Shantiniketan Pous Mela : দেবেন ঠাকুর আর রবি ঠাকুরের প্রিয় পৌষ মেলা আবার বন্ধ করল ভাজপার দালাল উপাচার্য, বিকল্প পৌষ মেলা করে শ্রদ্ধা রাজ্য সরকারের

0

Last Updated on December 23, 2022 6:52 PM by Khabar365Din

সৌগত মন্ডল। খবর ৩৬৫ দিন।

দেখিয়ে দিলেন মমতা। বাংলা তথা বাঙালির ঐতিহ্য কিভাবে রক্ষা করতে হয় তা দেখিয়ে দিল মমতার সরকার। দেখিয়ে দিল কিভাবে বাংলা তথা বাঙালির গর্ব রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের পৌষ মেলা তৈরি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আয়োজন করতে না দিলেও তা সাড়ম্বরে এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করা যায়।


বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পৌষ মেলা নিজে আয়োজন করা তো দূরের কথা একশ বছরের বেশি সময় ধরে মেলার মাঠ বলে পরিচিত মারপিকে কংক্রিটের পাচিলে ঘিরে দিয়ে মেলা করার অনুমতি পর্যন্ত না দিলেও আজও সেখানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হলো বিকল্প পৌষ মেলা।


আজ ৭ পৌষ। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে এক পার্বণ আজকের দিনে। ‌ অন্তত গত প্রায় সোয়া একশো বছর ধরে তেমনটাই চলে এসেছে। কারণ শান্তিনিকেতন তৈরি হওয়ারও অনেক আগে আজকের দিনেই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪৩ সালের ৭ পৌষ শুরু করেছিলেন পৌষ উৎসব। যে উৎসব বাল্যকাল থেকে দেখে নিজের বিভিন্ন সাহিত্যে তুলে ধরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত সেই শান্তিনিকেতনের মেলার মাঠে পৌষ মেলা বন্ধ হয়ে গেল পরপর তিন বছর।

কারণ বিশ্বভারতীর মেলার মাঠে নাকি মদ খেয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় বিশ্বভারতীর হোস্টেলে থাকা শান্তিনিকেতনের ছাত্র-ছাত্রীরা – এমন অভিযোগ তুলে বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন বিশ্বভারতীর আর এস এস নিয়ন্ত্রিত উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তার জন্য নাকি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী স্থানীয় বাসিন্দা এবং রাজ্য প্রশাসনের বারংবার অনুরোধ এবং আবেদনেও তাই মেলার মাঠ মেলার জন্য ব্যবহার করতে দেননি।

উল্টে অধিকাংশ জায়গায় ঘিরে দিয়েছেন কংক্রিটের পাঁচিল দিয়ে। রীতিমতো বিবৃতি প্রকাশ করে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দাবি করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ নিজে বহিরাগত ছিলেন। মেলার মাঠের সামান্য একটি দোকান থেকে কখনও মদের বোতল, মেলার মাঠে ব্যবহার করা কন্ডোম, আবার কখনও গাঁজা পাওয়া যায়।

BJP এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত উপাচার্যের এই অসাধারণ তাল মিলের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির ১৩ পার্বণের মধ্যে থেকে শান্তিনিকেতনের মেলার মাঠে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৈরি করা পৌষ মেলা তার ঐতিহ্য হারালো বাঙালির কাছে। রবীন্দ্রনাথের তৈরি করা শান্তিনিকেতন এবং বিশ্বভারতীর উপাচার্যের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেল রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে প্রিয় মেলা।


রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখা থেকে এই জানা যায় ১৯১৮ সালে রানুকে লেখা তিনি একটি চিঠিতে পৌষ মেলা প্রসঙ্গে লিখছেন, “আমাদের এখানে মেলায় অন্তত দশ হাজার লোক ত হয়েই ছিল। তুমি লিখেছ একটি ছোট মেয়ে তার দিদির কাছে গিয়ে খুব চীৎকার করে তোমাদের সভা জমিয়ে তুলেছিল— আমাদের এখানকার মাঠে যা চীৎকার হয়েছিল তাতে কত রকমেরই আওয়াজ মিলেছিল, তার কি সংখ্যা ছিল? ছোট ছেলের কান্না, বড়দের হাঁকডাক, ডুগডুগির বাদ্য, গোরুর গাড়ির ক্যাঁচ্ ক্যাঁচ্, যাত্রার দলের চীৎকার, তুবড়ি বাজির সোঁ সোঁ, পটকার ফুট্ ফাট্, পুলিস্ চৌকিদারের হৈ হৈ, হাসি, কান্না, গান, চেঁচামেচি, ঝগড়া ইত্যাদি ইত্যাদি। ৭ই পৌষে মাঠে খুব বড় হাট বসেছিল।”


তবে রবীন্দ্রনাথের হৃদয়ের এত কাছাকাছি থাকা সেই পৌষ মেলা আজ তার ঐতিহ্য হারালো বিশ্বভারতীর উপাচার্যের খামখেয়ালী অথবা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। বস্তুত, বিদ‍্যুৎ চক্রবর্তী উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীকে RSS এবং ভাজপার আঁতুরঘরে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

যদিও বিশ্বভারতীর নিয়ম মেনে আইনত যাতে আঙ্গুল তোলা না যায় তার জন্য আজ সকালে বিশ্বভারতীর সদর দরজা বন্ধ রেখে নিজেদের পছন্দের কয়েকজন পেটোয়া লোকজনকে ডেকে একটা পৌষ উৎসবের নাকি আয়োজন করেছেন বিশ্বভারতীর ভাজপা নিয়ন্ত্রিত উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। যদিও জনসমক্ষেের আড়ালে হওয়া এই নিয়ম পালনের কর্মসূচিকে কতটা উৎসব বলা যায় তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশ্বভারতীর আশ্রমিকদের মধ্যেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here