দেশের সব হাইকোর্ট গুলিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ‘সাংসদ বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলা অনন্তকাল ধরে নয়, জরুরী ভিত্তিতে শেষ করুন’

0

Last Updated on November 9, 2023 6:53 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি । দেশের যেখানে যত সাংসদ এবং বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, সেই সমস্ত মামলা জরুরী ভিত্তিতে শেষ করতে হবে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি যদি বারে বারে মামলা পিছানোর জন্য সময় চাইতে থাকে, তাহলে দেশের সমস্ত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা যেন অবিলম্বে সেই প্রবণতা বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন তার জন্য কড়া নির্দেশিকা জারি করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। এই উদ্দেশ্যে বিশেষ বেঞ্চ গঠনের জন্যেও প্রতিটি হাই কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।

দেশে যখনই বড় কোন নির্বাচন আসে তখনই বিরোধীদলের নেতা নেত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলার তদন্তে জেগে ওঠে ইডি,সিবিআই, এনআইএ বা এনসিবি-র মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। ভোট মিটে গেলেই আবার সেই সমস্ত মামলার ফাইল চলে যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ঠান্ডা ঘরে। বছরের পর বছর কখনো চার্জশিট আবার কখনো সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট আবার কখনোবা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিতে দিতে বিভিন্ন বিরোধী দলের সংসদ বিধায়কদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়াকে অনন্তকাল ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদালতে সময়ের পর সময় চেয়ে যায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলি। যাকে কয়েকদিন আগেই বলিউডি ছবিতে সানি দেওলের ডায়লগ ধার করে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন তারিখ পে তারিখ পে তারিখ চলতে পারে না।

কোন মামলায় এই রায়

২০১৬ সালে অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায় নামক এক ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত সাংসদ ওবিধায়কদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে আজীবন বিতাড়িত করার আবেদন জানিয়ে। তাঁর দাবি ছিল, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত সাংসদ-বিধায়করা সাজা পূরণের পর ৬ বছর নির্বাচনে লড়তে পারেন না। এই নিষেধাজ্ঞা ৬ বছরের পরিবর্তে আজীবন করে দেওয়া হোক। আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি ছিল ফৌজদারি মামলায় দোষী রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে লড়ার অধিকার বাতিল সংক্রান্ত মামলার। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এই মামলার শুনানি হয়।

এই আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্ট জানিয়ে দেয়, সাজাপ্রাপ্ত সাংসদ-বিধায়কদের আজীবন নির্বাচন থেকে নির্বাসিত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া সম্ভব নয়। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে গোটা দেশের জন্য অভিন্ন সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা সম্ভব নয়। বিষয়টি হাইকোর্ট দেখছে।

কি নির্দেশ হাইকোর্ট গুলিকে

১। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নেতৃত্ব দিন ডিভিশন বেঞ্চ দেশের প্রত্যেকটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের কাছে যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে সেখানে বলা হয়েছে,

২। প্রয়োজনে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করতে পারেন। স্পেশাল বেঞ্চে এই মামলাগুলির শুনানি হতে পারে।

৩। প্রতিটি হাই কোর্টের বিচারপতি বা তাঁর মনোনীত এক জন সিনিয়র বিচারপতিকে ওই বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকতে হবে।

৪। বিরল এবং বাধ্যতামূলক কারণ ছাড়া সাংসদ, বিধায়ক এবং বিধান পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাগুলির শুনানি স্থগিত রাখা যাবে না।

৫। যে মামলাগুলিতে সাংসদ বা বিধায়কদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে এবং যে মামলাগুলিতে দোষী সাব্যস্ত হলে সাজার মেয়াদ পাঁচ বছর বা তার বেশি হবে, সেই সমস্ত মামলাকে অগ্রগণ্যতা দিতে হবে।

এই নির্দেশে চাপ বাড়ল ভাজপার

২০১৪ সালের দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মোদি সরকারের আমলে দেশে একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলির অতি সক্রিয়তা বেড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে সেভাবেই পাল্লা দিয়ে দেশের যেখানে ভাজপা নেতাদের বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতি অথবা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে সেই মামলার শুনানি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন অজ্ঞাত কারণে বছরের পর বছর স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ঠিক যেমন তৃণমূল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে বাংলায় শুভেন্দু অধিকারী অথবা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মার মতো নেতারা অন্য দলে থাকাকালীন তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সক্রিয় থাকলেও ভাজ পাতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় এজেন্সির জিজ্ঞাসাবাদ তদন্ত প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই তাদের বিরুদ্ধে আদালতে কোন মামলা গেলেও সেই সমস্ত মামলার শুনানি যাতে বছরের পর বছর পিছিয়ে যেতে থাকে তার জন্য সদা সচেষ্ট থেকেছে দেশের কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। তবে সুপ্রিম কোর্টের নয়া গাইডলাইন মানতে গেলে একদিকে যেমন শুভেন্দু অধিকারীর মত নব্য ভাজপা নেতাদের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি যাবতীয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সম্পূর্ণ করতে হবে ঠিক তেমনভাবেই বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর যেভাবে মামলা ফেলে রেখে ভোট এলেই সেই মামলাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলে ধরপাকড় শুরু করার প্রবণতা কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি শুরু করেছে তাতে ভাটা পড়বে অনেকখানি।