Last Updated on April 9, 2023 9:26 PM by Khabar365Din
কর্ণাটকে ভোটের আগে বান্দিপুর টাইগার রিজার্ভে প্রধানমন্ত্রী
স্বামী নরেন্দ্রনাথের বাণী বহুরূপে সম্মুখে তোমার। ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর জীবে প্রেম করে যেই জন। সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
কথাকলি দত্ত
৩৬৫ দিন। আমি বল্লাম, ঠাকুর, স্বামী নরেন্দ্রনাথের কাণ্ডকারখানায় বড় বিচলিত বোধ করছি। উনি এক এক সময়ে এক এক স্থানে এক এক প্রেক্ষাপটে আলাদা আলাদা বেশভূষা ধারণ করে চমকিত করছেন। উনি যখন বাংলায় পূণ্য অর্জনের জন্য আসেন তখন ওঁর কবিগুরু রবিঠাকুরের মতো দাড়ি। উনি যখন পাঞ্জাব অঞ্চলে দর্শন দেন তখন মাথায় পাগড়ি, কোমরে কৃপাণ। যখন পূর্বাঞ্চলে যান তখন অসম স্টাইলে মেখলা, খাসি টুপি। যখন যে প্রদেশে, তখন সেরূপ বেশভূষা। অতিরিক্ত আছে, জন্মদিনে কুনোর জঙ্গলে চিতাবাঘ ছাড়া। তখন সাফারি স্যুট, সবুজ হলুদ ক্যামোফ্লেজ জ্যাকেট, মাথায় ফেল্ট হ্যাট। এবার যেমন কর্ণাটকের বান্দিপুর টাইগার রিজার্ভে সাফারি ড্রেসের সঙ্গে হান্টার বুট, হাতে টেলি লাগানো ক্যামেরা, বায়নোকুলার। উনি কী দেখছেন ঠাকুর? বাঁদর? কুনকি হাতি? বাঘেদের টোপ চিতল হরিণ ? স্বামীজি নিশ্চয়ই বাঘ দেখছেন না। বাঘ তো ঠাকুর বায়নোকুলারে দেখা যায় না। ওঁর এই ক্ষণে ক্ষণে বেশ তথা ড্রেস পরিবর্তনের কারণ কী? ঠাকুর বল্লেন, ওরে বাচাল অনেক বল্লি, লোকসভা ভোটের ফল বেরানোর আগে নরেন যে অমরনাথের গুহায় ধ্যানে বসল সেটা তো খেয়াল করলি নে। এই ঠান্ডায় ধ্যানে বসা কি চাট্টিখানি ব্যাপার। আমি বল্লাম, সে তো দুষ্টু লোকে বলে গুহাটা এয়ারকন্ডিশনড ছিল। ঠান্ডা লাগবে কেন? যেমন ওঁর টেলিপ্রম্পটার লেজার টেকনোলজিতে তৈরি। কেউ দেখতে পারছে না অথচ স্বামীজি গড়গড় করে পড়ে যাচ্ছেন। এখন টেকনোলজির যুগ ঠাকুর, অনেক কিছু করা যায়।
ঠাকুর বল্লেন, দুর বাচাল, তুই এসি মেশিন, লেজার এসব দেখছিস। আসল ব্যাপারটাই তো দেখলি নে। নরেনের ধ্যানটা দেখেছিস? তোর এই এসি মেশিন, লেজার দেখতে পাবলিকের বয়ে গেছে, পাবলিক দেখে ধ্যান। অর্থাৎ জেতা এবং হারা মায়ার খেলা। আমি জিতবই কারণ আমি ধ্যান করি। আমার সঙ্গে ভগবানের ডাইরেক্ট কনট্যাক্ট। বাংলা, মহারাষ্ট্র, সাউথ এরকম কয়েকটা জায়গায় হারছি বটে, কারণ এখনও এই জায়গাগুলিতে ভগবানের সঙ্গে ডাইরেক্ট কনট্যাক্টটা করে ওঠা যায়নি। অ্যান্টেনা খারাপ। ব্যাটারা সকাল থেকে রামনাম করে না। আমার ধ্যানের মর্ম কী বুঝবে? বুঝলি বাচাল ছেলে।
আমি বল্লাম, সে তুমি যাই বলো ঠাকুর, এসব তো ভোটের আগের টোটকা। আসল সমস্যা থেকে চোখ ঘুরিয়ে রাখার চেষ্টা। দুর্নীতির নামে সিবিআই, ইডি লেলিয়ে দেওয়াটা ইস্যু নয়। আদানি স্ক্যাম কোনও ইস্যুই নয়। মমতার দুয়ারে সরকার, রাহুলের ভারত জোড়ো এগুলো ফ্যাক্টর নয়। ১৮-২০ বিরোধী দলের এক মঞ্চে আসার চেষ্টাটা দুদিনের মধ্যে হাওয়া হয়ে যাবে। এসব কিছু না কিছু না। ঠাকুর বলো তো, আমি ঠিক বলছি না তোমার নরেন ঠিক বলছে? ঠাকুর বল্লেন, ওরে বাচাল, নরেন কখনো ভুল বলতে পারে ? রামচন্দ্র যেমন চিরসত্য, ক্ষমতায় থাকাকালীন নরেন্দ্রনাথ তেমন ধ্রুব সত্য। জনগণকে অন্য বিষয়ে চোখ সরানোর দরকারটা কী? ওগুলো তো সত্যিই কোনও বিষয় নয়। ইস্যু তো একটাই, মহাজ্ঞানী আর পরমজ্ঞানী ধ্যান, জীবে প্রেম, রবিঠাকুরের সাদা দাড়ি, শিখের পাগড়ি, এগুলোই তো আসল চমক ধমক। এগুলো দেখলেই তো পাবলিক মজে যায়, তালি বাজায়, বাসন পেটায়, জয় শ্রীরাম বলে, দাঙ্গা করে, বিফ ইস্যুতে মুসলমানকে পুড়িয়ে মারে, তাজমহল ভাঙতে চায় আর চোখ বুজে ভোট দেয়। মার ছাপ্পা। মার ছাপ্পা পদ্মে। ওঁ মণিপদ্মেন হুম। আমি বল্লাম, বুঝেছি ঠাকুর, চিত্তশুদ্ধির প্রয়োজন নেই, মতবাদ পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। দরকার শুধু ড্রেস শুদ্ধি। এক এক সময়ে এক এক বার, এক এক রকম। বিভাজন করো, বিরোধী ধ্বংস করো, ধোঁকা দাও ৷ ঠাকুর বল্লেন, এই তো পাগল ছেলে, সব বুঝেছিস। ওরে বাচাল আমার কলাটা, মুলোটার ব্যাপার আছে তো। সবই তো সেন্ট্রালি স্পন্সর্ড। আজেবাজে বকে ওসব খোয়াবো নাকি? শেষে একবার মন খুলে বল জয় শ্রীরাম।