Last Updated on December 24, 2020 8:47 PM by Khabar365Din
বিশ্বভারতীর ১০০ বছরে রবীন্দ্র ঐতিহ্য বরবাদ করে
বহিরাগতদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত
■■
বিজেপি, আরএসএসের চক্রান্তে
পৌষমেলার মাঠ ঘিরে কাঁটাতারের পাঁচিল


স্বয়ং গান্ধি, নেহেরু পৌষমেলার ঐতিহ্যের কথা বারবার
বলেছেন, বলেছেন জনসঘ নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিও
■■
সেই পৌষমেলাও বন্ধ করে দেওয়া হল
প্রধানমন্ত্রীর সওয়াল
অনলাইনে মাল বেচুন
বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে যে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে আরএসএস এবং বিজেপি যে আরএসএস লার্নিং সেন্টার বা আরএসএস ভারতীতে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেই বিশ্বভারতীর শতবার্ষিকীতে দলীয় অবস্থানের পক্ষে সওয়াল করতে নামতে হলাে খােদ প্রধানমন্ত্রীকে। যিনি আবার সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে বিশ্বভারতীর আচার্য বটে। অথচ তিনি আচার্য থাকাকালীন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের দর্শন এবং ভাবধারাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলার মাঠ ঘিরে ফেলা হয়েছে কংক্রিটের জঙ্গলে। এই প্রথম শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ নিজেই পৌষ মেলা বন্ধ করে, আবার সেই পক্ষে সওয়াল করলেন নরেন্দ্র মােদি। পৌষ মেলা শুধু বাঙালীর ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে নয়, এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার শিল্পী এবং কারিগরদের রুটি-রুজির প্রশ্ন। একদিকে যখন করণা পরিস্থিতিতে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে চলেছে নজিরবিহীনভাবে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এই সমস্ত অসংখ্য শিল্পী এবং কারিগরদের রুটিরুজি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে তীব্র নিন্দার ঝড় বইছে দেশজুড়ে। তাই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে আজ নামলেন প্রধানমন্ত্রী। কোনরকম হােমওয়ার্ক ছাড়াই ড্যামেজ কন্ট্রোলেখ নেমে মােদির বক্তব্য, পৌষ মেলায় যাঁরা আসতে পারেননি, সেই শিল্পীদের নিয়ে উদ্যোগ নিন। এঁদের তৈরি পণ্য যাতে অনলাইনে বিক্রি করা যায়, তা দেখুন। যা নিয়ে প্রবীণ আশ্রমিক তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী সুবােধ মিত্র বলেন, যেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য অন্যান্য অধ্যাপক এবং আশ্রমিকদের নিয়ে মাথায় ঝাঁকা করে শিল্পীদের বিভিন্ন শিল্প কর্ম বিক্রি করতে বেরােবে!বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন নিদান শুনে তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি ব্যাঙ্গের ঝড় উঠেছে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকদের মধ্যে। শান্তিনিকেতনের আরেক প্রবীণ আশ্রমিক প্রলয় নায়েকের বক্তব্য, আচার্যের কাছে এটুকু খবরও নেই যে পৌষ মেলার মাঠে শুধুমাত্র শিল্পীরা নয়, বাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অসংখ্য কারিগর আসেন বাঁশ, বেত বা মাটির বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করতে। সম্পূর্ণ ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সােনাঝুরির মাঠে প্রতি সপ্তাহের শনিবার এবং রবিবার যে হাট বসে, তার ঐতিহ্য এবং প্রয়ােজনীয়তার কথা কি বিন্দুমাত্র জানা আছে প্রধানমন্ত্রীর? শুধুমাত্র ভাড়া করা এজেন্সিকে দিয়ে রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি তুলে ধরে টুইট করলে বা গুজরাটি ভাষায় লেখা বাংলা পড়লেই রবীন্দ্র অনুরাগী হওয়া যায় না। আসলে এই শান্তিনিকেতনে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সময় কাটাতে আসতেন মহাত্মা গান্ধী বা জওহরলাল নেহেরু। এমনকি পরবর্তীকালে ইন্দিরা গান্ধী এসে বহু সময় কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতনে আশ্রমে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যে নেহেরু গান্ধী ঐতিহ্যকে দেশ থেকে মিটিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়েছে বিজেপি, সেই নেহেরু গান্ধী পরিবারের পছন্দের শান্তিনিকেতনকে কিভাবে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখবেন প্রধানমন্ত্রী! শুধুমাত্র বাংলার ভােটের দিকে তাকিয়ে এখনাে পর্যন্ত জাতীয় সংগীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথের জনগণমন হেঁটে ফেলতে পারেননি বা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে শ্যামাপ্রসাদ বা সাভারকারের নামে নামকরণ করতে পারেন নি। মনের মধ্যে এই চাপার আগের কথাটা তাে মােদী অমিত শাহ লুকোতে পারেন না। তাই কবিগুরুর শান্তিনিকেতনকে এঁরা শুধু বাংলার ভােটব্যাংকে ব্যবহারের জন্য ছাড়া অন্য কোন ভাবে ভাবতে শেখেন নি। তাই সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারি সহায়তা ছাড়াই বাংলার ঐতিহ্য পরিণত হওয়া পৌষ মেলা কেউ নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করতে বিন্দুমাত্র লজ্জিত না হয়ে মােদির বক্তব্য, পৌষ মেলা এবার বিশ্বভারতীতে হয়নি। পৌষ মেলা সরকারের ভােকাল ফর লােকাল স্লোগানের আক্ষরিক রূপ।