Visva-Bharati: রবীন্দ্রনাথ নিজেই বসন্ত উৎসবের আয়োজন করতেন যাবতীয় নাচগানের নির্দেশনাও নিজেই দিতেন

0

Last Updated on March 6, 2023 6:47 PM by Khabar365Din

অভীক মজুমদার (শিক্ষাবিদ)

শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসবে রবীন্দ্রনাথের কি ভূমিকা থাকতো বিশ্বভারতীর সেই সময়কার কিছু ছাত্র-ছাত্রীর স্মৃতিচারণে এবং তাঁদের লেখনীতে তার উল্লেখ পাচ্ছি।
সেই তালিকায় যদি একটু তাকাই তাহলে দেখব রয়েছেন সাহানা দেবী – যিনি সম্পর্কে আবার দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ভাগ্নী। সাহানা দেবীর লেখা থেকে আমরা জানতে পারি বসন্ত উৎসবে রবীন্দ্রনাথ শুধু যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন তাই নয়, বসন্ত উৎসবে কি কি নাচ গান হবে তার আয়োজনের পাশাপাশি রীতিমতো নির্দেশনা দিতেন।

বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য যেখানে বসন্ত উৎসব নিয়ে দাবি করছেন, রবীন্দ্রনাথ নাকি বসন্ত উৎসব চাননি – সেক্ষেত্রে তাহলে বলতে হয় যে সাহানা দেবী বা অমিতা সেনরা রবীন্দ্রনাথের বসন্ত উৎসবে অংশগ্রহণ করা নিয়ে যে সমস্ত স্মৃতিচারণ করে গিয়েছেন সেগুলি মিথ্যা কথা বলেছেন। এবারে যদি উনি বলেন যে সাহানা দেবীরা মিথ্যা কথা বলেছেন তাহলে বলতে হবে যে উনার মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।
শুধু তাই নয় আমরা বেশ কিছু ছবি পাই যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে একদম শেষ বয়সের দিকে এসে রবীন্দ্রনাথ গাছের নিচে বসে রয়েছেন এবং তাঁর সামনে বসন্ত উৎসব উপলক্ষে নাচ গান চলছে বা তাঁর কপালে আবির দিয়ে বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা।
এই বিষয়গুলিই তো তথ্য হিসাবে আমাদের সামনে রয়েছে। এখন যদি কেউ বলতে চান রবীন্দ্রনাথ বসন্ত উৎসব চাননি বা বসন্ত বন্দনা করতে চেয়েছেন – তাহলে তাঁকে যেটা করতে হবে যে নতুন কোন তথ্য এনে এতদিন ধরে প্রচলিত থাকা তথ্যগুলোকে মিথ্যে প্রমাণ করতে হবে। উপাচার্য তাহলে দেখান যে রবীন্দ্রনাথ বসন্ত উৎসব করতে চাননি বা ছাত্র-ছাত্রীদের বসন্ত উৎসব পালন করায় বাধা দিতে চেয়েছেন।


রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সাহানা দেবী বা অমিতা সেনরা স্পষ্ট ভাষায় বলছেন যে এই গানটি বসন্ত উৎসবের জন্য লেখা হয়েছিল অথবা বসন্ত উৎসবে এই গানটি গাওয়া হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথের মতো একজন ব্যক্তিত্বকে মনে রাখার জন্য আমাদের তো মনগড়া কোন কথা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না বা সেটা বলা সমীচীন নয়। সে ক্ষেত্রে নির্ভর করতে হয় সমসাময়িক লেখা, তাঁর সান্নিধ্যে আসা ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণা – এগুলির উপরে।
দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য বা মন্তব্য কেউ করতেই পারেন। কিন্তু বিষয়টি যখন রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে তখন আমাদের কিছু স্মৃতিচারণা, কিছু লেখনী, কিছু তথ্যের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
ইচ্ছে মতো যেমন ইতিহাস তৈরি করা যায় না, ঠিক তেমনিই ইচ্ছে হলেই ইতিহাসকে বিকৃত করা যায় না। আমরা এখন সারা ভারতবর্ষে দেখতে পাচ্ছি প্রাচীন ইতিহাস মুছে ফেলে বা ইতিহাসকে বিকৃত করে নতুন ইতিহাস লেখার একটা প্রচেষ্টা চলছে। একদিকে বিজেপি আর অন্যদিকে আরএসএস গোয়েবলসীয় কায়দায় নিজেদের ইচ্ছেমতো একটা ইতিহাস তৈরি করে প্রতিনিয়ত তা আমাদের সামনে বলে বলে সেটাকে সত্যি হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সাহানা দেবী যখন এই কথাগুলি লিখছেন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তখন রবীন্দ্রনাথ বেঁচে রয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ অথবা তাঁর অনুগামী বা রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞরাও কখনো এই তথ্যগুলি মিথ্যে বলে দাবি করেননি বা কোন অভিযোগ করেননি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই তথ্যগুলিকেই আমরা প্রামাণ্য দলিল বা নথি হিসেবে ধরবো। আজ যদি বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজের মতো করে কিছু বলেন তাহলেই তো আর এই তথ্যগুলো মিথ্যে হয়ে যাবে না।
বিদ্যুৎ বাবু নিজের ইচ্ছামত একটা আলাদা ইতিহাস লিখুন না। শুধু একটা কথা, রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন বা রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর উপরে স্টিমরোলারটা না চালালেই হলো।

কারণ রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্য এবং ইতিহাসই যেখানে একসঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে সেই ঐতিহ্য এবং ইতিহাসকে তো একদিনে ধূলিস্যাৎ করে নতুন ঐতিহ্য এবং ইতিহাস গড়ে তোলা যায় না।এছাড়া রবীন্দ্রনাথ বহু জায়গায় নিজেও বসন্ত উৎসবের সম্পর্কে লিখে গিয়েছেন বা বসন্ত উৎসবে কিভাবে তিনি অংশ নিতেন সক্রিয়ভাবে সেই বিষয়গুলো লিখে গিয়েছেন। এখন যদি বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন যে রবীন্দ্রনাথ আদতে এটা করতে চাননি তাহলে বুঝতে হবে বিদ্যুৎ বাবু রবীন্দ্রনাথের মনের ভেতরে ঢুকতে পেরেছেন।
আমার তো মনে হয় এই যে বিকৃত এবং বীভৎস একটা রবীন্দ্রনাথের ধারণা বিদ্যুৎ বাবু তৈরি করছেন বা সেটাকে নিয়মিত প্রচার করছেন তার বিরুদ্ধে এখনই আমাদের সমবেতভাবে আন্দোলনে নামা উচিত। এটাতো বাঙালির গর্বের জায়গা। আত্মশ্লাঘার জায়গা। বিশ্বভারতী হল যেখানে গোটা বিশ্ব ভারতে মিশবে। এটা বুঝতে হবে বিশ্বভারতী কারোর পারিবারিক বা নিজস্ব কোন সম্পত্তি নয়। এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিরাট স্বপ্ন এবং ঐতিহ্য জড়িত। রবীন্দ্রনাথের এই স্বপ্ন শিক্ষা চিন্তাধারার মেলবন্ধনকে যারা মিথ্যে বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা আসলে রবীন্দ্রনাথকেই ছোট করার চেষ্টা করছেন। এরা রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসেন না বিশ্বভারতীর ইতিহাস জানেন না ‌।

এরা হয়তো ভাবছে আমি যা বলব সেটাই ইতিহাস। উনি ভাবছেন উনিই বিশ্বভারতীর ইতিহাস নতুন করে লিখবেন। যেভাবে ভারতের ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা চলছে। জায়গার নাম পাল্টে যাচ্ছে। এটাও তো এক ধরনের ইতিহাসের বিকৃতি। এটা আদতে সেই কর্মকাণ্ডেরই সম্প্রসারণ। আমরা যারা রবীন্দ্রনাথ নিয়ে একটু আধটু পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছি তারা বুঝতে পারছি এটা প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এটা আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে বিদ্যুৎ বাবুর মতো একজন ব্যক্তি বিশ্ব ভারতীর অধ্যক্ষের পদে রয়েছে। এখানে রবীন্দ্রনাথকে বিকৃত করা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ বসন্ত উৎসবই চেয়েছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here