Last Updated on March 14, 2023 6:02 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উপাচার্যদের পুনর্নিয়োগ অবৈধ। ইউনিভার্সিটি গ্রান্ড কমিশন বা ইউজিসির নিয়ম লঙ্ঘন না করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য সরকার উপাচার্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। শুধু তাই নয় রাজ্যের নিয়োগ করার উপাচার্যদের পদত্যাগের পরেও যেভাবে রাজ্যপাল সেই উপাচার্যদেরই পুনর্নিয়োগ করেছেন তাও সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী। আজ উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় এমনই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
এখানেই শেষ নয়, আজ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সেক্রেটারির চিঠিতে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে। যে সমস্ত উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রাজ্য ফের নিয়োগ করেছিল, তাঁদেরও নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে। তবে যাঁদের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের বিষয়ে আর হস্তক্ষেপ করবে না হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, বাংলার উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে যাতে অচলাবস্থা তৈরি না হয় তার জন্য কয়েকদিন আগেই বাংলার নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠকের পরে বের করেছিলেন নতুন সমাধান সূত্র। রাজের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যদের পদত্যাগ করতে বলে অস্থায়ীভাবে তিন মাসের জন্য তাদের উপাচার্য পদে নতুন করে নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন পদাধিকার বলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই বৈঠকে স্থির হওয়া সমাধান সূত্র অনুযায়ী ঠিক হয়েছিল বর্তমান উপাচার্যরা পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেওয়ার পরে রাজ্যপাল তাঁদেরকে পুনর্নিয়োগ করবেন তিন মাসের জন্য এবং এই তিন মাসের মধ্যে নতুন সার্চ কমিটি গঠন করে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের নির্দেশিকা মেনে নতুন উপাচার্য খুঁজে বের করবেন আচার্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
জনস্বার্থের নামে রাজনৈতিক স্বার্থের মামলা
বাংলায় উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অধিকার খর্ব করে যাবতীয় ক্ষমতা নিজের হাতে নেওয়ার জন্য বাংলার প্রাক্তন পদ্মপাল জগদীপ ধনকড় ২০২১ সালেই রাজের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং চিঠি দিয়ে ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তাদের পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দেন। সেই তালিকায় গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, আলিপুরদুয়ার, বর্ধমানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও ছিল। ধনকড়ের এই নির্দেশ স্বীকার প্রেক্ষিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন ভাজপা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অনুপম বেরা নামে এক ব্যক্তি।
তবে যেভাবে রাজ্যপাল নিজে উদ্যোগী হওয়ার পরেও রাজ্যের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের তাদের পদ থেকে অপসারণের জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশিকা আনা হলো তা কার্যত বাংলায় নির্বাচিত সরকারকে কাজ করতে না দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরীর জন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষরা।
একদিকে যেমন রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন কবে হবে তা ঠিক করার জন্য মামলা দায়ের করা হচ্ছে হাইকোর্ট এবং হাইকোর্ট থেকে নির্দেশিকা দেওয়া হবে কবে রাজ্য সরকার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করবে অথবা কবে পরীক্ষা হবে তার বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য হাইকোর্ট থেকে নির্দেশিকা দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে – তাতে মূলত জনস্বার্থ মামলার মোড়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করে বাংলার নির্বাচিত সরকারকে কাজ করতে না দিয়ে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলা প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা একাধিক প্রাক্তন আধিকারিক।