বিরোধীদের দমাতে মোদি আদালত কে ব্যবহার করছেন

0

Last Updated on March 30, 2023 6:46 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ করা নিয়ে এবার প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মোদি সরকার। দ‍্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জার্মান সরকারের বিবৃতি,সর্বত্র আদালতের রায় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। দেশের বিচার ব‍্যবস্থা হাতের মুঠোয় করছেন মোদি- বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই অভিযোগ বিগত কয়েক বছর ধরে করে আসছে। আদালতের রায়ে দোষি সাব‍্যস্ত হবার অব‍্যবহিত পরেই যে ভাবে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হল তা নিয়ে সমালোচনার ঝড়। মোদি অমিত শাহদের নির্দেশে কেন্দ্রীয় এজেন্সি যখন বিরোধীদের ভয় দেখানো, হেনস্থা করা, ব‍্যক্তিগত ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তখন আদালতের ভুমিকা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। এবার সেই একই প্রশ্ন তুলল দ‍্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে সরাসরি বলা হয়েছে বিরোধীদের শায়েস্তা করতে মোদি বিচার বিভাগকে আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে আদালতকে ব‍্যবহার করছেন। বিচারপতিদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে রায়কে প্রভাবিত করছেন।

প্রসঙ্গ রাহুল

কোর্টকে মোদি বা ভাজপা কি ভাবে ব‍্যবহার করছেন তার উদাহরণ দিতে গিয়ে সাম্প্রতিক রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি জমানায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আদালত যে রায় দিচ্ছে তা অত‍্যন্ত বিতর্কিত এবং যা নিয়ে অবশ‍্যম্ভাবীভাবে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ রয়েছে। একতরফা রায়ে দেখা যাচ্ছে বিশেষ রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী সুবিধা পাচ্ছে, যা বিচার ব‍্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় জাগাচ্ছে, যেমন রাহুলের মামলায় যে রায় দেওয়া হয়েছে তাকে রাজনৈতিক ভাবে ব‍্যবহার করেছে ভাজপা, সুতরাং আদালতের রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দ‍্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনেই নয় রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের প্রক্রিয়া নিয়ে ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জার্মান সরকার। জার্মানির বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রাহুল ইস‍্যুতে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, আদালতের রায় চ‍্যালেঞ্জ করে মামলা হলে বোঝা যাবে আদালতের পূর্ববর্তী রায় যথাযথ ছিল কি না এবং পার্লামেন্ট থেকে বরখাস্ত করার কোনও ভিত্তি ছিল কি না। আশা করব বিচার বিভাগ স্বাধীন ভাবে কাজ করবে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নীতি মানা হবে।

বিচারপতিদের ভুমিকা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি সরকারের বিচারপতিদের ওপর চাপ সৃষ্টির অন‍্যতম কৌশল হল বিনিময় প্রথা। যে বিচারপতিদের রায় ভাজপা, তাদের জোটসঙ্গী বা কেন্দ্রীয় সরকারকে সুবিধা করে দিচ্ছে অবসরের পর সেই সব বিচারপতিদের-ই দেখা যাচ্ছে রাজ‍্যসভার সদস‍্য পদ পেতে, গুরুত্বপূর্ণ কমিশনের মাথায় বসতে কিংবা কোনও রাজ‍্যের রাজ‍্যপাল হতে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে এই দুয়ের মধ‍্যে কোনও পূর্বাপর সম্পর্ক রয়েছে কি না ? যেখানে পক্ষপাতিত্ব করলে পর্বতপ্রমাণ প্রলোভন রয়েছে সেখানে বিচারপতিরা আদৌও নিরপেক্ষ থাকতে পারছেন কি না ? উল্টোদিকে যে বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছেন তাদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা প্রকাশ‍্যে তাদের আক্রমণ করছেন ফলে এই ভয়ের পরিবেশে নিরপেক্ষ থাকা অত‍্যন্ত কঠিন বলে প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

ইন্দিরার চেয়েও ভয়ঙ্কর মোদি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০’র দশকে ইন্দিরা গান্ধি সরকারের একের পর এক নীতির বিরুদ্ধে যখন বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন তখন ইন্দিরা দমনমূলক নীতি নিয়েছিলেন। জরুরী অবস্থা জারি করে বিরোধীদের জেলে পুরেছিলেন। যার ফল হয়েছিল উল্টো। প্রবল জনপ্রিয় ইন্দিরাকে নির্বাচনে হেরে প্রধানমন্ত্রীত্ব খোয়াতে হয়েছিল। মোদি কিন্তু সেই ভুল করছেন না। মোদির দমন নীতি ইন্দিরার মত স্থূল নয়। তিনি সূক্ষ্মভাবে বিরোধীদের শায়েস্তার কৌশল নিয়েছেন। আর এর জন‍্য তাঁর প্রয়োজন বিচার ব‍্যবস্থাকে হাতে রাখা। ভারতের মহান গণতন্ত্রের খোলনচে এক রেখে ভেতরে ভেতরে তার সব কটি স্তম্ভের দখল নিতে চান মোদি, এই দিক থেকে তিনি ইন্দিরার চেয়েও ভয়ঙ্কর কৌশলী।