Last Updated on March 11, 2023 7:28 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ‘স্টেডিয়াম’ খোঁচা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশের। শনিবার রমেশ একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, মোদির নামে স্টেডিয়াম আমাদের বিশ্বের বেশ কিছু নেতার নাম মনে করিয়ে দেয় যারা নিজেদের জীবনদ্দশায় স্বনামে স্টেডিয়াম তৈরী করিয়েছিলেন। এর পরেই তিনি পর পর আটটি নাম লেখেন। তালিকায় একেবারে প্রথমে রয়েছেন স্ট্যালিন, দ্বিতীয় হিটলার, তৃতীয় মুসোলিনি, চতুর্থ দ্বিতীয় কিম সাঙ, পঞ্চম মুয়াম্মর গদ্দাফি, ষষ্ঠ সাদ্দাম হুসেন, সপ্তম এরডোগান এবং অষ্টমে লেখেন মোদির নাম। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল মোদিকে যে তালিকায় জয়রাম রেখেছেন সেখানে বাকি যাদের নাম রয়েছে তারা প্রত্যেকেই একনায়ক শাসক। তাদের শাসন কাল বিতর্কিত এবং গোটা বিশ্বে সমালোচিত। তবে কি মোদিকে এই এক-ই সারিতে রেখে একনায়ক বললেন জয়রাম ? সে ব্যাপারে অবশ্য রমেশ খোলসা করেননি। তবে অনেকে বলছেন, এটা তো অস্বীকার করা যায় না সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের নাম সরিয়ে ৮০০ কোটি টাকা খরচ করে ঝাঁ চকচকে স্টেডিয়াম বানিয়ে সেখানে যে ভাবে মোদি নিজের নাম জুড়েছেন তার সঙ্গে একনায়কসুলভ ব্যাপার রয়েছে। যদিও ভাজপার দাবি, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালিন ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছেন মোদি, তাই ভালোবেসে তাঁর নামে স্টেডিয়াম হয়েছে এই নিয়ে এত হইচই কেন হবে!

দ্য ডয়েচেস স্ট্যাডিয়ন ( জার্মান স্টেডিয়াম / হিটলার স্টেডিয়াম )
নাৎসি পার্টির র্যালির জন্য চাই বিশাল জায়গা। যেখানে এক সঙ্গে লক্ষাধিক নাৎসি পার্টি মেম্বার র্যালি করবে আর সেই আস্ফালন প্রত্যক্ষ করবে আরও কয়েক লাখ দর্শক। এই লক্ষ্যে শুরু হয় হিটলারের নির্দেশে স্টেডিয়াম তৈরীর কাজ। ১৯৩৭ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। ১৯৪৩ সালে স্টেডিয়াম তৈরীর কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তোড়জোর শুরু হবার ফলে ছেদ পড়ে স্টেডিয়াম নির্মাণে। প্রায় সাড়ে চার লক্ষ দর্শকের বসার ব্যবস্থা হবার কথা থাকলেও তা আর সম্ভব হয়নি। অসমাপ্ত স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়ত বিশ্বযুদ্ধের পর সামার অলিম্পিক এবং ইন্টারক্যালেটেড গেমসের কিছু কিছু খেলা হলেও বাকি সময় ফাঁকাই পড়ে থাকত স্টেডিয়াম। পরবর্তীতে ক্ষতিকারক আবর্জনা ফেলা হত এখানে কিন্তু গ্যাস লিক করে বেশ কয়েকজন মারা যাভার পর এখন পুরোপুরি পরিত্যক্ত এই জায়গা।
মুসোলিনি স্টেডিয়াম ( দ্য স্টেডিও দে মারমি / স্টেডিয়াম অব দ্য মার্বেলস)
ইতালিতে ফ্যাসিস্ত যুব আন্দোলনের সাফল্য ধুমধাম করে উদযাপন করতে হবে, ইতালির।তৎকালিন সর্বাধিনায়ক ফ্যাসিস্ত শাসক বেনিতো আমিল্কারে আন্দ্রেয়া মুসোলিনি নির্দেশ দিলেন তৈরী করতে হবে বিশালাকার স্টেডিয়াম। বিশেষত্ব হিসাবে স্টেডিয়ামে মার্বেলের মূর্তি রাখতে হবে। ফ্যাসিস্ত অ্যাকাডেমি অব ফিজিক্যাল এডুকেশনের তত্ত্বাবধানে ১৯২০ সালে তৈরী হয় স্টেডিয়াম তৈরীর কাজ। ১৯৩২ সালে স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়। দ্বিতীয়ত বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে ছোট বড় কিছু ইভেন্ট এখানে হয়। ১৯৬০-এ সামার অলিম্পিক এখানে আয়োজন করা হয়।
গদ্দাফি স্টেডিয়াম
লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মর গদ্দাফির নামে নামকরণ করা হয় পাকিস্তানের লাহোর স্টেডিয়ামের। গদ্দাফি স্টেডিয়াম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগে প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি দর্শকাসন থাকলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার। এখানে প্রথম টেস্ট ম্যাচ হয় পাকিস্তান এবং অষ্ট্রেলিয়ার মধ্যে ১৯৫৯ সালে। প্রথম ওয়ান ডে ১৯৭৮ – এ এবং প্রথম টি টোয়েন্টি হয় ২০১৫ সালে।
সাদ্দাম হুসেন জিমনেসিয়াম
ইরাকের রাজা দ্বিতীয় ফয়জলের আমলে ১৯৫৬ সালে আল-সাহাব স্টেডিয়াম লাগোয়া একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরীর কাজ শুরু হয়। মূলত ১৯৬০ সালের সামার অলিম্পিক আয়োজনের জন্য এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরীর কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫৮ তে ইরাকে হয় সেনা অভ্যুত্থান। ক্ষমতাচ্যুত হন রাজা ফয়জল। ক্রমশ ইরাকের শাসন ক্ষমতা দখল করতে থাকেন সেনানায়ক সাদ্দাম। ১৯৮০ সালে শেষ পর্যন্ত জিমনেসিয়াম তৈরী শেষ হয়। নাম হয় সাদ্দাম হুসেন জিমনেসিয়াম। অত্যাধুনিক টেনিস কোর্ট, জিম, সুইমিং পুল সহ নানা ধরনের ইন্ডোর গেমসের ব্যবস্থা ছিল এখানে। মার্কিন সেনা ইরাক দখলের পর এখানে বেস ক্যাম্প বানায়। তার পর থেকে আর সে ভাবে এর ব্যবহার নেই। এখন এর নাম বাগদাদ জিমনেসিয়াম।
কিম সাঙ স্টেডিয়াম
এই স্টেডিয়ামের আগে নাম ছিল গিরিমরি স্টেডিয়াম। অবিভক্ত কোরিয়ায় নানা ধরনের খেলা হত এখানে। পরবর্তীতে এই স্টেডিয়াম অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের জনসভার স্থান হিসাবেই শুধু ব্যবহার হত। কোরিয়ার যুদ্ধে মার্কিন বোমারু বিমানের হানায় এই স্টেডিয়াম প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৮২ – তে এই স্টেডিয়াম উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী শাসক দ্বিতীয় কিম সাঙের নামে করা হয়। এখন এখানে শুধুমাত্র ফুটবল ম্যাচ এবং প্রশিক্ষণ চলে। প্রায় ৫০ হাজার দর্শকাসন রয়েছে এখানে।
এরডোগান স্টেডিয়াম
তুরষ্কের একচ্ছত্র অধিপতি একচেটিয়া শাসক তায়িপ এরডোগান। তাঁর শাসন কাল বিতর্কিত সমালোচিত। ২০২০-তে বিতর্কিত কার্টুন ছাপার জন্য ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এবদোকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন তিনি। যা নিয়ে গোটা বিশ্বে রীতিমত সোরগোল পড়ে যায়। এরডোগানের নামে স্টেডিয়াম তৈরী হয় ২০০৪ সালে। তার আগেও অবশ্য এখানে খেলা হত, তবে স্টেডিয়াম তৈরী হয় ২০০৪ সালে। নামকরণ করা হয় এরডোগানের নামে। ইস্তানবুলের এই স্টেডিয়াম মাল্টি স্পোর্টস গ্রাউন্ড হলেও এখন শুধু ঘরোয়া ফুটবল ম্যাচ হয় এখানে। আসন সংখ্যা সাকুল্যে ১৫ হাজার।
স্ট্যালিন স্টেডিয়াম
দ্য তোফিক বাহরামোভ রিপাবলিকান স্টেডিয়াম, আজারবাইজানের বাকুর এই স্টেডিয়ামের নাম বদলে ১৯৫১ সালে রাখা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের একনায়ক শাসক স্ট্যালিনের নামে। ১৯৫৬ পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামের নাম ছিল স্ট্যালিন স্টেডিয়াম। ১৯৫৭ তে স্টেডিয়ামের নাম বদলে হয় লেনিনের নামে। ৯০’এর দশকে ফের স্টেডিয়ামের নাম বদলে হয় দ্য তোফিক বাহরামোভ রিপাবলিকান স্টেডিয়াম। এখানেও মুলত ঘরোয়া ফুটবল লিগের খেলা হয়। ৩১ হাজার দর্শক এক সঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারেন এই স্টেডিয়ামে
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম
১৯৮৩ সালে গুজরাতের আহমেদাবাদে উদ্বোধন হয় মোতেরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের নামে পরে এই স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়। ২০১৫ তে গুজরাত ক্রিকেট সংস্থা ঠিক করে এই স্টেডিয়াম নতুন ভাবে তৈরী করা হবে। পুরনো কাঠামো ভেঙে তৈরী হয় নতুন স্টেডিয়াম। বল্লভ ভাই প্যাটেলের নাম তুলে সেখানে যোগ করা হয় মোদির নাম। নতুন স্টেডিয়ামের নাম হয় নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরী স্টেডিয়ামে টেস্ট, ওয়ান ডে, টি টোয়েন্টি তিন ধরনের ক্রিকেট হয়। কর্পোরেট ধাঁচে তৈরী স্টেডিয়ামে রয়েছে ১৫০-এর বেশী এক্সিকিউটিভ সুইট। ১,৩২,০০০ দর্শক এখানে এক সঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারেন।