Last Updated on January 29, 2022 11:38 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। হাটে হাঁড়ি ভেঙেই দিল মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (The New York Times)। তাদের দাবি, ২০১৭-তে পেগাসাস (Pegasus) কিনেছিল মোদি সরকার। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতে নাগরিকদের ফোনে আড়িপাতার জন্য পেগাসাস কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) নিজে। পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনতে চুক্তি হয়েছিল ভারত সরকার ও ইজরায়েলি সংস্থার মধ্যে। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে এমনই বিস্ফোরক দাবি করা হয়েছে।যদিও এখন পর্যন্ত ভারত সরকার বা ইজরায়েল সরকার, কেউই স্বীকার করেনি যে ভারত পেগাসাস কিনেছে। এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও দাবি করেছে, তারা পেগাসাস কেনেনি। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো বলেছিলেন, পেগাসাস কাণ্ড ভারতীয় গণতন্ত্র এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলিকে বদনাম করার একটি প্রচেষ্টা। পেগাসাস স্পাইওয়্যার নির্মাতা এনএসও-ও বলেছে যে পেগাসাস ব্যবহার করা দেশের তালিকা সংক্রান্ত রিপোর্ট ভুল। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০১৭ সালে ইজরায়েলের সঙ্গে ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি চুক্তি সই করেছিল। সেই চুক্তির মধ্যমণি ছিল পেগাসাস এবং একটি মিসাইল সিস্টেম। নিউ ইয়র্ক টাইমস আজ প্রকাশ করেছে যে এটি ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-র থেকে ৩০০ কোটি (300 Crore)টাকার বিনিময়ে পেগাসাস সাবস্ক্রাইব করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেগাসাস ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নতুন চুক্তির অধীনে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং ভারত সহ অনেক দেশকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইজরায়েল সফর করেছিলেন। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও (Benjamin Netanyahu) সেই সময়ে ভারত সফর করেছিলেন। ২০১৯-এর জুনে ভারত ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থাকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা অস্বীকার করার জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে ইজরায়েলের সমর্থনে ভোট দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের পরে যেভাবে মার্কিন সংবাদপত্র ভারতের চুক্তি নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশের এসেছে তারপরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগেই মোদি সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল। সংসদের বাদল অধিবেশনে যেভাবে পেগাসাস ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরোধিতা একজোট হয়ে ছিল সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল, এবারেও আক্রমণের ঝাঁজ আরো বাড়তে চলেছে। বাদল অধিবেশনের সময় এই পেগাসাস ইস্যুতে সংসদ অচল করেছিল বিরোধীরা।
বিরোধীদের সমালোচনা
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পরেই তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অ্যাটাচ করে টুইট করেন, নিউইয়র্ক টাইমসের দীর্ঘদিনের তদন্তমূলক প্রতিবেদনেই স্পষ্ট কিভাবে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের জন্য ভারত ইসরাইল থেকে টেকনোলজি কিনে এনেছিল।
পেগাসাস ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও। তিনি টুইট করে লেখেন, বিজেপি (BJP) থাকলে সব সম্ভব। তারা দেশকে বিগ বস শোতে পরিণত করেছে। মার্কিন সংবাদপত্রের এই দাবিকে হাতিয়ার করে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে অভিযোগ করেন, দেশের বিরুদ্ধে পেগাসাসের মতো অস্ত্র ব্যবহার করে দেশদ্রোহীর মতো কাজ করেছে মোদী সরকার। টুইট করে তিনি লেখেন, কেন মোদী সরকার ভারতের শত্রুর মতো কাজ করছে এভং যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র ভারতের নাগরিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছে? পেগাসাস ব্যবহার করে বেআইনি ভাবে নজরদারি চালানো দেশদ্রোহিতার সামিল। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আমরা নিশ্চিত করব যাতে ন্যায় বিচার হয়। রাজ্যসভার সাংসদ (Member of Rajya Sabha) তথা কংগ্রেস (Congress) নেতা শক্তিসিং গোহিল (Shaktisinh Gohil) বলেন, প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায় যে সরকার এই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এবং সংসদকে বিভ্রান্ত করেছে। নরেন্দ্র মোদী কেন চুপ? বিষয়টি স্পষ্ট করার দায়িত্ব তো প্রধানমন্ত্রীর। নিউ ইয়র্ক টাইমস আজ প্রকাশ করেছে যে এটি ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-র থেকে ৩০০ কোটি টাকার বিনিময়ে পেগাসাস সাবস্ক্রাইব করেছে। করদাতাদের দেওয়া টাকায় এই সাবস্ক্রিপশন কিনেছে সরকার।
কিভাবে কাজ করে পেগাসাস
যাঁর ফোন হ্যাকিং হবে সেই ফোনে একটি ওয়েবসাইট লিঙ্ক পাঠানো হয়৷ লিঙ্কে একবার ক্লিক করলেই পেগাসাস ফোনে ইনস্টল হয়ে যাবে৷ শুরু হয়ে যায় ফোনে নজরদারি৷ হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস মেসেজ অথবা মিসড কলের মাধ্যমেও সফটওয়্যারটি ফোনে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে৷ ইনস্টল হওয়ার পর কল লগ থেকে মুছে দেয় সফটওয়্যারটি৷ ফলে ব্যবহারকারী জানতেও পারেন না কোন নম্বর থেকে মিসড কল এসেছিল৷ এর পর ব্যবহারকারী কার সঙ্গে কথা বলছেন, কী মেসেজ আসছে, ফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা সব নিয়ন্ত্রণ করে পেগাসাস৷ এমনকী এনক্রিপটেড হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের তথ্য পড়ে ফেলতে পারে পেগাসাস৷