মােদিষাসুরমর্দিনী

0

Last Updated on May 2, 2021 10:22 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। বহিরাগতরা বাংলা চালাবে না। গুজরাত এবং উত্তর প্রদেশের নেতাদের হাতে বাংলার শাসন কোনোভাবেই যাবেনা বলে আগেই ঘোষণা করেছিলেন মমতা। বহিরাগত নেতাদের এনে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ যেভাবে বাংলা দখলের জন্য দিল্লি থেকে প্রায় ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছিলেন গত মাস দুয়েক ধরে, তার জবাবে একা মমতা ২১৯ আসনে জিতে তৃতীয়বারের জন্য বাংলায় সরকার গঠন নিশ্চিত করলেন।
তবে এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে মমতার প্রত্যাবর্তন কিন্তু বাঙালির এবং বাংলার সংস্কৃতি এবং আত্মগরিমা রক্ষার জন্য বাংলার মানুষের রায়। ভাজপা যেভাবে হিন্দু মুসলমান, মতুয়া নমঃশূদ্র রাজবংশী ভোট ভাগাভাগি করে বাংলাতেও উত্তর প্রদেশ এবং গুজরাটের মত ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতি আমদানি করতে চেয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ সপাটে থাপ্পড় মেরেছে। এই অপচেষ্টায় রাজভবন থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি দপ্তরকে শামিল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
পাশাপাশি মমতার বিরোধিতা করে ভাজপার হাত শক্ত করতে গিয়ে এই প্রথম বাংলা রাজনীতি থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল সিপিএম এবং কংগ্রেস। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলার যে ২৯২ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল তার মধ্যে একটিও আসন জিততে পারেনি সিপিএম এবং কংগ্রেস। তবে একুশের বাংলার বিধানসভা নির্বাচন শুধুমাত্র বাংলার সরকার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে বাংলার প্রকারের নির্বাচনের ফলাফল সুদুরপ্রসারী গুরুত্ব রয়েছে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দিনের পর দিন বাংলায় নির্বাচনী প্রচার নয়, মমতার বিরুদ্ধে এবারের মোদি লড়াইতে নামিয়েছিলেন দেশের সমস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সি এবং প্রতিটি সাংবিধানিক সংস্থাকে। সেই সঙ্গে দেশের অন্তত ১৩ ভাজপা শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও দিনের পর দিন বাংলা প্রতিটি প্রান্তে গিয়ে নির্বাচনী প্রচার করে গিয়েছেন।
ভাজপার কুখ্যাত আইটি সেল, সোশ্যাল মিডিয়া টিম এবং সর্বোপরি নরেন্দ্র মোদির নিজে যেভাবে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় ব্যক্তিগত কুৎসা করে গিয়েছেন, তা যে বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই পরিপূরক নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলার মানুষ। সেই সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নজরুলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে সংস্কৃতি তাকেও কলুষিত করার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ভাজপা নেতারা।
পাশাপাশি রয়েছে বাংলার প্রতিটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্বেও মমতার উদ্দেশ্যে মোদির অশালীন দিদি ও দিদি – ডাক। যার বিরুদ্ধে এবারে একচেটিয়াভাবে ভাজপাকে বাংলা থেকে বিতাড়িত করার জন্য মমতার উপরই আস্থা রেখেছেন বাংলার মহিলারা।
গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ১৮ আসন জেতার পরে ভাজপা নেতারা একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন এবারে বিধানসভায় তারা নাকি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করবেন। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বাংলার প্রায় ১২১ বিধানসভা কেন্দ্রে ভাজপার লিড থাকলেও অতিরিক্ত আত্মসন্তুষ্টি এবং তৃণমূল থেকে একের পর এক দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের নিজেদের দলের প্রার্থী করা কার্যত আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়ায় ভাজপার পক্ষে। তাই এবারে বাংলায় ২০০ আসনের বেশি জিতবে বলে কার্যত নিশ্চিত ভাজপা কলকাতায় নিজেদের দলীয় অফিসে বিভিন্ন হাইটেক ব্যবস্থা করে রেখেছিল জয়ের করে দলের নেতাদের সেখানে এনে সংবাদমাধ্যমের সামনে বিবৃতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিধি বাম। ফলাফলের ট্রেন্ড তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে পড়ার পরেই কার্যত সুড়সুড় করে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা এড়িয়ে কার্যত লুকিয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেন ভাজপা নেতারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here