সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় রাজ্যপাল উপাচার্যদের নির্বাচন কর্তা নন, সার্চ কমিটি ছাড়া কিভাবে ভিসি নিয়োগ, ৭ দিনে নাম সুপারিশ করুন সার্চ কমিটি করবে সুপ্রিম কোর্ট

0

Last Updated on September 15, 2023 7:04 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। ইউজিসি গাইডলাইনে স্পষ্ট ভাবে বলা রয়েছে সার্চ কমিটির সুপারিশ করা নাম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। একতরফাভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করলে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। রাজ্যপাল যদি আচার্য হিসেবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠন করতে না পেরে থাকেন তাহলে সুপ্রিম কোর্ট নিজেই সেই দায়িত্ব নেবে। অন্তর্বর্তী উপাচার্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সম্ভব নয়। এভাবেই গ ত কিছুদিন ধরে বাংলার পদ্মপাল যেভাবে রাজ্যের নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে রাতের অন্ধকারে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করে যাচ্ছিলেন তাকে কার্যত বেআইনি বলে জানিয়ে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

এর পাশাপাশি ইউজিসি আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠনের জন্য বাংলার নির্বাচিত রাজ্য সরকার, ইউজিসি এবং রাজ্যপাল তথা আচার্যকে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিল আগামী ৭ দিনের মধ্যে সার্চ কমিটির জন্য সম্ভাব্য নামের তালিকা সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দিতে হবে। সেই তালিকা থেকে সুপ্রিম কোর্ট যোগ্য ব্যক্তিদের বেছে নিয়ে বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি সূর্য কান্তর বেঞ্চ স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিল, রাজ্যপাল আচার্য হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের নিয়োগ কর্তা। অর্থাৎ অ্যাপয়ন্টিং অথরিটি। কিন্তু রাজ্যপাল উপাচার্যদের নির্বাচন কর্তা নন, অর্থাৎ সিলেক্টিং অথরিটি নন। এ ব্যাপারে তাঁর কোনও পারদর্শিতা নেই। তাছাড়া রাজ্যপালের কাছে কোনও সিলেকশন কমিটিও নেই।

আজ শুনানিতে বিচারপতিরা রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, যদি আদালত একটি সার্চ কমিটি গঠন করতে চায়, তাহলে তাঁদের কী বক্তব্য। রাজ্য সরকারের তরফে একটি আবেদন করা হয়, তাহলে কমিটিতে কে কে থাকবেন, সেই দায়িত্বও আদালত যেন নেয়। আদালতই দায়িত্ব নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করে দিক। রাজ্যপালের পক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হলেও ইউজিসি-র তরফ থেকে আইনজীবীরা জানিয়ে দেন, তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট তিন পক্ষকেই বলে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি তৈরির জন্য তিন থেকে পাঁচ জন বিশেষজ্ঞের প্রস্তাবিত নামের তালিকা তৈরি করতে। সেই প্যানেল থেকেই বিশেষজ্ঞদের কমিটি তৈরি করবে সুপ্রিম কোর্ট। তার ভিত্তিতে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানি হবে। একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে সুপ্রিম কোর্ট।

সরকারের সঙ্গে বসতে রাজ্যপালের সমস্যা কোথায়

এর আগের শুনানিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন, বাংলার উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রেও চলা অবস্থায় কাটানোর জন্য রাজ্যপাল অর্থাৎ চ্যান্সেলর এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে শিক্ষামন্ত্রীকে আলোচনায় বসতে হবে। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বার করতে হবে। আজকের শুনানিতে সেই বিষয়টি আবার উত্থাপিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি এদিনও জানতে চান, আদৌ রাজ্য সরকার ও রাজ্যপাল এই ধরনের কোনও আলোচনায় বসেছিল কিনা।

রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি অভিযোগ করেন, তাঁরা বারবার আলোচনার আবেদন করেছেন, কিন্তু রাজ্যপালের তরফ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। এরপর রাজ্যপালের আইনজীবীকে তীব্র ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জানতে চান, আদালতের নির্দেশের পরও কেন রাজ্যপাল আলোচনায় বসেননি? রাজ্যপালের আইনজীবী আবার অভিযোগ করেন, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ্যে রাজ্যপালকে যে ধরনের মন্তব্য করছেন, তা কখনই কাম্য নয়। যদিও রাজ্যপালের আইনজীবীর এই বক্তব্য পাত্তা দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, এটা কোনও ব্যক্তিগত অহংয়ের জায়গা নয়। শিক্ষাব্যবস্থাকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করতে গেলে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে কোনও ইগো থাকার কথা নয়। শীর্ষ আদালতের কাছে শিক্ষা ব্যবস্থার মান ও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থই সর্বোপরি। আপনাদের দু’জনের ভিন্ন মত থাকতে পারে। কিন্তু আদালত তার মধ্যে ঢুকতে চায় না। আদালত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের লক্ষ্যে পদক্ষেপ করবে।

সুপ্রিম কোর্টের এই তাৎপর্যপূর্ণ রায়ের পরে বাংলার রাজ্যপাল যে সমস্ত উপাচার্যদের ছাঁটাই করে দিয়েছিলেন বেআইনিভাবে, তাঁদের আইনজীবী অরুণাংশু চক্রবর্তী বলেন, বাংলার রাজ্যপাল যেভাবে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে অন্ধকারে রেখে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছিলেন তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের ফলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা কাটবে।