Last Updated on October 23, 2022 6:35 PM by Khabar365Din
সৌগত মন্ডল। খবর ৩৬৫ দিন।
শিল্পের জন্য জমি। শিল্পের জন্য ল্যান্ড ব্যাংক।
বিষয়টি শুনতে একটু খটোমটো লাগলেও খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে যেমনভাবে নিজের গচ্ছিত টাকা ব্যাংকে রেখে প্রয়োজনমতো বিভিন্ন খাতে খরচ করা হয়, ঠিক তেমনভাবে কৃষির জন্য উর্বর বাদ বহু ফসলি জমি কে আলাদা চিহ্নিত করে অনুর্বর জমি গুলিকে জিআইএস ম্যাপিং এর সাহায্যে চিহ্নিতকরণ করে তার ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি করে রাখাকে বলা হয় ল্যান্ড ব্যাংক।
এই ল্যান্ড ব্যাঙ্ক এর সাহায্যে একদিকে যেমন কোন একটি জমির জন্য যখন কোন শিল্প সংস্থা আবেদন জানান তখন কম্পিউটারের স্ক্রিনেই তাঁকে দেখিয়ে দেওয়া সম্ভব সেই জমিটি ঠিক কোথায় অবস্থিত সেখান থেকে যাতায়াত করার জন্য কি কি সুযোগ সুবিধা রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিকাঠামো এমনকি সয়েল টেস্টিং রিপোর্ট পর্যন্ত আপলোড করা থাকে কোন একটি জমির ক্ষেত্রে।
ঠিক এভাবেই উলুবেরিয়ায় লজিস্টিক হাব হরিণঘাটায় ফ্লিপকার্টের জন্য জমি দেওয়া অথবা জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, খড়্গপুরের বিশাল বিশাল এলাকায় টাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থাকে কয়েকশো একর করে জমি দেওয়া গিয়েছে কোন হইচই না করেই। আবার পুরুলিয়াতে কয়েক হাজার একর জমি এক সঙ্গে নিয়ে তৈরি হচ্ছে জঙ্গল সুন্দরী টাউনশিপ। কিন্তু কোথাও কৃষকদের কাছ থেকে কৃষির উপযোগী উর্বর জমি অধিগ্রহণ করা অথবা গায়ের জোরে কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়া অথবা চাষের জমি নির ফসল নষ্ট করে সেই জমির শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার কোন প্রয়োজন সাম্প্রতিক অতীতে বাংলায় ঘটেনি। এর কারণ হলো মমতা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে রাজ্যজুড়ে তৈরি করেছেন অনুর্বর জমির ল্যান্ড ব্যাংক।
মমতার ল্যান্ড ব্যাংকে স্বীকৃতি সুপ্রিম কোর্টের
হুগলির সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে জমি কেড়ে নেওয়ার যেমন বিরোধিতা করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা, ঠিক তেমনভাবেই বারে বারে দিনের সরকারি ভাবে প্রস্তাব দিয়ে এসেছিলেন রাজ্যের যে সমস্ত অনুর্বর এলাকার রয়েছে অথবা রারবঙ্গের যে সমস্ত এলাকায় হাজার হাজার একর জমিতে চাষবাস করা সম্ভব হয় না, সেখানে এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন করে শিল্পপতিদের হাতে জমি তুলে দেওয়া হোক শিল্পায়নের জন্য। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভে বাংলার তৎকালীন শাসক দল সিপিএম মমতার সেই প্রস্তাবে কর্ণপাত করার প্রয়োজন বোধ করেনি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা চলার পরে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক মমতার এই জমিনের দিকেই স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের মতো কৃষি প্রধান দেশে শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের জন্য।
শিল্পায়নের জন্য ল্যান্ড ব্যাংকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অথবা এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও তাই বাংলার এই ল্যান্ড ব্যাংক পলিসি মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
২০১১ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশকের শাসনে বাংলার অর্থনীতি যে তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছিল তাকে তুলে ধরার জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশী শিল্পপতি এবং বিনিয়োগকারীদের বাংলায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মমতা।
পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন জায়গায় শিল্পায়ন এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা কোথায় কোথায় রয়েছে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার জন্য বছর কয়েক আগে গিয়েছিলেন ইউরোপ সফরে। সেখানেই লন্ডন চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে আয়োজিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত কটি দেশের বাণিজ্য এবং শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় পরামর্শদাতা যে থিংক ট্যাংক কমিটি বা থিংক ব্যাংক-৪০ রয়েছে তারা প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে প্রথমে বাংলার তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ডক্টর অমিত মিত্র এবং পরে মমতার বক্তব্য শোনেন।
বিশেষ করে ভারতের মতো একটি দেশের অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি কিভাবে আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে মিশিয়ে শিল্পের জন্য পৃথক জমি চিহ্নিত করে সেগুলির জিআইএস ম্যাপিং করার পরে শিল্পপতিদের জন্য কার্যত ডিনার টেবিলে প্লেট সাজিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন শুনে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই থিংক ট্যাঙ্ক ৪০ সদস্যদের মধ্যে সেদিনের অডিটোরিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ পর্যন্ত। মমতার বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে কেমব্রিজ স্কুল অফ ইকোনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপকরা পর্যন্ত অডিটরিয়ামের গ্যালারিতে উঠে দাঁড়িয়ে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে।