Last Updated on March 8, 2023 1:32 PM by Khabar365Din
চিত্তরঞ্জন দাসের ভাগ্নী সাহানা দেবী রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয় গায়িকা ছিলেন। তিনি ১৯২৩ সালের বসন্ত উৎসবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন, “তখন কাশীর বাস উঠিয়ে সবে কলকাতায় এসেছি ১৯২৩ এর গোড়ায়। বসন্ত উৎসবে গাইবার জন্য ডাক পড়ল। আমার মুখে নানা কাজ ওয়ালা হিন্দি গান শুনতে খুবই খুব ভালবাসতেন। আমিও প্রায়ই ওর কাছে গেলে এটা ওটা সেটা যা জানতাম গিয়ে শোনাতাম। অমনিতর দুটি হিন্দি গান সে সময় আমি গাই কবির কাছে বসে। শুনেই কবি বললেন রোস, রোস, আমি বাংলায় কথা বসিয়ে দিচ্ছি। আমি গাইতে লাগলাম আর সঙ্গে সঙ্গে কবি কথা বসে যেতে লাগলেন। …. কি দ্রুত যে কবি এই কথা বসানোর কাজ শেষ করলেন। শেষ হতেই আমাকে বললেন এই দুটি গানও তোমাকে বসন্ত উৎসবে গাইতে হবে, কেমন রাজি তো?”… (স্মৃতির খেয়া পৃষ্ঠা ১৩৫)
ও মঞ্জরী, ও মঞ্জরী, আমের মঞ্জরী
১৯২২ সালের ১২ মার্চ শান্তিনিকেতন থেকে
শান্তিদেব ঘোষ জনৈক প্রাক্তন ছাত্রের স্মৃতিচারণ উল্লেখ করে লিখেছেন, “… মনে পড়ে বসন্তোৎসবের কথা (১৩২৮)। দিনু বাবুর বাড়িতে সকাল বেলা মহড়া চলেছে। এমন সময় এলেন মঞ্জুশ্রী দেবী (সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা)। কবিতাকে দেখেই বলে উঠলেন দিনও এই যে আমাদের মঞ্জুরী এসেছে; তাহলে আমের বোলের গানটা মঞ্জুরী গাইবে, কী বলিস?” উত্তরে দিনু বাবু বললেন, “তা আমাদের পালায় তো আমের মঞ্জুরী নেই।” সহসা কবির ভুল ভাঙলো, বললেন, “তা কি আর হয়েছে, নাতনীর সঙ্গে নয় একটু পরিহাস করলুম।”

ভরা থাক স্মৃতিসুধায়, রমা চক্রবর্তী পৃষ্ঠা ১৯
নবীন নৃত্যনাট্য প্রথম অভিনীত হয় শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব উপলক্ষে ৪ মার্চ 1931 তারিখে। সেখানে এই গানটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। গানের সঙ্গে নেচে ছিলেন শান্তিনিকেতনের ছাত্রী হাঙ্গেরির মেয়ে এলিজাবেথ ব্রেনার – ইনি শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে উদয় শংকরের সঙ্গে। সেই অনুষ্ঠানের স্মৃতিচারণ করেছেন তখনকার ছাত্রী রমা চক্রবর্তী।
“.. এলিজাবেথ তার মার সঙ্গে এসেছিলেন, তাঁরা দুজনেই সদ্য কলা ভবনে যোগ দিয়েছিলেন। যখন আজ খেলা ভাঙার খেলা গানটি হচ্ছে তখন দেখা গেল একটি বিদেশী মেয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে এসে নাচতে শুরু করে দিল। সবাই হকচকিয়ে গেল। কিন্তু গুরুদেব গান থামাবার ইঙ্গিত করলেন না। গানও হচ্ছিল আর সেও নেচে চলল — সে কি উত্তম নাচ ও ভাব ব্যঞ্জনা! গুরুদেব খুশি হলেন। সে তো তখনো বাংলা ভাষা জানতো না কিন্তু গানের সুরে ছন্দে আকৃষ্ট হয়ে কি প্রেরণা পেল যে ছুটে এসে নাচতে শুরু করে দিল! এলিজাবেথ ব্রেনারের নাচ এইভাবে যুক্ত হয়ে গেল। তার নাচ যে আমাদের প্রথায় ছিল না তা বলাই বাহুল্য কিন্তু তার স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি ও উদ্দাম গতি ছন্দ গানের ভাব বেশ ফুটিয়ে তুলেছিল।”
অমিতা সেনের স্মৃতিচারণা
শান্তিনিকেতনে যতদিন নৃত্য শিক্ষকের আগমন হয়নি ততদিন গানের সঙ্গে নাচও শেখাতেন রবীন্দ্রনাথ নিজেই। পরের যুগে এসে নাচকে ভাবনৃত্য বলা হতো। তেমনি একটি উপলক্ষে বসন্ত নাটিকাটির প্রথম অভিনয়ের স্মৃতিচারণ করেছেন অমিতা সেন, “১৯২৩ হবে বোধ হয়। সেবার বসন্ত উৎসবের প্রায় সব গানে আমরা ভাবনৃত্য করেছিলাম। নৃত্য রচনা করেছিলাম সবই রবীন্দ্রনাথের নির্দেশনায়। সেবার প্রথম দিন সম্ভবত ফাল্গুনের ১০ই ম্যাডান থিয়েটারে বসন্ত উৎসবটি হল। বন্ধু লতিকা সেজেছিল দীপশিখা। একটি বড় প্রদীপ হাতে ধীরে ধীরে বও ওগো উতল হাওয়া – গানটি একা গেয়ে মঞ্চের এক দিক থেকে অন্য দিকে চলে গিয়েছিল সে। মনে পড়ে মহড়াতে রবীন্দ্রনাথ নিজে উঠে দাঁড়িয়ে লতিকাকে বলেছিলেন প্রদীপ হাতে তুই চলেছিস। হাওয়ায় যাতে নিভে না যায় আঁচল দিয়ে তাই প্রদীপের শিখাটিকে আড়াল করে নিয়ে তুই ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছিস।
রবীন্দ্রনাথই ওকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন কিভাবে বাঁ হাতে প্রদীপ ধরে ডান হাতের আঁচল দিয়ে প্রদীপের শিখাকে আড়াল করে চলবে।