Last Updated on June 22, 2023 7:39 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় হিউয়েন সাং থেকে শুরু করে মেগাস্থিনিস – প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে উল্লেখ করেছেন কিভাবে ভারতীয় শ্রেষ্ঠী বা সওদাগররা সিল্ক রুট ধরে বা সমুদ্র পথে জাহাজে চেপে কখনো পারস্য সম্রাটের দরবারে আবার কখনোবা রোমান সম্রাটদের দরবারে পসরা সাজিয়ে যেতেন বাণিজ্যের জন্য। সেই সমস্ত দেশে সম্রাটদের খুশি করে বাণিজ্যের অনুমতি পাওয়ার জন্য ভারতীয় বণিকরা বা বেনিয়ারা ভেট হিসেবে নিয়ে যেতেন ভারতের দুর্মূল্য চন্দন কাঠ, দক্ষিণ ভারতের খনি থেকে পাওয়া হিরে, ঢাকাই মসলিন এবং বিভিন্ন রকম বহুমূল্য মসলা পাতি। গুজরাতের শ্রেষ্ঠ বণিকরা বরাবর হিরে পালিশ এবং কাটিং করতে দক্ষ হওয়ায় গুজরাটি বেনিয়াদের ভেট দেওয়া হীরে ভীষণ পছন্দ করতেন পারস্যের সম্রাটরা।
সেই ট্রাডিশন সমানে চলিতেছে! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির বাসভবন হোয়াইট হাউসে নৈশ ভোজের আমন্ত্রণ পেয়ে আপ্লুত হয়ে এবং অবশ্যই মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ও রাষ্ট্রপতি পত্নী জিল বাইডেনকে খুশি করার জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও রীতিমতো পসরা সাজিয়ে নিয়ে গেলেন ভেট দেওয়ার জন্য।
কি কি ভেট দিলেন মোদি?
সে এক এলাহি ব্যাপার! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দশটি উপহার দিয়েছেন। বৈদিক মতে কোন দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য নাকি দশ দান করতে হতো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দেবতারজ্ঞানে মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে ১০ দান ১০ বহুমূল্য ভেট দিয়ে সন্তুষ্ট করলেন বলেই তীব্র ব্যঙ্গ করেছে প্রবাসী ভারতীয়দের একাংশ। মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে নিজে হাতে সবুজ হিরে তুলে দিলেন মোদি। সবুজ হিরেটি প্যাপিয়ে ম্যাশে নামক একটি বিশেষ বাক্সে ছিল। এই বাক্সটি কাশ্মীরে কার-এ-কলমদানি নামে পরিচিত। দক্ষ শিল্পীরা এই প্যাপিয়ে ম্যাশে তৈরি করেছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি বিশেষ চন্দনকাঠের বাক্স উপহার দিয়েছেন তিনি। রাজস্থানের জয়পুরের শিল্পীরা এটি হাতে খোদাই করেছেন। চন্দনকাঠ সংগ্রহ করা হয়েছে কর্ণাটকের মহীশুর থেকে। ওই বাক্সে সিদ্ধিদাতা গণেশের মূর্তি রয়েছে। কলকাতার একটি পরিবারের পঞ্চম প্রজন্মের কারিগর এই মূর্তিটি তৈরি করে দিয়েছেন। একটি প্রদীপও রয়েছে বাক্সে। সেটি রুপোর তৈরি। এটিও কলকাতার ওই রুপোর কারিগরের হাতে গড়া বলে জানা গিয়েছে।

রিটার্ন গিফট কি পেলেন মোদি?
মোদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কেন া এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ানে বোঝাই করে বিপুল টাকা মূল্যের এই সমস্ত ভেট মার্কিন রাষ্ট্রপতি এবং তার স্ত্রীর জন্য বয়ে নিয়ে গেলেও মোটামুটি খালি হাতেই ফিরতে হবে তাঁকে। কারণ হোয়াইট হাউসে বাইডেন এবং তার স্ত্রী রিটার্ন গিফট হিসেবে মোদিকে দিয়েছেন গোটা দুয়েক বই একটি পুরনো ক্যামেরা এবং একটি ছবির পুরনো প্রিন্ট। জিল বাইডেন দিয়েছেন কবি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা সংকলনের প্রথম সংস্করণ, বাইডেন দিয়েছেন কোডাক ক্যামেরায় তোলা একটি ছবির দুষ্প্রাপ্য প্রিন্ট এবং নিজের লেখা একটি বই।
কেন দুষ্প্রাপ্য ও বহুমূল্য সবুজ হিরে?
মার্কিন রাষ্ট্রপতির স্ত্রীকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে সবুজ হিরে ভেট হিসেবে দিয়েছেন তা কোহিনুর মানের না হলেও দুষ্প্রাপ্য এবং বহু মূল্য।
জিল বাইডেনকে দেওয়া সবুজ রঙের হিরেটি ল্যাবরেটরিতে তৈরি। এর ওজন 7.5 ক্যারাট। ভারতের স্বাধীনতার 75 বছর উদযাপিত হচ্ছে। হিরের ওজনের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি হলেও খনি থেকে উত্তোলিত হিরের মতোই আলোক বিচ্ছুরণ করে গবেষণাগারে তৈরি হিরেটি। মাটির তলা থেকে তুলে আনা হিরের সঙ্গে এই কৃত্রিম হিরের ধর্মে কোনও পার্থক্য নেই। পাশাপাশি ফার্স্ট লেডিকে দেওয়া হিরেটি পরিবেশবান্ধব। সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই বিশেষ হিরেটি তৈরি বলে জানা গিয়েছে। সবুজ হিরেটি প্যাপিয়ে ম্যাশে নামক একটি বিশেষ বাক্সে ছিল। এই বাক্সটি কাশ্মীরে কার-এ-কলমদানি নামে পরিচিত। দক্ষ শিল্পীরা এই প্যাপিয়ে ম্যাশে তৈরি করেছেন।

গোটা পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক সংস্থা বা হীরে ব্যবসায়ী এই দুর্মূল্য এবং দুষ্প্রাপ্য সবুজ হিরে তৈরি করে। পৃথিবীতে এই মুহূর্তে সবুজ হিরে ল্যাবরেটরীতে তৈরি করার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে জেমস অ্যালেন। সাড়ে সাত ক্যারেটের সবুজ হিরে নেওয়ার মতো ক্রেতা পৃথিবীতে খুব কম থাকায় তাদের ক্যাটালগে এত দামি হীরের সঠিক দাম দেওয়া হয় না। তবে সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে বাইডেন পত্নীকে উপহার দেওয়া সবুজ হীরের মানে এবং ক্যারেট অনুযায়ী খরচ পড়তে পারে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় 25 কোটি টাকার মত। যদিও একদিকে যেমন মোদির নিজের রাজ্য গুজরাতে হিরে ব্যবসায়ীদের রমরমা এবং এবারের বাজেটেও হিরে ব্যবসায়ীদের জন্য বিপুল ছাড় ঘোষণা করেছেন মোদি সেখানে তার পক্ষে এমন হিরে যোগাড় করা খুব একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। তার উপরে বিশ্বের হিরে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রথম সারির ব্যবসায়ী নীরব মোদী বা মেহুল চোস্কিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বা ভাজপা নেতাদের দহরম মহরমের কথাও খুব একটা অজানা নয়।
কেন বাইডেনকে খুশি করতে মরিয়া মোদি?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রথম কোন ভারতীয় রাজনীতিবিদ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ হয়েছিল গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। কাকতালীয়ভাবে হলেও সত্যি যে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার নির্দেশ নামায় যিনি সই করেছিলেন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন। এমনকি বাইডেন যে নির্বাচনে জিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদে বসেছিলেন সেই নির্বাচনের ঠিক আগে মার্কিন সফরে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে বাইডেনকে হারানোর শপথ নিয়ে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্লোগান তুলেছিলেন – আব কি বার ট্রাম্প সরকার! যা বিশ্বের ইতিহাসেও নজিরবিহীন বটে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাইডেন যখন রাষ্ট্রপতি তখন তাকে খুশি করার জন্য ভেট নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন তো পড়বেই।