Last Updated on August 22, 2023 5:58 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগের পাশাপাশি ৩৫৩ ধারায় পুলিশকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আগেই মামলা দায়ের হয়েছিল। এবারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষের ছাত্র হত্যার ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোহিবিশন অফ র্যাগিং ইন এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন অ্যাক্ট-এর ৪ সেকশন যুক্ত করার জন্য আবেদন জানাল কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা।
মূলত গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলে তদন্তে গিয়ে গোয়েন্দারা যে সমস্ত ছবি এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দেখেছেন তারপরেই র্যাগিংয়ের বেশ কিছু প্রমাণ এসে পৌঁছেছে তদন্তকারীদের হাতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেল যেন সোভিয়েত রাশিয়ায় স্বেচ্ছাচারী জোসেফ স্ট্যালিনের মস্তিষ্কপ্রসূত অত্যাচারের কারখানা। স্ট্যালিন যেভাবে সাইবেরিয়া বরফে মোরা প্রান্তরে রাজনৈতিক বন্দীদের নিয়ে গিয়ে অকথ্য অত্যাচার করে হত্যা করতেন, সেভাবেই যাদবপুরের মেইন হস্টেলেও স্টালিনের আদর্শে তৈরি হওয়া কালেক্টিভের মার্কসবাদী কমরেডরা নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালাত যতক্ষণ না তারা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে অথবা আত্মসমর্পণ করে।
কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা বিচারকের কাছে জমা দেওয়া আবেদনে জানিয়েছেন, র্যাগিংকে কার্যত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল ধৃত পড়ুয়ারা। যে শিল্প মানুষ হতে নয়, বরং নখ-দাঁত বের করা হিংস্র জানোয়ার হতে শেখায়। সেই সঙ্গে আদালতে জমা দেওয়া হচ্ছে। যাদবপুরের মেইন হোস্টেল এবং সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু ছবি। হস্টেলের দেওয়ালে দেওয়ালে বিভিন্ন কার্টুন ও লেখার মধ্যে নিয়মিত র্যাগিং চলার ইঙ্গিত খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। বিশেষ করে এ-২ ব্লক ছিল বহিরাগত র্যাগিং এক্সপার্ট ছাত্রদের মুক্তাঞ্চল। এই ব্লকে তিনতলা থেকে চারতলায় ওঠার সিঁড়ির দেওয়ালে কার্টুন এঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বিড়াল ও বাঘের বিষয়টি। ভয়ার্ত বিড়ালের ছবির গা ঘেঁসে একটা তির চিহ্ন। সেখানে লেখা হস্টেল লাইফ। তির চিহ্নের শেষ প্রান্তে শিকারের গন্ধে হিংস্র হয়ে ওঠা বাঘের ছবি।
কি রয়েছে এই আইনে
বাংলার বিধানসভায় আগেই পাস হওয়া এই আইনে স্পর্শ ভাষায় বলা হয়েছে, যে সমস্ত ছাত্র অথবা অন্য কোন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিতরে অথবা বাইরে অংশগ্রহণ করে অথবা র্যাগিংয়ে সহায়তা করে বা প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করে – যথাযথ তদন্তের পরে অপরাধ প্রমাণিত হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি দু বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং 10 হাজার টাকা জরিমানা বা কারাদণ্ড এবং জরিমানার শাস্তি বিধান করা যেতে পারে।
কেন র্যাগিং বিরোধী ধারা জুড়ছে পুলিশ
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলের বিভিন্ন রুমে ঢোকার পরে এবং এখনো পর্যন্ত ধৃত তেরো জনকে দফায় দফায় জেরা করার পরে যে সমস্ত তথ্য প্রমান গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে তা থেকে স্পষ্ট এটি আত্মহত্যার কোন ঘটনা নয়। র্যাগিংয়ের ফলে মৃত্যু হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের। সেই ঘটনায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল ধৃতরা এবং তাদের আরো বেশ কয়েকজন সঙ্গী সাথী। শুধু তাই নয় এবারের ছাত্র হত্যার ঘটনাটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, প্রত্যেক বছর নবাগত ছাত্র-ছাত্রীরা এলে তাদের মধ্যে অধিকাংশকেই র্যাগিংয়ের শিকার হতে হত।