Last Updated on June 18, 2021 1:22 AM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। প্রত্যাশিতভাবেই নন্দীগ্রামের ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন মমতা। ভোট গণনা কেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসার নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে মমতাকে বিজয়ী ঘোষণা করার পরে হঠাৎ করেই যেভাবে ভোটের ফলাফল বললে দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন, তার বিরুদ্ধে আগেই কমিশনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। এবারে কলকাতা হাইকোর্টে আগামীকাল বিচারপতি কৌশিক চন্দর এজলাসে এই মামলার শুনানি হবে। মমতার পক্ষ থেকে আইনজীবী সঞ্জয় বসু কলকাতা হাইকোর্টের কাছে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে ইলেকশন পিটিশন দায়ের করার পরেই তার শুনানিতে রাজি হয় কলকাতা হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, প্রথমবারে নন্দীগ্রামের গণনা কেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসার মমতাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করার প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে হঠাৎ করেই ঘোষণা করা হয় তাদের সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। নন্দীগ্রামে নাকি ১৯৫৬ ভোটে হেরেছেন মমতা। জিতেছেন শুভেন্দু অধিকারী। গোটা রাজ্যে তৃণমূল বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও নন্দীগ্রামের ফল উল্টো হওয়ায় বিস্মিত হয়েছিলেন মমতা নিজেও। বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিন ২ মে তিনি জানিয়েছিলেন, গোটা রাজ্যের থেকে আলাদা রায় দিল নন্দীগ্রাম, এটা হতে পারে না। আমি আদালতে যাব। কারণ আমার কাছে খবর আছে, ভোটের ফল ঘোষণার পর কারচুপি হয়েছে। সেটা খুঁজে বের করব।
গান পয়েন্টে ফলাফল বদল
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে আচমকাই মমতার পরিবর্তে নির্বাচন কমিশন শুভেন্দু অধিকারীকে নন্দীগ্রাম থেকে বিজয়ী ঘোষনা করার পরে মমতা একটি মেসেজ দেখিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন। সাংবাদিকদের সামনে মোবাইলে একটি মেসেজ দেখিয়ে তিনি বলেন, এক জনের কাছ থেকে এসএমএস পেয়েছি। নন্দীগ্রামের এক রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন, গান পয়েন্টের মুখে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি যদি পুনর্গণনার নির্দেশ দেন, তাহলে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে। নন্দীগ্রামে মেশিন পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ৮ হাজারের উপর এগিয়ে থাকার মার্জিন এক নিমেষে কী করে শূন্য হয়ে যায়? ইচ্ছা করে সার্ভার ডাউন করে রাখা হয়েছিল। না হলে সারা বাংলার এমন ফলাফল, আর নন্দীগ্রামে আলাদা ফল কী ভাবে হয়?
ইভিএম কেলেঙ্কারি
নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে রাজ্য প্রশাসনের হাতে নিয়ন্ত্রণ আসার পরে ভাজপা এবং কমিশনের পেটোয়া আধিকারিকদের সরানোর কয়েকদিনের মধ্যে নন্দীগ্রাম বিধানসভার গণনা না হওয়া ভোট ভর্তি ইভিএমের তালা ভাঙ্গা বাক্স উদ্ধার হয়। ভোট গ্রহণ হয়ে যাওয়ার পরে কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে ইভিএম সরিয়ে ফেলার যে অভিযোগ উঠেছিল প্রাথমিকভাবে তার প্রমাণ মিলল। নন্দীগ্রামে মমতাকে হারানোর জন্য ভাজপা এবং শুভেন্দু অধিকারী একের পর এক ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন করেছিলেন তা আগেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছিল। হলদিয়ার গণনা কেন্দ্র থেকে তালা খোলা ট্রাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয় কমপক্ষে ১০-১২ টি ইভিএম। সবকটি ইভিএম নন্দীগ্রাম বিধানসভার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সামসাবাদ এলাকার বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের তৎপরতায় হলদিয়া গণনা কেন্দ্রে থেকে স্ট্রং রুমের নথিপত্র স্থানান্তরের সময় নন্দীগ্রামের ইভিএম ভর্তি একটি ট্রাঙ্ক তালা বিহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ সেগুলিকে বাজেয়াপ্ত করে। প্রশ্ন উঠেছে, যে ট্রাঙ্কে ইভিএম রয়েছে সেটি তালা খোলা অবস্থায় কেন থাকবে? তাহলে কি ইভিএম বদলে ফেলা হয়েছিল গণনার সময়। পরে প্রশাসনিক নির্দেশে এই ভোট ভোট গণনার না হওয়া ইভিএমগুলি সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই প্রতিটি বিষয়ে এবারে হাইকোর্টে শুনানির সময় তোলা হবে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয় নন্দীগ্রামের প্রতিটি ইভিএম হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে পুনর্গণনার দাবি জানানো হবে বলেও জানা গিয়েছে।