Last Updated on September 20, 2023 7:26 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার দেখানো পথে হাঁটতে বাধ্য হল কেন্দ্রের ভাজপা সরকার। তৃণমূলের প্রস্তাবকে সায় দিয়ে নতুন সংসদ ভবনের প্রথম দিনে মহিলা বিল পেশ করল কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সংরক্ষণ আগেই চালু করেছিলেন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ৪২ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এবারও সংসদের বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই মহিলা সংরক্ষণ বিলের দাবিতে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। মঙ্গলবার লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশের পর তৃণমূলের লোকসভায় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মহিলাদের ক্ষেত্রে এক তৃতীয়াংশ আসনের দাবিতে আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই ছিলেন সোচ্চার। আমি যখন প্রথম লোকসভায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়ে আসি সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস নতুন দল হিসাবে প্রথমবার সংসদে প্রবেশ করেছিল। তা সত্ত্বেও সেই সময় দলনেত্রী লোকসভায় এক তৃতীয়াংশ মহিলা আসন সংরক্ষণ এর দাবিতে সুর চড়িয়েছিলেন।
এমনকি সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলের পক্ষে এতটাই সরব ছিলেন যে যখন ১৯৯৮ সালের ২০ জুলাই লোকসভায় বিলটি পেশ করার সময়ে বিরোধী বেঞ্চ থেকে ছুটে স্পিকারের চেয়ারের সামনে আসার চেষ্টা করেন সমাজবাদী পার্টি সাংসদ দারোগা প্রসাদ সরোজ। কিন্তু স্পিকারের আসনের কাছে পৌঁছনোর আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জামা টেনে ধরেন। যাতে স্পিকারের চেয়ারের দিকে তিনি যেতে না পারেন বা বিল ছিঁড়তে না পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন ওই সাংসকে থামিয়ে দেন যখন তিনি মহিলা সংরক্ষণ বিলের কপি ছিঁড়ে দিতে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে সোনিয়া গান্ধীও মহিলার সংরক্ষণ বিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।’ অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের আরেক শরিক কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি কেন্দ্রের মনোভাবের বিরোধিতা করে জানায়, এতদিন বিলটিকে ইচ্ছে করেই পেশ করা হয়নি। লোকসভা নির্বাচনের গায়ে গায়ে এই বিলটিকে পেশ করে ফায়দা তুলতে চাইছে কেন্দ্রীয় শাসক দল ভাজপা। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বাল বলেন,’ বিজেপি নির্বাচনের আগে এই বিল পেশ করে ফায়দা তুলতে চাইছে। একদিকে মহিলাদের বিরুদ্ধে শোষণ চলছে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে অন্যদিকে এই বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় শাসকদল বোঝাতে চাইছে তারা ঐতিহাসিক কাজ করেছে।’ যদিও তৃণমূলের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি।
বিশেষ অধিবেশনের রণকৌশল নিয়ে অভিষেকের দলীয় বৈঠক
সংসদের বিশেষ অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার দিল্লি পৌঁছেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। মঙ্গলবার দিল্লিতে পা রেখেই অভিষেক পুরনো সংসদ ভবনে দলের সাংসদের নিয়ে এই অধিবেশনের রণকৌশল ঠিক করেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, সংসদের ভিতরে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না কেন্দ্রীয় শাসক দল ভাজপাকে। ইন্ডিয়া জোটের ফ্লোর কো-অর্ডিনেশন মেনে সংসদের ভেতরে ও বাইরে ভাজপা বিরোধী আক্রমণ তীব্রতর করবে তৃণমূল।লোকসভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী বিশেষ অধিবেশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (নিযুক্তি, চাকরির শর্তাবলি এবং অফিসের মেয়াদ) বিল ২০২৩ পেশ হতে চলেছে চলতি অধিবেশনে। যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও দিন নির্ধারণ করা হয়নি, তাই অভিষেক পাঁচদিনই সংসদে উপস্থিত থাকবেন এবং সিইসি বিল পেশ করা হলে তা নিয়ে বলবেন তিনি।
অধিবেশনে তৃণমূলকে সময় দেওয়া হল না মঙ্গলবার বিশেষ অধিবেশনে রাজ্য সভায় বক্তব্য রাখা থেকে বঞ্চনার শিকার হতে হয় তৃণমূলকে। তৃণমূলের জন্যে মোট ২১ মিনিট সময় বরাদ্দ করা হলেও তার মধ্যে প্রথম ৪ মিনিট বক্তব্য রাখেন নাদিমুল হক। ফলে বাকি ১৮ মিনিট বরাদ্দ করা হয় রাজ্য সভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের জন্য। যদিও তিনি বলতে শুরু করার আগেই চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় তাঁকে জানিয়ে দেন, তাঁর জন্য বরাদ্দ সময় মাত্র ১০ মিনিট। রাজ্য সভার চেয়ারম্যানের এই সিদ্ধান্তের তীব্র আপত্তি জানালে ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে চেয়ারম্যানের বচসা বেধে যায়। মঙ্গলবার ডেরেক ও ব্রায়েন বলেন, ‘আমার সংসদ ফিরিয়ে দাও। যে সংসদের অবমাননা, অমর্যাদা করা হবে না, প্রধানমন্ত্রী লোকসভা এবং রাজ্যসভায় এসে জবাব দেবেন। গত ৭ বছরে তিনি একটি প্রশ্নেরও জবাব দেননি। আমার সংসদ ফিরিয়ে দাও, যেখানে জাতীয় ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনা হবে।’
নতুন সংসদ ভবনের শুরুর দিনে রাষ্ট্রপতি নেই
সংসদের পুরনো ভবনকে বিদায় দিয়ে মঙ্গলবার গনেশ চতুর্থী থেকে নতুন ভবনে পথ চলা শুরু হল। কিন্তু এদিনই উঠল বিতর্ক। মঙ্গলবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাকেত গোখলে রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে জানান,’ নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি নেই কেন? আজকে সংসদের সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানেও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেই জানি।’ অন্যদিকে ডেরেক ও ব্রায়েন জানান, ‘আজকের দিনে রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি খুবই লজ্জাজনক।’ প্রসঙ্গত, গত ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেন। সেই অনুষ্ঠানে ও রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। মঙ্গলবার সংসদ ভবন পথ চলার দিনে সেন্ট্রাল হলেও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মূর অনুপস্থিতি নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে তৃণমূল।