RRR Oscar: আরআরআর যতই অস্কার জিতুক, তার গুণগত মান নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে

0

Last Updated on March 13, 2023 6:39 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। অস্কারের মঞ্চে জোড়া সাফল্য ভারতীয় চলচ্চিত্রের। বলা ভালো দক্ষিণের চলচিত্রের ডবল অস্কার জয়। সেরা মৌলিক গানের জন্য একাধিক গোল্ডেন গ্লোব জেতার পরেই প্রত্যাশা ছিল। আর সেটাই হল।গোল্ডেন গ্লোবের পর এবার অস্কারেও সেরা মৌলিক গানের পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা ‘আরআরআর’-এর আলোচিত গান ‘নাটু নাটু’। নাটু নাটুর সাফল্যের দিনই দক্ষিণ ভারতের আর এক তথ্যচিত্র দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারস ও জিতে নিয়েছে সেরা তথ্যচিত্রের জন্য অস্কার পুরস্কার। সত্যজিৎ রায়ের অস্কার এবং এ আর রহমানের পরে দক্ষিণের এই সাফল্য হিন্দি বাণিজ্যিক ছবিকে অনেকটাই পিছনে ফেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজদের ক্ষমতা জহির করল বলা যায়। সেই সঙ্গে দক্ষিণী ছবি বিশ্ব চলচিত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করল বলা যায়।
গোল্ডেন গ্লোব থেকে অস্কার

ভারতীয় সময় সোমবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে জমকাল ৯৫তম অস্কারের মঞ্চে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।এম এম কিরাবানির সংগীত পরিচালনায় গানটি গেয়েছেন রাহুল সিপলিগুঞ্জ ও কলা ভৈরব। গানের তালে ছবিতে পারফর্ম করেন সিনেমাটির দুই তারকা এন টি আর জুনিয়র ও রাম চরণ।
গত বছর মুক্তির পর এস এস রাজামৌলির সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। এ আলোড়নের অন্যতম কারণ এই ‘নাটু নাটু’ গান। এর আগে ২০০৯ সালে স্লামডগ মিলিয়নিয়ার সিনেমার এ আর রাহমানের জয় হো গানটি সেরার পুরস্কার পেয়েছিল। প্রসঙ্গত, বেস্ট অরিজিন্যাল সং বা সেরা মৌলিক গান এর বিভাগে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার অস্কার এল কোন ভারতীয় ছবিতে। এই বিভাগের অন্যান্য মনোনয়নগুলি ছিল – অ্যাপলস (টেল ইট লাইক আ ওমেন), হোল্ড মাই হ্যান্ড (টপ গান ম্যাভেরিক), লিফট মি আপ (ব্ল্যাক পাথের ওয়াকান্ডা ফরএভার), এবং দিস ইজ আ লাইফ (এভরিথিং এভরিথিং অ্যাল অ্যাট অ্যাট এভয়্যার)।

দ্যা এলিফ্যান্ট হুইস্পারস

অন্য স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচিত্র নির্মাতা কর্তিকি গঞ্জালেস দ্যা এলিফ্যান্ট হুইস্পারস তথ্যচিত্রে দক্ষিণ ভারতের বন্য প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা ও বন্য পশুর সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন তাঁর এই তথ্যচিত্রে । এই তথ্যচিত্রে,সমাজের প্রান্তিক সম্প্রদায়ের এক দম্পতি একটি অনাথ হাতিকে পাওয়ার পর তার যত্ন নেয়, তাকে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সহ সব দায়িত্ব পালন করে। একসময় সন্তানসম এই হাতির মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যায় তারা। মানুষ এবং অরণ্যের হাতির মানবিক বন্ধনই এই তথ্যচিত্রের বিষয়। দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স ছবিটি মুদুমালাই ন্যাশনাল পার্কেকে কেন্দ্র করে তৈরি দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স একটি আদিবাসী দম্পতি বোম্যান এবং বেলির গল্প যারা রঘু নামে একটি অনাথ হাতির বাচ্চার দেখভাল করে। ডকুমেন্টরিটি কেবল তাদের মধ্যে গড়ে ওঠা টানই দেখায় না, সঙ্গে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেও বিশদভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক। এটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়।

দক্ষিণের ক্ষমতা এবার অস্কারের মঞ্চে

ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র বলতে গোটা বিশ্বের দরবারে একমাত্র উদাহরণ ছিল মুম্বাই এর হিন্দি ছবি, যার আধিপত্যে দাপটের সঙ্গে থাবা বসাল দক্ষণের চলচ্চিত্র। সর্বভারতীয় পরিচিতি ও জনপ্রিয়তার গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে গত ১০০ বছরে হিন্দি বাণিজ্যিক ছবি সেই ঔজ্জ্বলতা,কৌলীন্য ও জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছিল। বিমল রায়ের দো বিঘা জমিন যেমন প্রশংসা ও সন্মান পেয়েছে একইভাবে রাজকাপুর থেকে অমিতাভ বচ্চন সেই অশ্বমেধ ঘোড়া ছুটিয়েছেন। রাশিয়া থেকে বেলারুশ যেমন গেয়েছে মেরা জুতা হ্যায় জাপানি, ঠিক তেমনই সুইজারল্যান্দের তুষারময় সুউচ্চ টিটলিস পাহাড়েও শাহরুখের দিলওয়ালে দুলহানিয়ার কাট আউট পর্যটনের আকর্ষণ। হলিউড ক্রিটিক্স সেমিনারে যেমন স্টিফেন স্পিলবার্গ অমিতাভের সঙ্গে করমর্দন করে বলেন, আই মোস্টলি ইনফ্লুয়েন্স বাই হিন্দি কমার্শিয়াল মুভি,স্পেশালি ইওরস ঠিক তেমনই আবার আজও প্যারিস শহরের অনতিদূরে দুভুঁলে সমুদ্র সৈকতে ওয়াটার স্কি করার জন্য পর্যটকদের আকর্ষিত করার জন্য অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস এর সেই স্পিড বোট ডিসপ্লে করা আছে। সেই লেগাসি ভাঙতেই দক্ষিণের এই সাফল্য এবং আয়োজন। গত পাঁচ কিংবা সাত বছর ধরেই দক্ষিণের ছবি হিন্দি ছবির জায়গা দখল করেছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্রথমে দক্ষিণের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার ছবিকে সর্বভারতীয় গ্রহণযোগ্যতা দিতে হিন্দিতে ডাব করে বাজারে ছাড়া,এবং তারপর দক্ষিণের হিট ছবিকে হিন্দিতে রিমেক করা, এই দুই গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ হিন্দি চলচিত্র জগতের ভীত দুর্বল করে দিয়েছে। দক্ষিণের সুপারস্টাররা ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে আজ। বিপুল পরিমাণ অর্থ আর দুর্দান্ত বাণিজ্যিক কৌশলে হিন্দি ছবিকে কোণঠাসা করে দিয়েছে তারা। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রইল।
গত ১০০ বছরের হিন্দি ছবির ইতিহাসে নাটু নাটু ই অস্কারের যোগ্য,এটা মানতে সমস্যা আছে বৈকি। শচীন কর্তা থেকে সলিল চৌধুরী, খৈয়াম থেকে সুধীন দাশগুপ্ত,মদন মোহন থেকে রাহুল দেব বর্মন, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার,পুলক বন্দোপাধ্যায়,হিমাংশু দত্ত,সাজিদ হোসেন থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কল্যাণজি আনন্দজি থেকে ওপি নাইয়ার, নৌসাদ,শঙ্কর জয়কিষান থেকে পরের দিকে যতীন ললিত, লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল,বাপ্পী লাহিড়ী পর্যন্ত একটি সঙ্গীত বা সঙ্গীতকাররা মৌলিক সৃষ্টিতে এই নাটু নাটুর থেকে পিছিয়ে তা মেনে নেওয়া শক্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here