Last Updated on April 14, 2023 7:49 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। মুম্বই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট যেকোনো মামলায় আদালতের কাছে পি এম এল এ আইনে মামলা করার অনুমতি চায় এবং তারপরে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেই তাকে দিনের পর দিন যে কোন ভাবে হেফাজতে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করে। গ্রেপ্তার হওয়ার পরে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনের আবেদন করলে আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আইনজীবী এবং তদন্তকারীরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই জামিনের বিরোধিতা করতে লেগে পড়েন। এমনকি তদন্তে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি না হলেও শুধুমাত্র প্রভাবশালী তত্ত্ব অথবা রহস্য সমাধানের খুব কাছাকাছি আছি – ধরনের কিছু বক্তব্য রেখে জামিনের বিরোধিতা করে যায়। কিন্তু আদালত যখনই জামিন মঞ্জুর না করে অভিযুক্তকে হেফাজতে রাখার অনুমতি দেয় তারপরে দিনের পর দিন মাসের পর মাস দেখা যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র তদন্তকারীরা তদন্তের অগ্রগতি কিভাবে হবে সেই বিষয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। এমনকি কোন মামলা শুরু করার পরে অথবা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পরে যে সেই মামলাটি তদন্ত শেষ করে বিচার প্রক্রিয়ার শুরু করতে হবে সেই বিষয়েও বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন তাঁরা। এমনই বিস্ফোরক পর্যবেক্ষণ লিখিতভাবে জানালো, মুম্বাইয়ের বিশেষ পি এম এল এ আদালত। ইয়েস ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ডিরেক্টর রানা কাপুরের জামিনের আবেদনের শুনানি চলাকালীন মুম্বাইয়ের বিশেষ পি এম এল এ আদালতের বিচারক রানা কাপুরকে একটি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন।
তবে আরও একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকায় জেল থেকে মুক্তি হবে না ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা রানা কাপুরের।
বেছে বেছে গ্রেফতার কেন?
ইয়েস ব্যাংকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে হেফাজতে থাকা রানা কাপুর ছাড়াও একই অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যাংকের আরও চার ডিরেক্টর। এখানেই বিচারক প্রশ্ন তুলেছেন, একই মামলায় একই ধারায় এবং সমান পদাধিকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা শুধুমাত্র বেছে বেছে একজনকেই কেন গ্রেফতার করল? বাকিরা যেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে তাদের কি কোন বিশেষ কারণে ছেড়ে রাখা হয়েছে? সমান অপরাধে অপরাধীদের বা অভিযুক্তদের মধ্যে থেকে বেছে বেছে গ্রেফতার করলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সম্পর্কে দেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত গোটা দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সিবিআই এর বিরুদ্ধে বাজ পা জমানায় ঠিক এভাবেই একই অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক রঙ দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে দেশের প্রত্যেকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল। এমনকি সম্প্রতি তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্র সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের রীতিমতো পোস্টার দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বা বাংলার ভাজপা নেতা শুভেন্দু অধিকারী কে বিরোধী দলে থাকার সময় ঘুষ নেওয়া এবং চিটফান্ড কাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও ভাজ পাতে যোগদান করার পরে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কোনরকম তদন্তের আওতায় না এসেই। অথচ তাদের সঙ্গে একই মামলায় অভিযুক্ত বিরোধী দলের নেতাদের অধিকাংশকেই গ্রেফতার করে দিনের পর দিন হেফাজতে রেখে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গুলি।
গ্রেপ্তারে আগ্রহী হলেও তদন্তে আগ্রহী নয় সিবিআই
মুম্বাইয়ের বিশেষ পিএমএলএ আদালতের বিচারক এমজি দেশ পান্ডে তীব্র ভর্ৎসনা করেন আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকেও। তিনি বলেন সিবিআই যেভাবে কোন মামলা হাতে পাওয়ার পরেই গ্রেফতার করতে শুরু করে এবং হেফাজতে রেখে দেওয়ার পরে অদ্ভুতভাবে সেই তদন্ত কার্যত বন্ধই করে রেখে দেয়। মাসের পর মাস অথবা বছরের পর বছর মামলা চললেও সেবিআই সেই তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায় না। এই ধরনের ঘটনার ফলেই দেশে ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।