Last Updated on November 1, 2021 10:54 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করেছে। দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করছে। অন্যদের দোষারোপ না করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হয় নিজেদের ঘর পোক্ত করুন, না হলে যাদের লড়াইয়ের ক্ষমতা ও ইচ্ছা রয়েছে তাদের জায়গা ছেড়ে দিন। এভাবেই কংগ্রেসের সম্পর্কে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মমতা। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সংগঠন বিস্তারের দিকে নজর দিয়েছে তৃণমূল। বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যেও সংগঠন বিস্তারের মন দেওয়ার পরেই অসম থেকে গোয়া – একের পরে এক রাজ্যে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা যোগ দিতে শুরু করেছেন তৃণমূলে। তৃণমুলকেই প্রকৃত কংগ্রেস এবং ভাজপা বিরোধী শক্তি বলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করার দাবি তুলেছেন বহু কংগ্রেস নেতা। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমুলকেই আক্রমণের নিশানা বানিয়েছে। আজ কলকাতায় কালী পুজো উদ্বোধন করতে গিয়ে মমতা কংগ্রেসের সম্পর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ভাজপা বিরোধী লড়াইয়ে তৃণমূলের স্ট্র্যাটেজি ব্যাখ্যা করেন।
প্রতারণা করেছে কংগ্রেস
মমতা বলেন, কংগ্রেসের বর্তমানে নেতৃত্ব উপরে উপরে বিজেপির বিরোধিতা করবে আর মাঝখানে সমঝোতা করবে। তাই এদের উপর কোনওভাবেই নির্ভর করা যাবে না। আমি বিজেপিকে জায়গা ছেড়ে দিতে পারি না। তাই আমাদেরই দেশের সর্বত্র যেতে হচ্ছে। কংগ্রেস যতই ফোঁস-ফাঁস করুক. বাংলায় আমাদের বিরুদ্ধে সব আসনে লড়বে, আর আমরা অন্য জায়গায় ওদের সমর্থন করে চলব! কী করে আশা করে? সব জায়গায় একই নীতি খাটবে, আলাদা নয়৷ এক সময় কংগ্রেস করতাম৷ কেন ছেড়ে চলে এসেছিলাম জানেন৷ কারণ ওরা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে৷ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে! অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি৷ মানুষ আমাদের সাহায্য করেছেন ৷ মানুষের সাহায্যে পরপর তিনবার সরকার গড়তে পেরেছি৷ এখানে কংগ্রেসকে সাহায্যই করেছিলাম আমরা৷ সরকার গড়ার পর একসঙ্গে কাজ করতেও ডেকেছিলাম৷ কিন্তু মাঝপথে ওরাই হাত ছেড়ে চলে যায়৷ রোজ রোজ গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছিল বলেই ইউপিএ ছেড়েছিলাম৷ কাউকে না কাউকে, কখনও তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে! আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাই পদত্যাগ করে চলে আসি৷ ওরা পারে না৷ তাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু সিপিএমের হাত ধরে৷ ন্যূনতম প্রকল্পের আওতায় আমরা এনডিএ-র সঙ্গে সরকার গড়েছিলাম৷ কিন্তু বলে রেখেছিলাম, অন্য ধর্মকে আঘাত করা যাবে না। সিদ্ধান্তহীনতার পাশাপাশি ভাজপার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা৷ সম্প্রতি তিনি গোয়ায় থাকাকালীনই সেখানে দলের হয়ে প্রচারে যান রাহুল৷ সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেস কোনও লড়াই করেছে? শুধু নির্বাচন এলে বড় বড় কথা৷ সব জায়গায় যেতে বাধ্য হচ্ছি আমরা৷ কারণ কংগ্রেসের উপর নির্ভর করা যাবে না৷ ওরা আপস করে, আমরা করি না৷ মরে গেলেও বিজেপিকে শক্তি বাড়াতে দেব না আমরা৷ আসলে সমাজে দু’ধরনের মানুষ হয়, না খেতে পেলেও মাথা নীচু করে না এক দল – বরাভয়, নির্ভয়৷ এদের সাহসী বলে৷ আর এক ধরনের মানুষ থাকে, যারা ইহা-উহা দু’দিকেই আছে৷ উপর উপর বিরোধিতা৷ ভিতরে ভিতরে বোঝাপড়া৷ তাই বছরের পর বছর বিজেপিকে ছেড়ে গিয়েছে কংগ্রেস৷ তাই আমাদের ছুটতে হচ্ছে।
গোয়ায় রাহুল গান্ধী প্রসঙ্গে
গোয়া সফরের প্রসঙ্গ টেনে নাম না করে রাহুলকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, যারা পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের দাম বাড়ায়, ত্রিপুরায় গেলে মাথা ফাটায়, অসম-উত্তরপ্রদেশে ঢুকতে দেয় না, তাদের বিদায় দিতে হবে৷ গোয়ায় আমাকে কালো পতাকা দেখাচ্ছিল৷ আমাদের ব্যানার ছিড়ে দিয়েছিল, কালি মাখিয়েছিল৷ আমাকে দেখে গো ব্যাক স্লোগানও দিচ্ছিল কয়েকজন৷ আমি কিন্তু নমস্কার জানিয়েছি। আর মনে মনে বলেছি, আমি যাব না, তোমাদের বিদায় দেব৷ একটি বাজারের কাছে কয়েক জন মূর্তিমান দাঁড়িয়েছিল৷ আমাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাবে বলে পুলিশ গাড়ি ঘোরাতে চাইছিল৷ কিন্তু আমি ঘোরাতে দিইনি৷ অথচ অন্য এক নেতা বিরাট কনভয় নিয়ে ওই সময়ই গোয়া গেলেন৷ তাঁকে ঘিরে কোনও বিক্ষোভ হল না৷ কোনও কালো পতাকা দেখানো হল না তাঁকে।
তৃণমূলের আক্রমণ কংগ্রেসকে
মমতার পাশাপাশি আজ তৃণমূলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে লেখা হয়েছে, কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব বিজেপির সবচেয়ে বড় বীমা! ২০০১ সাল থেকে বাংলায় আমরা লড়াই করছি এবং বিজেপিকে সাফল্যের সঙ্গে পরাজিত করেছি। অন্যকে দোষারোপের আগে কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে নিজেদের ঘর পোক্ত করুক, নয়তো এই লড়াইয়ে জাতীয়স্তরে যাদের ইচ্ছা রয়েছে ও সক্ষম তাদের জায়গা দিক।