশের নির্বাচনের কিছুদিন আগে থেকেই নব্য ভাজপা নেতাদের তাণ্ডবে কার্যত এক ঘরে হয়ে পড়েন দলের মধ্যেই। এরপরে আর অনিচ্ছাসত্ত্বেও হুগলী-চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় সাংসদ লকেটকে। থেকে যেভাবে আসানসোলের সংসদ থাকা সত্ত্বেও বাবুলকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছিল টালিগঞ্জে। কিন্তু ভোটের সময় দলের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা এবং ষড়যন্ত্র তাঁর পরাজয়ের কারণ বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন লকেট। এর পরেই ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে গত মে মাসে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান হুগলির ভাজপা সাংসদ। এরপর আরও দুটি ফ্যাক্টরে মূলত বাংলার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান লকেট। প্রথমত বাংলা থেকে লকেট কে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উত্তরাখণ্ডের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অন্যদিকে রাজ্য নেতাদের মধ্যে একমাত্র দিলীপ ঘোষের সঙ্গে লকেটের সুসম্পর্ক থাকলেও কয়েকদিন আগে দিলীপ ঘোষকে রাজ্য সভাপতি পদে অপসারিত করার পর নিজেকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে করতে থাকেন লকেট। কয়েকদিন আগেই লকেট তৃণমূলে ফিরে আসতে পারেন জল্পনা ছড়ানোর পরে ভাজপা সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা লকেটকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।