Last Updated on November 6, 2022 8:18 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। নভেম্বর বিপ্লবের মাসে কি মস্কোর জন্য ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রাঙ্গণে আরও দুঃসংবাদ অপেক্ষা করে রয়েছে? রুশ একনায়ক ভ্লাদিমির পুতিন তাদের দখল করা খেরসোন শহর থেকে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলার মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার এবার ইউক্রেনের এই শহরও রুশ বাহিনীর হাত ছাড়া হতে চলেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, খেরসোনই হচ্ছে ইউক্রেনের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ শহর যা ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণের পরে রুশ বাহিনী দখল করতে পেরেছিল গত দু-মাস ধরে যুদ্ধে জেলেনস্কির বাহিনী ক্রমাগত এগিয়েছে এবং মস্কোর মহাপরাক্রমশালী, বিশ্ববিখ্যাত রেড আর্মি ক্রমশ পিছু হটেছে। এবার যদি ইউক্রেনের একমাত্র যে গুরুত্বপূর্ণ শহর যুদ্ধের পর রেড আর্মির দখলে ছিল, তা-ও হাত ছাড়া হয়ে যায় তাহলে মস্কোর জন্য অস্বস্তির শেষ থাকবে না। কিন্তু স্বয়ং ভ্লাদিমির পুতিন খেরসোন থেকে সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর বোঝাই যাচ্ছে যুদ্ধের হাল কোনদিকে গড়াচ্ছে।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত মস্কো সেইরকম কিছুই করে দেখাতে পারেনি, কিন্তু প্রায় ন’মাস কেটে যাওয়ার পর এখন যুদ্ধের যা গতিপ্রকৃতি তাতে এটা পরিষ্কার যে দখলদার রুশ বাহিনী ক্রমাগত পিছু হটছে। সেই নেপোলিয়নের সময় থেকে ইউরোপে রুশ সেনাবাহিনী নিয়ে যে সমীহ এবং শ্রদ্ধা ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অতুঙ্গ সাফল্যের পর যা প্রায় মিথের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল এবং আমেরিকার সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘কোল্ড ওয়ার’ বা ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ চলার সময়েও মস্কোর বাহিনী নিয়ে যেসব কাহিনি প্রচলিত ছিল এবার ইউক্রেন যুদ্ধের সময় তা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। পশ্চিমী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন গত একমাসে রাশিয়া সদ্য নিযুক্ত সেনাদেরই ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে পাঠিয়েছে। এবং তার ফলশ্রুতিতে উজ্জীবিত এবং একের পর এক রণাঙ্গনে জয়ের গন্ধ পেয়ে যাওয়া ইউক্রেন সেনার সামনে মস্কোর বাহিনী টিকতেই পারছে না। বিপুল সংখ্যক রুশ সেনা প্রতিদিন যুদ্ধে মারা যাচ্ছেন। এবং তাদের পরিবার পরিজনরা এই নিহত বা নিখোঁজ তরুণ রুশ সেনাদের খুঁজে বের করতে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকছেন।
যুদ্ধে যে মস্কোর বাহিনী ক্রমশ পিছু হটছে এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এগোচ্ছে তা হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই খেরসোন দখলমুক্ত হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে মনোবল এবং ‘পারসেপশন বিল্ডিং’-এর দিক থেকে এই মুহূর্তে জেলেনস্কি অনেক এগিয়ে রয়েছেন। অতি সম্প্রতি ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় রুশ সেতু ধ্বংসের ছবি দিয়ে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে, যা নিয়ে নেট দুনিয়ায় তীব্র আলোড়ন। ইউক্রেনীয়রা তো বটেই ইউরোপের লোকজনও উচ্ছ্বসিত এইভাবে রাশিয়ার গর্বের, অহংকারের প্রতীককে ধ্বংসের ছবিকে ডাকটিকিটের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, ক্রিমিয়ার ওই সেতু ব্যক্তিগতভাবে রুশ একনায়ক ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ ক্রিমিয়া দখলের পর মস্কো যখন ওই সংযোগরক্ষাকারী কঠিন সেতুটি বানায়, তখন রুশ প্রেসিডেন্ট নিজে ট্রাক চালিয়ে ওই রুশ ইঞ্জিনিয়ারিং কীর্তির উদ্বোধন করেছিল। তাই যখন খেরসোনের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরও মস্কোর হাত ছাড়া হতে চলেছে তখন ক্রিমিয়ায়র সেতু বিস্ফোরণের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ আসলেই রাশিয়ার কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটে দেওয়া।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া যত পিছু হটছে, ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যক্তি ভাবমূর্তিতে যত চিড় ধরছে ততই অন্য আশঙ্কা জাগছে। মরিয়া পুতিন রাশিয়ার এবং নিজের ডুবন্ত ভাবমূর্তি ধরে রাখতে কোনো চরম সিদ্ধান্ত নেবেন না তো? শেষ পর্যন্ত তিনি পরমাণু অস্ত্রপ্রয়োগের দিকে চলে যাবেন না তো?