Last Updated on April 11, 2023 7:41 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। রাজ্য বিধানসভায় ভোটাভুটির পরে বিল পাস হওয়া সত্বেও মাসের পর মাস তার সই না করে রাজভবনে ফেলে রাখছেন কেন্দ্রের ভাজপা সরকারের অঙ্গুলিহেলনে চলা রাজ্যপাল। এর ফলে একদিকে যেমন রাজ্যে সাধারন মানুষের জন্য জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না ঠিক তেমনভাবেই আটকে যাচ্ছে বহু প্রশাসনিক কাজকর্ম। সুপ্রিম কোর্ট অবিলম্বে রাজ্যপালকে নির্দেশ দিক রাজভবনে আটকে রাখা বিলগুলি সই করে বিধানসভায় পাঠানোর জন্য। সুপ্রিম কোর্টে এমন আবেদন নিয়ে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও আবেদন জানানোর পরে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী বিধানসভায় পাস হওয়া বিল রাজভবনে আটকে না রাখাই বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দরাজনের হয়ে আদালতে উপস্থিত দেশের সলিসিটর জেনারেলকে প্রশ্ন করেন বিধানসভায় যে বিল সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে গিয়েছে তাতে সই করতে রাজ্যপালের সমস্যা কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যপালের পক্ষ থেকে জানানো হয় কোন সমস্যা আছে কিনা আমরা বিস্তারিত নথিপত্র দেখে জানাতে পারব। তবে রাজ্যপাল সই করবেন না এমন তো বলেননি। সঙ্গে সঙ্গেই দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়ে দেন দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হল এই সময়ের মধ্যে রাজ্যপালের কাছ থেকে সংবিধানসম্মত আচরণ প্রত্যাশা করে সুপ্রিম কোর্ট।
চাপের মুখে বিল পাস তামিলনাড়ুর পদ্মপালের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে জানিয়েছিলেন রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া বিল মাসের পর মাস রাজভবনে সম্পূর্ণ অকারণে আটকে রাখছেন ভাজপা নিয়ন্ত্রিত পদ্মপাল। এরপরেই গতকাল তামিলনাড়ু বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনার পাশাপাশি রাজ্যপালের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া বিল পুনরায় বিধানসভায় পাস করে রাজ্যপালের কাছে পাঠানো মাত্র তড়িঘড়ি সেই দিনের সই করে দেন তামিলনাড়ুর পদ্মপাল। অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ ও অনলাইন গেম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আটকে রাখা বিলটিতে গতকাল অনুমোদন দিয়েছেন আরএন রবি। বিধানসভায় পাশ হওয়ার ১৩১ দিন পর গতমাসে বিলটি ফেরত পাঠিয়ে দেন রাজ্যপাল। এরপর বিধানসভায় ফের পাশ করিয়ে তা অনুমোদনের জন্য দ্বিতীয়বার রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। তারপরও সেটি তিনি আটকে রেখেছিলেন। এই ঘটনার জেরে রাজ্যপালের সঙ্গে স্ট্যালিন সরকারের বিরোধ চরমে ওঠে। এমনকি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, এক জন মনোনীত রাজ্যপাল কী ভাবে বিধানসভায় পাশ হওয়া একটি বিলকে ফেরত পাঠাতে পারেন। যে বিধানসভার সদস্যেরা আট কোটি জনতার ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? রাজ্যপাল রবিকে নিশানা করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, আপনি কী মনে করেন, আপনি একটা বিরাট সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন?
এমকে স্ট্যালিন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তাকে প্রতি পদে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি অপদস্থ করার অভিযোগ উঠেছে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন ভাজপা নেতা, আর এন রবির বিরুদ্ধে। গত দেড় বছরে তামিলনাড়ু বিধানসভায় তামিলনাড়ুর শাসক জোট ডিএমকে কংগ্রেস এবং সিপিএম যে সমস্ত বিল পাস করেছে তার মধ্যে অধিকাংশ বিল সেই না করে হয় রাজভবনে আটকে রেখে দিয়েছেন রাজ্যপাল অথবা অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন বিধানসভায়। শুধু তাই নয় ভারতের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের যেভাবে নিয়মতান্ত্রিক সংবিধানিক প্রধান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ করে তামিলনাড়ু নির্বাচিত রাজ্য সরকার রাজ্যপালের ফেরত পাঠানো বিল পুনরায় রাজ্যপালের কাছে পাঠানোর পরেও যাবতীয় সাংবিধানিক রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য জলাঞ্জলি দিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্যও বিধানসভার পাঠানো বিল ফেরত পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। যা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি কোন রাজ্যপালকে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজকর্ম।
সুপ্রিম কোর্টে হারছেন পদ্মপালরা
গত মাসেই আরেক অভাজপা শাসিত রাজ্য পাঞ্জাবে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন ডাকতে অস্বীকার করেছিলেন ভাজপা নিয়ন্ত্রিত পদ্মপাল। কিন্তু পাঞ্জাবের আম আদমি পার্টি সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরেই শুনানি চলতে চলতেই পাঞ্জাবের রাজ্যপালের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত তারিখেই বাজেট অধিবেশন ডাকছেন রাজ্যপাল।
প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বারে বারে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কোন রাজ্যের নির্বাচিত রাজ্য সরকার যদি রাজ্যপালের কাছে কোন প্রস্তাব পাঠায় অথবা রাজ্য বিধানসভায় ভোটা ভোটের ভিত্তিতে কোন বিল পাস হয় তাতে সই করতে বাধ্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল। রাজ্যের শাসকদলের রাজনৈতিক পথ অথবা রাজ্যপাল হওয়ার আগে তার নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ যেন কোনোভাবেই এক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি না করতে পারে তার জন্য কয়েকদিন আগেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজ্যপালদের কাজ রাজনীতিতে নাক গলানো নয়।