Last Updated on August 13, 2021 11:33 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য পাওয়ার পরেই নির্বাচনের সময়ে কংগ্রেস এবং ভাইজানের দল আই এস এফ এর সঙ্গে জোট বেঁধে সিপিএম যে সংযুক্ত মোর্চা তৈরি করেছিল তা ভেঙ্গে দিল। কলকাতায় আজ সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনের জন্য একটা নির্বাচনী জোট তৈরি হয়েছিল। নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই জোটের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। মূলত ভাইজানের দল আইএসএফের সঙ্গে জোট বাধার ফলে সিপিএমের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। যা আদতে সিপিএমের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দিয়েছ বলে মনে করছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। শূন্য হওয়ার পোস্ট মর্টেম করতে গিয়ে রাজ্য কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরে সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করছে, ভোটের আগে হঠাৎ করে যে সংযুক্ত মোর্চা গঠন করা হয়েছিল, তা মেনে নেয়নি রাজ্যের মানুষ। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য থেকে একটি আসনও পায়নি সিপিএম। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করেও একটি আসনও পায়নি সিপিএম।
ভুল ছিল বিজেমূল স্লোগান
আবার দলীয় নীতিতে ভুল ছিল বলে স্বীকার করে নিল সিপিএম। আজ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কার্যত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দায় এড়িয়ে গিয়ে রাজ্য কমিটির উপরে বিজেমূল স্লোগানের দায় চাপিয়ে বলেন, এই স্লোগান দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে এরপরেও দলের ঘোষিত নীতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানিয়ে দেন সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাজপা বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিলেও বাংলায় তৃণমূল এবং ভাজপা – উভয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। বাংলার ক্ষেত্রে সিপিএমের কাছে ভাজপা এবং তৃণমূল সমান শত্রু।
জানা গিয়েছে, একুশের নির্বাচনের সময় সিপিএমের বিজেমূল শব্দবন্ধ ব্যবহার নিয়ে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কীভাবে এল এই বিজেমূল তত্ত্ব তা রীতিমতো ব্যাখ্যা করতে হয়েছে সূর্যকান্ত মিশ্রদের বলে সূত্র মারফত খবর। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে সিপিএমের রাজ্য নেতাদের। এই বৈঠকে উপস্থিত সীতারাম ইয়েচুরি তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাজ্য কমিটির বিভিন্ন সিদ্ধান্তে। তৃণমূল এবং ভাজপাকে এক সারিতে বসিয়ে সিপিএমের প্রচার যে চূড়ান্ত ভুল ছিল, তা এককথায় সকলেই স্বীকার করেছেন বলে সূত্রের খবর।
কৃষি ও শিল্প নিয়ে বিভ্রান্তি মূলক প্রচার
কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ – স্লোগান এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে দলের নির্বাচনী ফলাফলের ক্ষেত্রে। দলের দুদিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে আলিমুদ্দিনের নেতাদের বারে বারে এই বিষয়ে কার্যত ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষিতে কৃষি আমাদের ভিত্তি এবং শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ প্রচার করা উচিত হয়নি বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। এই স্লোগান সাধারণ মানুষ ভালভাবে নেয়নি। বরং তা গ্রামের মানুষকে সিপিএম জমানায় জোর করে সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের মানুষের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার সময়ের পরিস্থিতির কথা আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে।